বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরোনো সমস্যা ফিরবে
Published: 15th, August 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে বাংলাদেশে আবার পুরোনো সমস্যাগুলো ফিরে আসবে। গত বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেলনিউজএশিয়া (সিএনএ) টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য, পরিষ্কার ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, সেগুলো অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের পরে সরকারে থাকার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন ও উত্তর কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে তুলে ধরা হলো:
সিএনএ: আপনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ১ বছর ৫ দিন পার হয়েছে। ওই সময় আপনার সামনে অন্তত চারটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। সেগুলো পূরণ করতে পেরেছেন?
অধ্যাপক ইউনূস: আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এটি কখনো সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু এটাকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা নিজেরা যে লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করেছিলাম, সেগুলো আমরা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছাচ্ছি। একটি লক্ষ্য ছিল সংস্কার। অনেক কিছু সংস্কারের প্রয়োজন। কারণ, যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা ইত্যাদিসহ যেসব ব্যবস্থা পেয়েছিলাম, সেগুলোর সবই জালিয়াতিতে ভরা ছিল। এসব ব্যবস্থার অপব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হয়। ওই সরকার এই সুযোগ নিয়েছে। পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের সমাজকে নষ্ট করেছে। যখন আমরা সরকারের দায়িত্ব নিলাম, তখন আমরা দেখেছি, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মতো পরিস্থিতি। সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
সিএনএ: গত বছর যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিচারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং শেষে এই সরকারের চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন।
অধ্যাপক ইউনূস: আমাদের অঙ্গীকার ছিল গণ–অভ্যুত্থানের সময় জাতির যে আকাঙ্ক্ষা, তা নিশ্চিত করা। এগুলো তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।
সিএনএ: কোনটা গুরুত্বপূর্ণ—নির্বাচন প্রথম, তারপর সংস্কার নাকি প্রথমে সংস্কার তারপর নির্বাচন? আপনি কোন ধরনের নির্বাচন করতে যাচ্ছেন?
অধ্যাপক ইউনূস: একবার ভাবুন, যদি আমরা নির্বাচন দিয়ে শুরু করি তাহলে আমাদের সংস্কারের প্রয়োজন নেই, বিচারের প্রয়োজন নেই। কারণ, আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন হলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তাহলে সবকিছু নির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে। কল্পনা করুন, অন্য দুটি কাজ না করে আপনার নির্বাচন হয়েছে। তখন আপনি আবার সেই পুরোনো সমস্যায় ফিরে যাবেন।
সিএনএ: আপনি এটাকে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা বলছেন।
অধ্যাপক ইউনূস: হ্যাঁ, অবশ্যই।
সিএনএ: এটা কোন দিক দিয়ে ফ্যাসিবাদ?
অধ্যাপক ইউনূস: কারণ, এটি কোনো আইনের শাসন তৈরি করে না।
সিএনএ: যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে গেলেন, তখন তাঁকে আপনি দানব বলেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস: যদি আরও শক্তিশালী কোনো শব্দ থাকত, তাহলে আমি সেটাই ব্যবহার করতাম। কারণ, তিনি রাস্তায় খুব কাছ থেকে মানুষ হত্যা করেছেন।
সিএনএ: শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবাসনের অনুরোধে ভারত সাড়া দেয়নি। আপনি চেয়েছিলেন ভারত যেন শেখ হাসিনার বার্তা প্রচার বন্ধ করে দেয়।
অধ্যাপক ইউনূস: হাসিনাকে ভারত থেকে বের করতে আমরা লড়াইয়ে যাচ্ছি না। আমরা বলেছিলাম, ‘আপনারা তাঁকে রাখতে পারেন। আমাদের বিচার চলবে। এর মধ্যে তাঁকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। এখনো বাংলাদেশে তাঁর অনেক অনুসারী রয়েছে, পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করার আগে তারা যেটা করেছিল, এখনো তারা একই কাজ করবে।’
সিএনএ: আপনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না আঁকলে ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। আপনার ভাষায়, দেশ দুটি গভীরভাবে একত্রিত।
অধ্যাপক ইউনূস: অবশ্যই। আমি বহুবার বলেছি।
সিএনএ: চীন ও পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পিছিয়ে গেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অধ্যাপক ইউনূস: পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। আমরা কখনো বলিনি, আমরা ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই না। নেপাল ও ভুটানকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে আনতে পারি। ভারতের সেভেন সিস্টার্স—সাতটি রাজ্যও এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকতে পারে। কারণ, আমরা বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে একই সুবিধা ভাগ করে নিতে পারি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ব যবস থ বল ছ ন লক ষ য আম দ র স এনএ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
জুমার নামাজ কত রাকাত
জুমার নামাজ ইসলামের একটি বিশেষ ইবাদত, যা মুসলমানদের সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন শুক্রবারে জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়। কোরআনে জুমার নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ৯)
এ আয়াত থেকে জুমার নামাজের তাৎপর্য স্পষ্ট। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, জুমার নামাজ কত রাকাত? আমরা জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা, এর ইসলামি বিধান, সুন্নাহ ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনা করব।
জুমার নামাজের রাকাতসংখ্যাজুমার নামাজের রাকাতসংখ্যা ইসলামি শরিয়াহ দ্বারা সুনির্দিষ্ট। এটি জোহর নামাজের পরিবর্তে শুক্রবার আদায় করা হয়। রাকাতসংখ্যা নিম্নরূপ—
ফরজ নামাজ: জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত। এটি জামাতের সঙ্গে মসজিদে ইমামের নেতৃত্বে আদায় করা হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জুমার নামাজ দুই রাকাত, যা জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৭৬)
এই ফরজ নামাজ জোহরের চার রাকাত ফরজের স্থলাভিষিক্ত হয়।
আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫সুন্নাত নামাজ: চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (জোরালো সুন্নত), যা জুমার ফরজ নামাজের আগে পড়া হয়। চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ও দুই রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা (ঐচ্ছিক সুন্নত) পড়া যায়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৫২৩)
মোট রাকাত: সাধারণ অনুসরণ অনুযায়ী, জুমার নামাজের সম্পূর্ণ রাকাতসংখ্যা হলো ১২।
জুমার আগে: চার রাকাত (সুন্নাত)
ফরজ: দুই রাকাত (জামাতে)
জুমার পরে: চার রাকাত (সুন্নাত) + দুই রাকাত (ঐচ্ছিক সুন্নত)
হানাফি মাজহাবে জুমার পর চার রাকাত সুন্নাতকে জোর দেওয়া হয়। তবে শাফিঈ মাজহাবে জুমার পর দুই রাকাত সুন্নাতও পড়া যায়। হাদিসে উল্লেখ আছে, নবীজি (সা.) জুমার পর দুই রাকাত পড়তেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৮১)
তবে পরবর্তী সাহাবিরা চার রাকাত পড়েছেন বলেও প্রমাণও রয়েছে।
জুমার নামাজের কাঠামোজুমার নামাজের কাঠামো নিম্নরূপ—
আজান ও খুতবা: জুমার নামাজের আগে দুটি আজান দেওয়া হয়। প্রথম আজান জুমার সময় শুরুর ঘোষণা দেয় এবং দ্বিতীয় আজান (ইকামত) ফরজ নামাজের ঠিক আগে। এর মধ্যে ইমাম দুটি খুতবা প্রদান করেন, যা জুমার নামাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। খুতবায় কোরআনের আয়াত, হাদিস ও ইসলামি শিক্ষা প্রদান করা হয়।
চার রাকাত সুন্নাত: মসজিদে প্রবেশের পর অনেকে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়েন। এটি হানাফি মাজহাবে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে বিবেচিত।
দুই রাকাত ফরজ: জামাতের সঙ্গে ইমামের নেতৃত্বে দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা হয়।
চার+দুই রাকাত সুন্নাত: ফরজ নামাজের পর চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ও দুই রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা পড়া হয়।
আরও পড়ুনবেতের নামাজ পড়ার নিয়ম০৮ জুলাই ২০২৫জুমার নামাজের গুরুত্বজুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি ফরজ ইবাদত, যা শুধু পুরুষদের জন্য জামাতের সঙ্গে আদায় করা বাধ্যতামূলক, যদি তাঁরা সুস্থ ও সক্ষম হন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে টানা তিন জুমার নামাজ ছেড়ে দেয়, তার হৃদয়ে আল্লাহ মোহর মেরে দেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তা কবুল করা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)
জুমার নামাজে সতর্কতাজুমার নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
জামাতের গুরুত্ব: জুমার নামাজ জামাত ছাড়া আদায় করা যায় না। যদি কেউ মসজিদে যেতে না পারেন (যেমন অসুস্থতার কারণে), তবে তাঁর জন্য জোহর নামাজ পড়া ফরজ।
খুতবার সময় নীরবতা: খুতবার সময় কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খুতবার সময় কথা বলে, তার জুমার নামাজ বৃথা যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)
পরিচ্ছন্নতা: জুমার নামাজের আগে গোসল করা, পরিষ্কার কাপড় পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাহ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮০)
নারীদের জন্য: হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, নারীদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ নয়, তবে তাঁরা চাইলে মসজিদে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। না পড়লে তাঁরা জোহরের চার রাকাত ফরজ আদায় করবেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, পৃষ্ঠা: ২/৩৯৫, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)
জুমার নামাজ মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক সংহতি বাড়ায়। খুতবার মাধ্যমে মুসলমানরা ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষা পান, যা তাঁদের জীবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে।
আরও পড়ুনজুমার নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব০৬ মার্চ ২০২৫