খুলনায় লিটন খান নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে শ্বাসরোধ ও গলাকেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা বসুপাড়ার বাঁশতলা মোড়ের বরকতিয়া মসজিদ এলাকার নিজ বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক। চারদিন আগে তারা ঢাকা থেকে খুলনায় আসেন।

আরো পড়ুন:

শরীয়তপুরে জমি নিয়ে বিরোধে শিশু তায়েবা খুন: এসপি

কুড়িগ্রামে গৃহবধূকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ, বিচার দাবি

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে লিটন খানের স্ত্রী বাইরে যান। এ সময় বাড়িতে লিটন, তার ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক লিমন ও পুত্রবধূ চাঁদনী ছিলেন। রাত ১১টার দিকে বাড়ি ফিরে দরজা বাইরে থেকে তালা লাগানো অবস্থায় পান লিটনের স্ত্রী। তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলে তিনি মেঝেতে স্বামীর মরদেহ দেখতে পান। এ সময় লিটনের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং গলায় ওড়না প্যাঁচানো দেখতে পান তিনি। পাশে রক্তমাখা বটি পড়ে ছিল। 

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন জানান, লিটন খান সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। ওই টাকা থেকে ছেলে লিমন ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ছেলে নেশাগ্রস্ত হওয়ায় লিটন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি আরো জানান, ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতে লিটনের স্ত্রী বাইরে গেলে সুযোগটি কাজে লাগান ছেলে লিমন ও তার স্ত্রী চাঁদনী। প্রথমে তারা লিটন খানকে গলায় ফাঁস দিয়ে ও পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘরে থাকা বটি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন। ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক।

ওসি কবির হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য অভ য গ ল টন খ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ