শেখ হাসিনার আমলে যারা সিদ্ধান্ত নিত, ইউনূস আমলেও তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘দেশের সব নীতি নির্ধারণ করছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইএমএফ। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আমাদের আমলাতন্ত্র আর ব্যবসায়ীরা।’

সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটে নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে এক সেমিনারে এ কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

আনু মুহাম্মদ বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা শেখ হাসিনার উন্নয়ন মডেলকে মিরাকল বা অলৌকিক বলেছিল। তারা আলাদা উন্নয়ন ধারা তৈরি করেছিল। এখন তারাই আবার নীতি নির্ধারণ করছে। উপদেষ্টারাও বিদেশিদের জন্য নীতি নির্ধারণে বেশি উৎসাহী।

গোপন চুক্তি নিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে জনগণকে জানাতে হবে। এটাই মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতি। গোপন চুক্তি না করে এই সরকারের পরিবর্তনের দিশা তৈরির সুযোগ ছিল। তারা আগের গোপন চুক্তিগুলো প্রকাশ করতে পারত, যাতে পরের সরকারগুলো এমন চুক্তি করতে উৎসাহী না হয়। কিন্তু এসব বিষয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, বিষয়টি আশা ভঙ্গের।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণ করা বা বিলম্ব করার বিষয়ে এখনো সরকারের সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ এখনো এ জন্য প্রস্তুত নয়, যদিও আমরা আগের পরিসংখ্যান বয়ে বেড়াচ্ছি। নতুন সরকার হয়তো উত্তরণ করবে। আমরা নিয়মের মধ্যে কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছি মাত্র।’

মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, এফটিএ মানে ফোর্স ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা জোরপূর্বক বাণিজ্য চুক্তি, এটা ছাড়া কোনো অর্থ হয় না। সেমিনারে এলডিসি উত্তরণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ আরও বাড়ল

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বেড়ে এখন ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, অর্থাৎ ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলারে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১১টি ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে। প্রতি ডলারের দর ছিল ১২১ দশমিক ৪৭ টাকা থেকে ১২১ দশমিক ৫০ টাকা।

গত ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ১ কোটি ডলার কেনে। এর আগে ১৩ ও ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে কেনা হয় মোট ৪৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলমান নিলামপ্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৫৮ কোটি ডলার কিনেছে।

কয়েক মাস ধরে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবাহ বাড়ছে। এতে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে ডলারের দাম কমার আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই বাজারে ডলারের সম্ভাব্য দরপতন ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, বাজারে ডলারের মান ধরে রাখতে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে তারা এই পদক্ষেপ নেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

বিপিএম-৬ হচ্ছে, আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়ালের ষষ্ঠ সংস্করণ। এটি মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ডেটা হিসাব করার একটি মানসম্মত পদ্ধতি।

মোট রিজার্ভ ৪ আগস্ট ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। ওই দিন বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরে ডলারের চাহিদা কমে আসছে। ফলে দাম কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে। দাম আরও কমলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ খুবই ভালো দেখা গেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ শতাংশ। এই মাসে প্রবাসীরা ২৪৭ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ১৯১ কোটি ডলার।

ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে উচ্চ হারের প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপ কমেছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ কেটে গেছে। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে দিয়েছে।

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার পাঠান প্রবাসীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ আরও বাড়ল