আসছে কোয়ান্টাম মুদ্রাব্যবস্থা
Published: 28th, September 2025 GMT
নকল বা জাল টাকা বিশ্বজুড়ে বড় একটি সমস্যা। নকল বা জাল টাকা নিয়ে বিপত্তির মুখে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর আদলে কোয়ান্টাম মুদ্রা চালুর জন্য কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়ান্টাম তথ্যের একটি ক্ষুদ্র আধার ডেবিট কার্ডের মতো কাজ করতে পারে। ফলে কোনো নকল, জাল বা জালিয়াতির সুযোগ না রেখেই এই মুদ্রা ব্যবহার করা যাবে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, কোয়ান্টাম মুদ্রা কাগজের নোট বা ডিজিটাল কোডের ওপর নির্ভর করে না। কোয়ান্টাম মুদ্রা তথ্য সঞ্চয় করে কোয়ান্টাম অবস্থায়। কোয়ান্টাম মুদ্রা মূলত একটি ইলেকট্রনের স্পিন বা একটি ফোটনের পোলারাইজেশন বা মেরুকরণ অবস্থায় তথ্য সংরক্ষণ করে। কোয়ান্টাম মুদ্রার মূল ধারণা স্টিফেন উইজনারের ১৯৮৩ সালের কনজুগেট কোডিং হিসেবে প্রস্তাব করেন। কোয়ান্টাম অবস্থার নিখুঁত অনুলিপি করা যায় না বলে কোয়ান্টাম মুদ্রা ক্লোন করার চেষ্টা করলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে।
ফ্রান্সের প্যারিসের সোরবোন ইউনিভার্সিটি ও সিএনআরএসের কাস্টলার ব্রোসেল গবেষণাগারে বিজ্ঞানী জুলিয়েন লরাটের নেতৃত্বে কোয়ান্টাম মুদ্রা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময় বিজ্ঞানীরা খুব দুর্বল আলোর স্পন্দনে গড়ে একক ফোটন প্রেরণ করেন, যা কিউবিট নামক একটি বিটসদৃশ কোয়ান্টাম অবস্থা বহন করে। এই অবস্থা আলোর পোলারাইজেশন হিসেবে বিদ্যমান থাকে। একটি কোয়ান্টাম মেমোরিতে এসব অবস্থা লোড করা হয়।
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, কোয়ান্টাম মুদ্রা নিয়ে এই গবেষণায় নো-ক্লোনিং ভাবনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের এমন একটি ধারণা যেখানে অজানা একটি কোয়ান্টাম অবস্থার নিখুঁত অনুলিপি তৈরি করার সুযোগ নেই বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীরা আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে এই নিয়মকে নিরাপদ সঞ্চয়ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
সূত্র: আর্থ ডট কম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ট ম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা