জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচন নয়, ৭ দাবি ইসলামী আন্দোলনের
Published: 13th, August 2025 GMT
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার আগে নির্বাচন করা যাবে না, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) প্রধান নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা এসব দাবি জানান।
দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ। সঙ্গে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম।
আরো পড়ুন:
ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ এনসিপিসহ ১৬ দল
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন: সিইসি
সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ৭ দফা দাবি হলো:
১) বিগত ক্ষমতাসীন দলগুলো যেভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে দলীয় এবং ক্ষমতার অশুভ প্রভাব খাটিয়ে বিতর্কিত ও ব্যর্থ করেছে তা থেকে উত্তরণের জন্য সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজন করতে হবে।
২) সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্বশীল এবং দল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য প্রশিক্ষণ ও দিক নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় হলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩) সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের গৌরব সেনাবাহিনীকে শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নয় বরং প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সেনা সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) জুলাই জাতীয় সনদের আলোকে ও সংস্কারের ভিত্তিতে জাতীয় এবং সকল স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে।
৫) শতভাগ জনমতের মূল্যায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদ গঠনের লক্ষ্যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
৬) ফ্যাসিস্ট, খুনি, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও আধিপত্যবাদী শক্তির এজেন্ট আওয়ামী লীগ ও তার সব দোসর ও সহযোগী দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করা।
৭) দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, টেন্ডারবাজ ও খুনিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
বৈঠক শেষে দলের মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন,“একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পরে অবশ্যই তার একটি সনদ হতে হবে এবং নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের আলোকে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার আগে কোনো অবস্থাতেই তফসিল ঘোষণা করবেন না-এ বিষয়ে সিইসিকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।”
জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা গেল কিনা, রাজনৈতিক দলগুলো কতটা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চায় অভ্যস্ত হলো তা বোঝার জন্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দরকার।”
গাজী আতাউর রহমান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, “আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সতর্ক করেছি যে, যদি আপনি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন তাহলেই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেন। অন্যথায় সাম্প্রতিক অতিতের নির্বাচন কমিশনারদের পরিনতি আপনার ক্ষেত্রেও পুনরাবৃত্তি হবে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “নির্বাচন অব্যশই হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদ অনুসারে নির্বাচন আয়োজনের জন্যই আমরা এই প্রস্তাবনাগুলো ও সতর্কবার্তা তুলে ধরেছি।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইস ইস স থ ন য় সরক র জ ল ই সনদ র জন য ইসল ম সনদ র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা