নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদ্যাপনে শঙ্কা ও উদ্বেগ বাড়ছে: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
Published: 26th, September 2025 GMT
নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদ্যাপনে ক্রমান্বয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনটি বলছে, নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদ্যাপনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চতর পর্যায় থেকে পূজার্থীদের আশ্বস্ত করা হলেও পূজার প্রাক্কালে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা কোনোভাবেই আশান্বিত হতে পারছেন না।
আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৯টি পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের হামিন্দপুরে প্রতিমায় আগুন, ১০ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার আয়মা ঝলই মহারানী বাঁধ এলাকার কালীমন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, ১৪ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের স্বরূপদহ পালপাড়ার রক্ষাকালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, ১৬ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনা সদর উপজেলার কান্দুলিয়া কালীবাড়ি পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর, ১৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুর নগরের কাশিমপুর শ্মশানমন্দিরে পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়া পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
তথ্য অনুযায়ী, ২১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পৌরসভার তাড়িয়াপাড়া এলাকায় একটি পূজামন্দিরে সাতটি প্রতিমা ভাঙচুর, একই দিন মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানের রাজারনগর ইউনিয়নের মধুপুর শ্রীশ্রী রক্ষাকালী ও দুর্গামন্দিরের জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিমা ভাঙচুর, ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের হরিতলা সর্বজনীন পূজামন্দিরে ৬টি প্রতিমা ভাঙচুর এবং একই দিন কাছাকাছি সময়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ঐক্য পরিষদ বলছে, এসব ঘটনা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ কিছু জেলায় পূজাকেন্দ্রিক গোলযোগের সংবাদ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় পূজার্থীদের ভয়ভীতি ও শঙ্কা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে এবং তাঁরা পূজা চলাকালীন দিনগুলোতে অধিকতর সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করছেন। ঐক্য পরিষদ পূজার প্রাক্কালে বিদ্যমান পরিস্থিতি সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উৎসব চলাকালে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর উপজ ল র মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা