চাঁদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন বিদেশগামীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রায় তিন মাস প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে বিদেশগামী প্রশিক্ষণার্থীদের কার্যক্রম।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এ তথ্য নিশ্চিত করেন একাডেমির সিনিয়র প্রশিক্ষক সিরাজুল আবেদীন।

এদিকে প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় বিদেশগামী মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। অথচ দেশের মানুষকে কর্মদক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে সরকার। ভবন ও শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণের সুযোগ না পাওয়ায় বঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সিডিসিসহ নানা দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ২৫ মে প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকে তালা দেয় তারা। 

এ বিষয়ে একাডেমির সিনিয়র প্রশিক্ষক সিরাজুল আবেদীন বলেন, “চলতি সপ্তাহ থেকে আমাদের ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়নি। ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অল্প কয়েকজন এরইমধ্যে ক্লাস শুরু করছে। আশা করি আগামী সপ্তাহের মধ্যে সকল শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরবে।”

বিদেশগামী প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে বিদেশগামীদের সকল ধরনের প্রশিক্ষণ বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একাডেমিতে প্রশিক্ষণ না পাওয়ার কারণে বিদেশগামীদের নানা সমস্যা হচ্ছে। চাঁদপুরের লোকজনকে ঢাকায় বা অন্যান্য স্থানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে। এতে তাদের কষ্টের পাশাপাশি অর্থও ব্যয় হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে পুনরায় বিদেশগামী প্রশিক্ষণার্থীদের কার্যক্রম শুরু করা হবে।”

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, “মেরিন একাডেমি বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। এতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।”

ঢাকা/অমরেশ/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ