ঝালকাঠিতে একই স্থানে বিএনপি ও যুবদলের সমাবেশ, ১৪৪ ধারা জারি
Published: 13th, August 2025 GMT
ঝালকাঠির রাজাপুরে একই সময় ও একই স্থানে উপজেলা বিএনপি ও যুবদল পৃথক সমাবেশের আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
আজ বুধবার বিকেলে উপজেলা বিএনপির একাংশ জুলাই গণ–অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উপলক্ষে উপজেলা মার্কেট চত্বরে র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করেছে। একই সময়ে উপজেলা চত্বরে ‘জুলাই/২৪ বিপ্লব’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা যুবদল। দুটি পক্ষই এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় চিঠি দিয়েছে। তবে কোনো পক্ষকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
উপজেলা বিএনপির চিঠিতে বলা হয়েছে সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র আবদুস সালাম। প্রধান বক্তা থাকবেন দলের নির্বাহী কমিটির সহ তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এইচ এম সাইফ আলী খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ হোসেন ও সদস্যসচিব শাহাদৎ হোসেন।
অন্যদিকে উপজেলা যুবদলের সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন ঝালকাঠি জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম। প্রধান বক্তা থাকবেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব আনিসুর রহমান ও সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাছুম বিল্লাহ পারভেজ।
একই সময় ও স্থানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাক দেওয়ায় গতকাল দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। দুই পক্ষের নেতা–কর্মীরা নানা মন্তব্য ও পোস্টে একে অপরকে আক্রমণ করেন। এ ছাড়া দুই পক্ষের আয়োজনকে ঘিরে গতকাল বিকেলে মিছিল, মোটরসাইকেল মহড়া হয়। উপজেলা মার্কেট চত্ত্বরে উভয় পক্ষের লোকজন এবং পুলিশ অবস্থান নেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রথমে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছি। পরে শুনলাম একই স্থানে যুবদলও অনুমতি পেয়েছে; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, জাকির হোসেন মোল্লা যিনি যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়ে চিঠিতে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও আছেন—এটা কীভাবে সম্ভব?’
এ বিষয়ে যুবদল নেতা জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, উপজেলা যুবদল আগেই এ কর্মসূচির প্রস্তুতি নেয়। বিএনপির কর্মসূচি বিষয়ে যুবদল কিছুই জানে না।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি তালুকদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাকে কেউ বিষয়টি জানায়নি। উভয় পক্ষ আলোচনা করে কর্মসূচি করলে ভালো হতো।’
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
এ বিষয়ে ইউএনও রাহুল চন্দ বলেন, ‘কর্মসূচির বিষয়ে কেউ আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। শুধু অবহিত করেছে। একই সময় ও একই স্থানে উভয় পক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে। তাই সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আইন অমান্য করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একই স থ ন একই সময় ব এনপ র য বদল র ১৪৪ ধ র ঝ লক ঠ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা