চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্ত্রী ও তিন সন্তানের নির্যাতন থেকে মনোয়ার হোসেন (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও এলাকাবাসী। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পৌরসভার পূর্ব বড়ালী গ্রামে (পালের বাড়ি) এ ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেশী ইমাম হোসেন নান্টু বলেন, একটি অটোরিকশা কেনাবেচা নিয়ে মনোয়ারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম, মেজ ছেলে জুয়েল, বড় মেয়ে প্রিয়া ও ছোট মেয়ে রিয়া মিলে তাঁকে হাত-পা বেঁধে মারধর করেন। একপর্যায়ে মেয়েরা বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। মনোয়ারের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ও এলাকাবাসী মিলে তাঁকে উদ্ধার করেন।

মনোয়ার হোসেন পুলিশকে জানান, এনজিও থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি একটি অটোরিকশা কিনেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, স্ত্রী-সন্তানেরা অটোরিকশাটি ৫৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁকে মারধর ও হত্যার চেষ্টা করা হয়।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, মনোয়ারের পাঁচ সন্তান, এর মধ্যে দুই ছেলে বিদেশে থাকেন। অটোরিকশা কেনাবেচা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ থেকে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ছাড়া জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার এ বিষয়ে মামলা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন য় র

এছাড়াও পড়ুন:

দুজনকে পিটিয়ে হত্যা : ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম, কার কাছোত বিচার চাইম’

১০ বছর বয়সী মেয়ে রুপা দাস ও ১৩ বছর বয়সী ছেলে জয় দাসকে জড়িয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ভারতী দাস। বুক ভেঙে কান্না আর বিলাপে তিনি বলছিলেন, ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম? ছোট ছাওয়া দুইটাক কায় খাওয়াইবে পড়াইবে? মোর নির্দোষ স্বামীক কেন মারিল, বেটিটার বিয়ার কী হইবে? মুই কোনটে যাইম, কী করিম? কার কাছোত বিচার চাইম?’

বড় মেয়ে নুপুর দাস (১৮) মায়ের গলা ধরে কাঁদছিলেন। তাঁর কণ্ঠেও অসহায়ত্বের হাহাকার, ‘এ্যালা কয় হামাক দ্যাখপে, কায় মাও কয়া দাকপে, হামরা যে এতিম হয়া গেইনো।’

ছেলে হারিয়ে বৃদ্ধ লালিচা দাস (রুপলালের মা) কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। তারপরও কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘মোর ছেলেটার দোষ কী? কেন ওক দাংগে মারিল? মোর বাবা তো কারও ক্ষতি করত না। হামাক দ্যাখপার যে আর কায়ও থাকিল না। যায় মোর ব্যাটাক মারছে, তাঁর বিচার চাও।’

রুপলাল দাসের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন তিনি। একই ঘটনায় নিহত হন তাঁর ভাগনির স্বামী প্রদীপ দাস।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রুপলাল দাস (৪০) স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন। ছোট্ট একটি টিনের ঘরে তিনি মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ থাকতেন। অল্প আয়ে ছয়জনের সংসার চালাতেন। সহায় সম্বল বলতে চার শতক জমি। প্রদীপ দাস (৩৫) মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের বাসিন্দা। জীবিকা নির্বাহ করতেন ভ্যান চালিয়ে।
আজ রোববার সকালে ঘনিরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রুপলালের বাড়িতে চলছে আহাজারি, শোক। স্বজনেরা বলছেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তাঁরা দিশাহারা।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ে কথাবার্তা চলছিল। আজ বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে আত্মীয় রুপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন প্রদীপ দাস। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন। রুপলাল সেখানে যান। তাঁরা দুজনে ভ্যানে চড়ে রুপলালের বাড়ি ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছলে ভ্যানচোর সন্দেহে তাঁদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে।

পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই ওই এলাকায় এক শিশুকে হত্যা করে একটি ভ্যান চুরি করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করেন। সেগুলোতে চোলাই মদ ছিল বলে পরিবারের ভাষ্য। একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে সেখানকার দুই ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করেন বলে জানান। এ ঘটনায় লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। অজ্ঞান করে ভ্যান চুরি সন্দেহে তাঁদের মারধর শুরু করেন। বটতলা থেকে মারতে মারতে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয় তাঁদের। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আজ ভোরে তিনিও মারা যান বলেন নিশ্চিত করেছেন নিহত রুপলাল দাসের ভাই খোকন দাস।

নিহত রুপলাল দাসের বাড়িতে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। আজ রোববার সকালে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুজনকে পিটিয়ে হত্যা : ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম, কার কাছোত বিচার চাইম’
  • বাগেরহাটে ভূমি কার্যালয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তিন ভুয়া সাংবাদিক আটক