মণ্ডপ সেজেছে ইলিশ-জাল-জেলে-নৌকার ব্যতিক্রমি সাজে
Published: 30th, September 2025 GMT
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সমাজিক দায়বদ্ধতামূলক বার্তা বহনকারী সাজসজ্জা নিয়ে ‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুরে ব্যতিক্রমী দুর্গাপূজার মণ্ডপ সাজিয়ে নজর কেড়েছে একটি মণ্ডপ। চাঁদপুরের পুরানবাজার দাসপাড়া সর্বজনীন কালী মন্দির ও দুর্গা মন্দির কমিটির আয়োজনে এই মণ্ডপের কারুকাজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আকর্ষণীয় পূজোমন্ডপটি দেখতে সনাতনী ভক্তদের ব্যাপক ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৮ শতাংশের জায়গা জুড়ে নানা রঙের বাতি ও ডেকোরেটরের কাজে মণ্ডপটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে জেলে, জাটকা ইলিশ, মা ইলিশ, কারাগারে আট অপরাধী জেলে, নৌকা দিয়ে জেলেদের মাছ ধরা, নদী, জাল, ক্রেতার ইলিশ মাছ কেনা বেচা, ইলিশ চত্ত্বরসহ প্রাকৃতিক নানা দিক।
ইলিশময় সাজসজ্জায় সাজানো মণ্ডপটির নাম দেওয়া হয়েছে ইলিশের ‘বাড়ি চাঁদপুর’। আয়োজকরা এই উদ্যোগে এবারের প্রতিপ্রাদ্য রেখেছে ‘মা আসছে জীবনের বার্তা নিয়ে-নদী বাঁচুক-ইলিশ ফিরুক ঘরে’।
চাঁদপুরের পুরানবাজার দাসপাড়া সর্বজনীন কালী মন্দির ও দুর্গা মন্দির কমিটির পূজার সমন্বয়ক উৎপল দাস ও সঞ্জয় মজুমদার বলেন, “আমরা এই নিয়ে ১৮তম বার এখানে পূজার আয়োজন করছি। এই মন্দির কমিটি সবসময়ই প্রাকৃতিক বিলুপ্তির পথে সৌন্দর্য ও সমাজ সংস্কারক বার্তা নিয়ে কাজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার এই সাজসজ্জা। এর পুরো খরচ যুগিয়েছেন আয়োজক কমিটি এবং পুরানবাজারের দাসপাড়াবাসী।”
তিনি আরো বলেন,“ মা দুর্গার আরাধনার পাশাপাশি পূজার দিনগুলোতে পূজা দেখতে আসা ভক্তদের জন্য মহাঅষ্টমীর দিন অঞ্জলী ও দুপুরে মহা প্রসাদ বিতরণ, অসহায়দের মাঝে বস্ত্র বিতরণ, সন্ধ্যায় আরতি ও ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও আরতিসহ নানা পর্বের এই আয়োজন চলবে বৃহস্পতিবার পূজার শেষ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত। পুরো আয়োজনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে তত্ত্বাবধানে ২০ থেকে ২৫ জনের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী রেখেছি। যারা নির্বিঘ্নে পূজার্চনা ও ভক্তদের পূজা দেখতে আসা-যাওয়ায় সহায়তা করবে।”
ঢাকা/অমরেশ/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা