বিরোধ মিটিয়ে বার্সেলোনার অধিনায়কত্ব ফিরে পেলেন টের স্টেগেন
Published: 9th, August 2025 GMT
চোটের কারণে লম্বা সময় ধরে মাঠে বাইরে আছেন বার্সেলোনার গোলরক্ষক মার্ক–আন্দ্রে টের স্টেগেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে গত মৌসুমে বার্সার পোস্ট সামলেছেন অবসর ভেঙে ফেরা পোলিশ গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি। এর মধ্যে চোট কাটিয়ে ফেরার অপেক্ষায় থাকা টের স্টেগেনের বিপদ আরও বেড়েছে ক্লাবের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায়।
বার্সেলোনার ইচ্ছা ছিল, লা লিগার চোট–বদলি নিয়মের অধীন নতুন গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে নিবন্ধন করাতে। কিন্তু টের স্টেগেন জানিয়ে দেন, নিজের চিকিৎসা–সংক্রান্ত কোনো তথ্য তিনি লা লিগার কাছে দেবেন না। এতে গত জুনে এস্পানিওল থেকে আনা গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে নিয়ে বার্সার পরিকল্পনা আর এগোয়নি।
এ বিতর্কের জেরে বার্সার অধিনায়কত্ব হারান টের স্টেগেন। তাঁর বদলে নেতৃত্ব দেওয়া হয় রোনালদ আরাউহোকে। এমনকি এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগও গ্রহণ করেছিল বার্সা। তবে এক দিনের ব্যবধানে সমস্যা মিটিয়ে আবারও নেতৃত্বে ফিরেছেন টের স্টেগেন।
আরও পড়ুনটের স্টেগেনের অধিনায়কত্ব কেড়ে নিল বার্সা, নতুন অধিনায়ক কে১৭ ঘণ্টা আগেগতকাল বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন তাঁর চিকিৎসা–সংক্রান্ত প্রতিবেদন লা লিগার কাছে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ায় তাঁকে আবারও ক্লাবের অধিনায়ক হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘ক্লাব ঘোষণা করছে যে খেলোয়াড় মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন তাঁর অস্ত্রোপচার–সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিবেদন লা লিগায় পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনে স্বাক্ষর করেছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গ–সংক্রান্ত মামলা বন্ধ করা হয়েছে এবং তাঁকে অবিলম্বে প্রথম দলের অধিনায়ক হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে।’
এ ঘোষণা সামনে আসার আগে একটি বিবৃতি দেন টের স্টেগেনও। যেখানে তিনি লেখেন, ‘বিষয়টির সমাধানে ক্লাবকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিতেও সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
আরও পড়ুনবার্সেলোনায় গোলকিপার–সংকট: অধিনায়ক টের স্টেগেন এখন ক্লাবের ‘শত্রু’০৬ আগস্ট ২০২৫লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো খেলোয়াড় অন্তত চার মাস মাঠের বাইরে থাকেন, তাহলে তাঁর বেতনের অন্তত ৫০ শতাংশ ক্লাব নতুন খেলোয়াড় নিবন্ধনের জন্য ব্যবহার করতে পারে। বার্সেলোনার ধারণা, টের স্টেগেন অন্তত চার মাস খেলতে পারবেন না। তবে জার্মান এই গোলরক্ষক তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, তিন মাসের মধ্যেই মাঠে ফেরার আশা করছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা