ফরিদপুরের কুমার নদে দাদি-নাতির মৃত্যু, শিশু নিখোঁজ
Published: 26th, September 2025 GMT
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাসানচর গ্রামের কুমার নদে গোসল করতে নেমে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দাদি-নাতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিখোঁজ হয় অপর এক শিশু। তাকে উদ্ধারে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নদীতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিসার আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমরা আজ সকাল ৯টা থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে গতকাল যেখানে লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেই কুমার নদের পশ্চিম ভাসানচর এলাকায় ডুবুরিরা খোঁজ চালিয়েছেন। নদীর প্রবাহকে অনুসরণ করে আমরা আশপাশেও খোঁজ চালাচ্ছি। দুপুর ১টা পর্যন্ত আমাদের খোঁজ চলমান থাকবে। আশা করছি, শিশুকে খুঁজে পাব।”
আরো পড়ুন:
টিকটক ভিডিও করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
গোপালগঞ্জে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু
মারা যাওয়ারা হলেন- পশ্চিম ভাসানচর গ্রামের তোতা মৃধার ছেলে তৌসিফ (৭) ও তার দাদি মালেকা বেগম (৬৮)। নিখোঁজ শিশুর নাম সোয়াদ (৬)। সে মারা যাওয়া মালেকা বেগমের নাতি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাগর মোল্লা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে মালেকা বেগম তার দুই নাতি তৌসিফ ও সোয়াদকে নিয়ে কুমার নদে গোসল করতে যান। একপর্যায়ে দুই শিশু পানিতে ডুবে যেতে থাকলে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যান মালেকা বেগম। এরপর তিনজনই নিখোঁজ হন। তৌসিফ ও সোয়াদ ভাসানচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
তিনি আরো জানান, নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কেউ বুঝতে পারেনি। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নদীতে দুইটি মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। পরে মরদেহ দুইটির পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিসার আলী বলেন, “গতকাল বিকেল পৌনে ৫টার দিকে খবর আসে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা মালেকা বেগম ও তৌসিফের লাশ উদ্ধার করি।”
ঢাকা/তামিম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ক ম র নদ ভ স নচর
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা