জগন্নাথের ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা থেকে সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি
Published: 11th, August 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ ওরফে অবন্তিকার (২৪) আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এতে তাঁর সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকীকে (আম্মান) অভিযুক্ত করা হলেও অব্যাহিত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে।
গত বছরের ১৫ মার্চ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা নগরের বাসায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এ ঘটনায় তাঁর মা তাহমিনা বেগম (শবনম) আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। প্রায় দেড় বছর পর কুমিল্লার আদালতে গতকাল রোববার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
দ্বীন ইসলামকে মামলা থেকে অব্যাহিত দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘অবন্তিকা মৃত্যুর আগে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে দ্বীন ইসলামকে অভিযুক্ত করে গেছে। এর চেয়ে বড় সাক্ষী আর কী হতে পারে? তাহলে দ্বীন ইসলাম কীভাবে বাদ পড়ল?’
এ বিষয়ে আজ সোমবার সকালে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণিত না হওয়ায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসহপাঠী আম্মানকে দুই দিনের ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে এক দিনের রিমান্ড১৮ মার্চ ২০২৪গত বছরের ১৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস–সংলগ্ন বাসায় ফ্যানের সঙ্গে অবন্তিকার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর আগে ফেসবুক পোস্টে আত্মহত্যার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করেন তিনি। তাঁদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও উৎপীড়নের নানান অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ১৬ মার্চ রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তাহমিনা বেগম মামলা করেন। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর ওই দুজন গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁরা জামিনে মুক্ত হন।
আরও পড়ুনচার মাস আগেও আম্মানের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করেন অবন্তিকা, ব্যবস্থা নেননি প্রক্টর ১৭ মার্চ ২০২৪মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ তদন্তকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ ২৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবন্তিকার মুঠোফোনে থাকা বেশ কিছু ছবি, স্ক্রিনশট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের কিছু খুদে বার্তা জব্দ করা হয়। তাঁর ফেসবুকে দেওয়া ‘সুইসাইড নোট’ পর্যালোচনা করা হয়েছে। মুঠোফোনটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে প্রতিবেদন আনা হয়। সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
মেয়ের মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িত ব্যক্তিরা শাস্তি পাবে কি না, এ নিয়ে আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বলে জানান তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘তদন্তের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি নিশ্চিত করেছে কি না, তা আমাকে জানায়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ করেও মেয়েকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পরিনি। সেই প্রশাসনের কর্মকর্তারা কীভাবে এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে? পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে দ্বীন ইসলামকে কোনোভাবেই রেহাই দিত না। আমি বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
আরও পড়ুনঅবন্তিকা স্মরণে গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের২১ মার্চ ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবন ত ক র কর মকর ত আম ম ন অব য হ ফ সব ক তদন ত সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা