অস্কারজয়ী সিনেমা লর্ড অব দ্য রিংস সিরিজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ দ্য আই অব সৌরন। সিনেমার গল্প অনুযায়ী, দ্বিতীয় যুগের শেষের দিকে ডার্ক লর্ডের প্রতীক ছিল এই সৌরনের চোখ বা দ্য আই অব সৌরন। বলা হয়, খুব কম লোকই এর ভয়ংকর দৃষ্টি সহ্য করতে পারে। জ্বলন্ত ও ভাসমান অগ্নিময় চোখের বলটি ডার্ক লর্ডের শক্তি ও সতর্কতার প্রতীক। সিনেমার সেই চোখের মতো মহাকাশে এক কাঠামোর খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চোখের মতো বিশেষ এই কাঠামো ব্লেজার থেকে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমে সক্রিয় বিশেষ ধরনের গ্যালাক্সিকে ব্লেজার বলে। পিকেএস ১৪২৪+২৪ ব্লেজার কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্লেজারের মধ্যে একটি এটি।

প্রায় ১৫ বছরের রেডিও তথ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ব্লেজারের মহাজাগতিক জেটের ছবি তৈরি করেছেন। ব্লেজারের মহাজাগতিক জেটটি বেশ ধীরে চলে। উচ্চ-শক্তির গামা রশ্মি ও মহাজাগতিক নিউট্রিনোর সবচেয়ে উজ্জ্বল উৎসের মধ্যে এটি। সাধারণভাবে দ্রুততম জেটের কারণেই উজ্জ্বলতা সৃষ্টি হয়।

ভেরি লং বেজলাইন অ্যারে নামের ১০টি রেডিও টেলিস্কোপের প্রায় ১৫ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে ব্লেজারের মহাজাগতিক জেটের ছবি তৈরি করা হয়েছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির প্রধান লেখক ইউরি কোভালেভ বলেন, ‘আমরা ছবিটি পুনর্গঠন করে বেশ আশ্চর্য হয়েছি। আমরা এমন কাঠামোর মতো কিছুই কখনো দেখিনি। ডোনাট আকৃতির টরয়েডাল চৌম্বকক্ষেত্রের একটি জেট সরাসরি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেহেতু জেটটি পৃথিবীর দিকে ঠিকভাবে সারিবদ্ধ, তাই উচ্চ-শক্তির রেডিও তরঙ্গের উপস্থিতি দেখা যায়।’ বিজ্ঞানী জ্যাক লিভিংস্টন বলেন, এই বস্তুর উজ্জ্বলতা ৩০ গুণ বা তার চেয়ে বেশি। জেটটি ধীরে ধীরে নড়াচড়া করছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও এটা দৃশ্যমান ধাঁধার কারণে ধীরগতির মনে হচ্ছে।

নতুন এ আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ব্লেজার জেটের অবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। রেডিও সংকেতের মাধ্যমে জেটের চৌম্বকক্ষেত্রের মানচিত্রও তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই মহাজাগতিক কাঠামোয় থাকা বিভিন্ন কণা চরম শক্তি ধারণ করছে। এই কাঠামোর বিভিন্ন তথ্য অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।  

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ