বাংলাদেশ দলের হয়ে সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন লিটন
Published: 30th, September 2025 GMT
এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে না পারায় বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন লিটন দাস। আজ নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হ্যান্ডলে পোস্ট করে ক্ষমা চান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।
মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এ টুর্নামেন্টে এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। আবুধাবিতে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান জাকের আলী বলেছিলেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এসেছি। এক ম্যাচ হেরে আশা বাদ দেওয়া যাবে না।’
বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সুপার ফোরে উঠেছিল। সেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে অলিখিত সেমিফাইনালে ১১ রানের হারে বিদায় নিতে হয়। সেই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করলেও বাজে ব্যাটিং করায় পাকিস্তানের ১৩৫ রানের সংগ্রহ টপকে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তান ফাইনালে উঠলেও ভারতের কাছে হেরে রানার্স আপ হয়।
সব মিলিয়ে এশিয়া কাপটা হতাশাতেই শেষ হলো বাংলাদেশ দলের। এর মধ্যে লিটনকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে না পাওয়ার হতাশাও আছে বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে। সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে চোট পান লিটন। এ কারণে ভারতের বিপক্ষে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে অলিখিত সেই সেমিফাইনাল ম্যাচে খেলতে পারেননি। এ দুটি ম্যাচে লিটনের জায়গায় বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেন জাকের আলী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আজ লিটনের পেজ থেকে করা পোস্টে সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলা হয়, ‘এশিয়া কাপ ২০২৫–এ আমরা দল হিসেবে নিজেদের সেরাটা দিয়েছি। ফাইনালে খেলা এবং জেতা ছিল আমাদের মূল্য লক্ষ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তা অর্জন করতে পারিনি। দল হিসেবে আমরা বাংলাদেশের সব অনুরাগী সমর্থকদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
আরও পড়ুনসাকিবকে আর কখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ৫ ঘণ্টা আগেলিটনের নিজের চোট এবং গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচে খেলতে না পারার বিষয়ে একই পোস্টে লেখা হয়, ‘ব্যক্তিগতভাবে, চোটের কারণে শেষ দুটি ম্যাচে খেলতে না পারাটা ছিল ভীষণ কষ্টের। একই কারণে আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজেও অংশ নিতে পারব না। সুস্থ হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি—এটা আমাকে অনেক দিন কষ্ট দেবে।’
পাকিস্তানের কাছে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমর থকদ র ক ছ ল দ শ দল র ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা