গভীর মহাকাশে শক্তিশালী কাঠামোর খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
Published: 15th, August 2025 GMT
অস্কারজয়ী সিনেমা লর্ড অব দ্য রিংস সিরিজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ দ্য আই অব সৌরন। সিনেমার গল্প অনুযায়ী, দ্বিতীয় যুগের শেষের দিকে ডার্ক লর্ডের প্রতীক ছিল এই সৌরনের চোখ বা দ্য আই অব সৌরন। বলা হয়, খুব কম লোকই এর ভয়ংকর দৃষ্টি সহ্য করতে পারে। জ্বলন্ত ও ভাসমান অগ্নিময় চোখের বলটি ডার্ক লর্ডের শক্তি ও সতর্কতার প্রতীক। সিনেমার সেই চোখের মতো মহাকাশে এক কাঠামোর খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চোখের মতো বিশেষ এই কাঠামো ব্লেজার থেকে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমে সক্রিয় বিশেষ ধরনের গ্যালাক্সিকে ব্লেজার বলে। পিকেএস ১৪২৪+২৪ ব্লেজার কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্লেজারের মধ্যে একটি এটি।
প্রায় ১৫ বছরের রেডিও তথ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ব্লেজারের মহাজাগতিক জেটের ছবি তৈরি করেছেন। ব্লেজারের মহাজাগতিক জেটটি বেশ ধীরে চলে। উচ্চ-শক্তির গামা রশ্মি ও মহাজাগতিক নিউট্রিনোর সবচেয়ে উজ্জ্বল উৎসের মধ্যে এটি। সাধারণভাবে দ্রুততম জেটের কারণেই উজ্জ্বলতা সৃষ্টি হয়।
ভেরি লং বেজলাইন অ্যারে নামের ১০টি রেডিও টেলিস্কোপের প্রায় ১৫ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে ব্লেজারের মহাজাগতিক জেটের ছবি তৈরি করা হয়েছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির প্রধান লেখক ইউরি কোভালেভ বলেন, ‘আমরা ছবিটি পুনর্গঠন করে বেশ আশ্চর্য হয়েছি। আমরা এমন কাঠামোর মতো কিছুই কখনো দেখিনি। ডোনাট আকৃতির টরয়েডাল চৌম্বকক্ষেত্রের একটি জেট সরাসরি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেহেতু জেটটি পৃথিবীর দিকে ঠিকভাবে সারিবদ্ধ, তাই উচ্চ-শক্তির রেডিও তরঙ্গের উপস্থিতি দেখা যায়।’ বিজ্ঞানী জ্যাক লিভিংস্টন বলেন, এই বস্তুর উজ্জ্বলতা ৩০ গুণ বা তার চেয়ে বেশি। জেটটি ধীরে ধীরে নড়াচড়া করছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও এটা দৃশ্যমান ধাঁধার কারণে ধীরগতির মনে হচ্ছে।
নতুন এ আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ব্লেজার জেটের অবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। রেডিও সংকেতের মাধ্যমে জেটের চৌম্বকক্ষেত্রের মানচিত্রও তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই মহাজাগতিক কাঠামোয় থাকা বিভিন্ন কণা চরম শক্তি ধারণ করছে। এই কাঠামোর বিভিন্ন তথ্য অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মায় তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়ায় দুটি ঘাট বন্ধ, একটি দিয়ে ফেরি পারাপার
পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। এতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় সচল তিনটি ফেরিঘাটের মধ্যে দুটি দিয়ে ফেরি ভিড়তে পারছে না। একটি মাত্র ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এ পরিস্থিতি চলছে। ফলে দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা বেড়েছে। স্রোতের বিপরীতে ফেরি চালাতে সময় দ্বিগুণ লাগছে। একই সঙ্গে তীব্র স্রোতের তোড়ে দুটি ঘাটে ফেরি ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে গতকাল দুপুর থেকে দৌলতদিয়ার ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে। স্রোতের কারণে পাঁচটি ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘাট–সংকট ও ফেরি স্বল্পতায় পারাপারে বিঘ্ন ঘটছে।
আজ শুক্রবার সকালে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট কয়েক বছর আগে নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ৩ নম্বর ঘাটে একটি বড় কে–টাইপ ফেরি বেঁধে রাখা আছে, ৪ নম্বর ঘাটে খালি পন্টুন। এ দুটি ঘাটের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র স্রোতে কোনো নৌযান ভিড়তে পারছে না। ৬ নম্বর ঘাটে পন্টুন থাকলেও ফেরি ভেড়ানোর মতো পরিস্থিতি নেই। সচল একমাত্র ৭ নম্বর ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়েছে।
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে পাটুরিয়া থেকে ‘বাইগার’ নামের একটি কে–টাইপ ফেরি দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ঘাটে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। দীর্ঘ চেষ্টার পর ভিড়লেও পরে আর কোনো ফেরি ঘাটে ভিড়তে পারেনি। ফলে কর্তৃপক্ষ ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ করে দেয়।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৫টি ফেরির মধ্যে স্রোতের বিপরীতে চলতে না পারায় ‘ঢাকা’, ‘কুমিল্লা’, ‘ফরিদপুর’সহ ৫টি ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি ১০টি ফেরি দিয়ে পারাপার চললেও আগে যেখানে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ২৫-৩০ মিনিট লাগত, এখন লাগছে এক ঘণ্টার বেশি। এতে উভয় ঘাটেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি পড়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক বারেক সরদার বলেন, ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস ঘাটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে লাইনও লম্বা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে, চালু আছে কেবল ৭ নম্বর ঘাট। স্রোতের বিপরীতে ফেরি চালানো ও ঘাট রক্ষা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।