এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ও ভাতা শতাংশ ভিত্তিতে বাড়ানোর প্রস্তাব
Published: 1st, October 2025 GMT
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রতি মাসে এক হাজার টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকার প্রস্তাব দিয়েছিল।কিন্তু শিক্ষকরা এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে মূল বেতনের ওপর শতাংশভিত্তিক বাড়ি ভাড়ার দাবিতে জোর দেন।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত দাবি পূরণের জন্য সরকারকে সময় দিয়েছেন।ওই সময়ের মধ্যে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তারা ১২ অক্টোবর থেকে অবিরাম আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য, ছাত্রদল নেতার চারিত্রিক সনদ বাতিল
ইউজিসির অর্থায়নে গবেষণা করবেন ইবির ১৪১ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
এ অবস্থায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ভাতা শতাংশভিত্তিক বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রস্তাবটি আগামী রবিবার (৫ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ পৃথকভাবে এ প্রস্তাব দেবে। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাড়ি ভাড়া ভাতার হার মূল বেতনের ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত চারটি স্তরে প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় যা অনুমোদন করবে, সেটিই কার্যকর হবে।”
এদিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা দাবি করে আসছেন। গত ১৩ আগস্ট জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের মহাসমাবেশে এ দাবির প্রস্তাব শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। জোটটি বলছে, এরচেয়ে কম হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দিলে তারা সেটা মেনে নেবেন না।
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র প রস ত ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা