ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। একে ‘হাড়ভাঙা ব্যথা’ও বলা হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

হঠাৎ উচ্চ মাত্রার জ্বর (১০১-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট), তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি, বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা।

জ্বরের দু-তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে জানা যায়, ডেঙ্গু হয়েছে কি না। যদি ডেঙ্গু হয়ে থাকে, তাহলে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে, প্রচুর তরল খেতে হবে। জ্বরের জন্য শুধুই প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে হবে এবং নাড়ির গতি ও রক্তচাপ মনিটর করতে হবে। প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা শক সিন্ড্রোম হতে পারে। ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার পর সাধারণত দুর্বলতা থাকে, কিন্তু গিঁটে আর ব্যথা থাকে না।

চিকুনগুনিয়া

আফ্রিকার আঞ্চলিক ভাষায় চিকুনগুনিয়ার মানে বাঁকা হয়ে যাওয়া। এ রোগের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ব্যথা।

এই ভাইরাসে সংক্রমিত হলে যেসব উপসর্গ হয়— প্রচণ্ড জ্বর; বমি বমি ভাব; মাথাব্যথা; দুর্বলতা; শরীরে লাল র‌্যাশ; সারা শরীরে, বিশেষ করে মাংসপেশি, মেরুদণ্ড বা অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা; হাত পা ফুলে যায়, চলাফেরা কঠিন হয়ে যায়। 

লক্ষণগুলো দেখে পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়াই রোগ শনাক্ত করা যায়। সিবিসি এবং ৫-৭ দিন পর রক্তে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা যায়।

চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করেন। ১০ শতাংশের কম রোগী জ্বর সেরে যাওয়ার পরও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বা গিঁটে, মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথায় ভোগেন। স্বল্পসংখ্যক রোগী কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত মারাত্মক ব্যথায় ভুগতে পারেন।

চিকুনগুনিয়া আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা

অ্যাকিউট স্টেজে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। বিশ্রাম, পর্যাপ্ত তরল পান এবং ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল) ব্যবহার করে জ্বর ও ব্যথা কমানো যেতে পারে। ঠান্ডা সেঁক দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে। কিছু ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি এবং অন্যান্য সহায়ক থেরাপিরও প্রয়োজন হতে পারে।

ক্রনিক আর্থ্রাইটিস হলে মানে ব্যথা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হলে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল, আইবি প্রফেন, ক্লোফেনাক, শর্ট কোর্স স্টেরয়েড, রোগ প্রতিরোধক ওষুধ (যেমন মিথোট্রেক্সেট) এবং অন্যান্য প্রদাহরোধী ওষুধ লাগতে পারে।

ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা যায়। ফিজিওথেরাপিস্টরা কিছু ব্যায়াম ও থেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের নড়াচড়া স্বাভাবিক করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করেন। 

ডা.

এ কে এম মূসা, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, শাহবাগ, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বর র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই

রংপুরের কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দুজন কাউনিয়ার এবং একজন মিঠাপুকুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। তবু আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে তেমন সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ জন নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।

আরও পড়ুনপীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনরংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশত১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ আছে এমন ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। সুজন সাহা বলেন, আক্রান্ত রোগীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের কর্মী রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেবেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৫–২০ দিন আগে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে একটি গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। পরে ওই মাংস কাটাকাটি করার পর গ্রামের পাঁচ–ছয়জনের শরীরে ঘা হয় ও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁরা চিকিৎসা নিতে আসলে সেখানে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজন পুরুষের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ইমাদপুরে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবু রোগী যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাঁদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি জানান, এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা বা মাংস খাওয়া যাবে না।

বুধবার দুপুরে আমাইপুর গ্রামে গেলে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও সোহরাব আলীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, গরুর মালিক গরু অসুস্থের কথা বলেননি। বলেছিল, দড়ি দিয়ে গরুর ফাঁস লেগেছিল। এ কারণে প্রতিবেশীরা মাংস কাটাকাটিতে যুক্ত হন। এই দুই স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রহমতপুর বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম তাঁরা দেখেননি।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেকটি সূত্র বলছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের একজন নারীর অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ পাওয়া গেছে। তিনি অসুস্থ গরুর সংস্পর্শে আসেননি। তবে তাঁর বাড়িতে গরু-ছাগল আছে। ওই নারী নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, মাটি বা ঘাসের সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু বছরের পর বছর ধরে থেকে যায়। বেশির ভাগ সময় পানি জমা ঘাস গবাদিপশু খাচ্ছে। সেখান থেকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য অ্যানথ্রাক্স প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে।

অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ইমাদপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাঁদের এলাকায় গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী পচার হাটের মমিনুল ইসলাম ও মহেন্দ্র দাস বলেন, তাঁদের এলাকায় টিকা দেওয়া হয়নি। তাঁরা গরু-ছাগল নিয়ে আতঙ্কে আছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ প্রথম আলোকে বলেন, গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করার পরেই গত আগস্ট থেকে তাঁরা টিকা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করতে দেরি করেছে। এ কারণে এখন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দাবি, পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর ও রাজাটহাটেও অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিরাপদ মাংসের জন্য বিভিন্ন জবাইখানায় গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেরি করেনি দাবি করে ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারছি, সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছিল। প্রতিটি উপজেলাকে সতর্ক করা আছে এবং অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এটার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসাব্যবস্থা, সেটাও পর্যাপ্ত আছে। এ মুহূর্তে যেটা বিষয়, জনগণকে সচেতন করা। অসুস্থ প্রাণী জবাই না করা, নিজেরা না খাওয়া, লুকিয়ে বিক্রি না করা। অসুস্থ প্রাণী মারা গেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রোস্টেট ক্যানসারের যেসব সাধারণ উপসর্গকে অনেকেই অবহেলা করেন
  • রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই
  • দেশে আবার অ্যানথ্রাক্স, সুস্থ থাকতে যা জানা জরুরি
  • রংপুরে ৯ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, ছড়িয়ে পরার শঙ্কা 
  • পীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী
  • প্রোস্টেট ক্যানসারে সচেতনতা