Prothomalo:
2025-11-17@12:32:48 GMT

শিশু বেশি লম্বা কি চিন্তার বিষয়

Published: 28th, September 2025 GMT

কথায় আছে, ‘কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়’। এটা দৈহিক উচ্চতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে কম উচ্চতা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। বেশির ভাগ মা-বাবার অভিযোগও সন্তানের উচ্চতা কম নিয়ে। কিন্তু সন্তান অতিরিক্ত লম্বা হওয়ার কারণে সমস্যা হতে পারে কখনো?

প্রথমেই জানা দরকার, অতিরিক্ত লম্বা বলতে কী বোঝায়। চিকিৎসা পরিভাষায় কারও উচ্চতা গড় উচ্চতার ৯৭ শতাংশের বেশি হলে অস্বাভাবিক লম্বা বলা হয়। শিশুদের উচ্চতা পরিমাপের জন্য একটা গ্রোথ চার্ট ব্যবহার করে থাকেন চিকিৎসকেরা, সেই গ্রোথ চার্টে এই অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।

এখন প্রশ্ন, আদৌ এটি কোনো সমস্যা কি না বা এর চিকিৎসা করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। জাতিগত বা বংশগতভাবে অনেকে অনেক লম্বা হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে কেউ যদি নীরোগ হয়, তবে তা স্বাভাবিক বলেই বিবেচিত হবে। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগে কারও উচ্চতা অস্বাভাবিক হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগের আলামত খুঁজে দেখতে হবে।

যেসব রোগের লক্ষণ হতে পারে

কোনো শিশু অতিরিক্ত মোটা বা ওজন অতিরিক্ত হলে উচ্চতা বাড়তে পারে। কারও ওজন কমে শুধু লম্বাও হতে পারে। এ ছাড়া কেউ কেউ দৃশ্যত অস্বাভাবিক লক্ষণের অধিকারী হয়। এটা হতে পারে আকৃতিগত বা আচরণগত। অনেক সময় চেহারায়, মুখাকৃতিতে বা শারীরিক গঠনে কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আবার বুদ্ধিমত্তা, আচার-আচরণে বা পড়াশোনাতেও পিছিয়ে থাকতে পারে। কারও কারও বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত বা আগাম হতে পারে।

অস্বাভাবিক লম্বা মানেই রোগ নয়। কিন্তু অস্বাভাবিক লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে হরমোনজনিত কিছু রোগের বিষয়ও আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রোথ হরমোনের আধিক্য (জায়গান্টিজম) বা থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য (হাইপারথাইরয়েডিজম)। এ ছাড়া কিছু জন্মগত রোগ ও সিনড্রোম, যেমন হোমোসিস্টিনুরিয়া, মারফান সিনড্রোম, ক্লাইনফিল্টার সিনড্রোম, বেকউথ-ওয়াইড ম্যান সিনড্রোম, ট্রিপল-এক্স সিনড্রোম ইত্যাদি থাকলে কেউ অস্বাভাবিক লম্বা হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও থাকে।

শিশু যদি সুস্থ ও পারিবারিক বা বংশগতভাবে লম্বা হয়ে থাকে, তাহলে তা স্বাভাবিক। অন্যথায় শিশু যদি দ্রুত লম্বা হতে থাকে এবং সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়, শরীরের গড়ন ডিসপ্রপোরশনেট বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে বিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডা.

রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হরম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ