মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলের এক পক্ষের নেতা–কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপির জেলা কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করেন আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থকেরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক মো.

কামরুজ্জামানকে।

এই ঘোষণার পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মহিউদ্দিনের সমর্থকেরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় মহিউদ্দিনের বাড়ি মুক্তারপুর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলার দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে কামরুজ্জামানের ছবিসহ কুশপুত্তলিকা বানিয়ে তাতে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা কার্যালয়ের আশপাশে কামরুজ্জামানের সমর্থনে টাঙানো ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে সড়কে আগুন জ্বালানো হয়। একই সঙ্গে শহরের সুপারমার্কেটের প্রধান সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। কর্মসূচির শেষ দিকে সুপারমার্কেটের পেছনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, গত ১৭ বছর এ আসনে আন্দোলন, সংগ্রাম সংগঠিত করে রেখেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হাই ও তাঁর ছোট ভাই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। সে সময় কামরুজ্জামান মাঠে ছিলেন না। এখন তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় এই আসনের নেতা–কর্মীরা ভেঙে পড়েছেন। দ্রুত মনোনয়ন পরিবর্তন করা না হলে এ আসনে বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা হবে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, শহর বিএনপির সদস্যসচিব মাহবুব আলম, পঞ্চসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল মতিন, জেলা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মোহাম্মাদ মাসুদ রানা প্রমুখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা বলেন, এই মনোনয়ন যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল না করা হয়, তাহলে আজ যে কর্মসূচি হয়েছে, আগামীকাল থেকে আরও বড় কর্মসূচি হবে। দলের মধ্যে ভাঙন হবে। এ আসনে বিশাল ব্যবধানে পরাজয় বরণ করবেন কামরুজ্জামান।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘দল আমিসহ যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছে, সবাইকে তাঁদের যোগ্যতা ও ত্যাগের ভিত্তিতে দিয়েছে। আমি ৪০ বছর ধরে ছাত্রদল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আছি। দলের দুঃসময়ে জেলজুলুমের শিকার হয়েছি। যাঁরা আজকে বিরোধিতা করছেন, তাঁরা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আমি চাই, দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের জন্য কাজ করবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব ম ব এনপ র স

এছাড়াও পড়ুন:

পেডোফাইলরা কি চারপাশে কিলবিল করছে

সম্প্রতি উদ্বিগ্ন এক মা তাঁর পরিচিত অভিভাবকদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেটি ভাইরাল হয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়।

দেশ–বিদেশের অনেকে চমকে উঠেছেন ভিডিওটি দেখে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন শিক্ষার্থীর জন্মদিনে কেক কাটা হয়েছে। সেই কেক শিক্ষার্থীর মুখে আগ্রহ নিয়ে লেপে দিচ্ছেন শিক্ষক।

শিক্ষক এখানে থেমে গেলে বিষয়টি ‘ফান’ হিসেবে গণ্য করে সেদিনের মতো ‘ফুলস্টপ’দেওয়া যেত; কিন্তু থলের মধ্যে বিড়াল থাকলে ‘ফুলস্টপ’ সহজ নয়।

এই শিক্ষকের অতি আগ্রহের বিড়াল টুপ করে থলে থেকে বেরিয়ে পড়ল তখন, যখন তিনি কিশোর ছাত্রটির কেক মাখনো গাল নিজের জিহ্বা দিয়ে পরিষ্কার করা শুরু করেন।

এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিশুটির মা জানান ওই শিক্ষক নাকি ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্মদিনে এ রকম আচরণ করেন হামেশাই।

একজন অভিভাবক শিক্ষকটির এই অগ্রহণযোগ্য আচরণকে পেডোফাইল–সুলভ আচরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

প্রশ্ন উঠতে পারে পেডোফাইল কী? পেডোফাইল বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি প্রাক্‌–কৈশোর শিশুদের (সাধারণত ১৩ বছরের কম) প্রতি যৌন আকর্ষণ, তাড়না বা লালসা অনুভব করেন।

তবে এখানে যে এরা থেমে থাকবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ রকম অগ্রহণযোগ্য যৌন আচরণ ১৩ –১৪ বছর পার হয়ে যাওয়া শিশু=কিশোরদের প্রতিও থাকতে পারে। যৌন অপরাধবিজ্ঞান সেই প্রবণতাকে ‘হেবেফিলিয়া’ বলে উল্লেখ করেছে।

হেবেফিলিয়া এমন একধরনের যৌন প্রবণতা, যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্কের যৌন আকর্ষণ থাকে শুধু ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের প্রতি। এটি পেডোফিলিয়া থেকে আলাদা; কারণ পেডোফিলিয়ায় আকর্ষণ থাকে কৈশোরে পৌঁছানোর আগের শিশুদের প্রতি, অর্থাৎ যারা এখনো বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেনি। তা ছাড়া ‘ইফেবোফিলিয়া’ বলেও আরেকটি গ্রুপের কথা গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন।

মেয়েশিশুরা যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাছের লোকজন যেমন আত্মীয়, শিক্ষক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে।

পেডোফিলিয়া, হেবেফিলিয়া বা ইফেবোফিলিয়ার চুলচেরা বিশ্লেষণ এই লেখার মোক্ষ নয়।

তবে এটুকু বলা যায়, তাঁরা সবাই অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি যৌন তাড়নায় তাড়িত থাকেন এবং সুযোগ পেলেই নানাভাবে সেটি মিটিয়ে নেন। গালে কেক লাগিয়ে সেটি জিহ্বা দিয়ে পরিষ্কার করা সেই যৌন তাড়নারই বহিঃপ্রকাশ।

আরও পড়ুনভাইরাল ভিডিও: শিশু শোষণের নতুন মাধ্যম নিয়ে ভাবতে হবে১৯ এপ্রিল ২০২৫

মাত্র হাঁটতে শেখা ভাগনে-ভাগনি বা ভাতিজা-ভাতিজির পেছন থেকে প্যান্ট খুলে দিয়ে অথবা শিশুর নরম গাল বা শরীরে দাড়ি ঘষে পুরুষ আত্মীয় বা পরিচিতজনেরা যে আনন্দ পান, সেটিও মনের মধ্যে সুপ্ত বিকৃত যৌনাচারের প্রকাশ। সেটি নির্দোষ কোনো বিনোদন নয়।

উদ্বিগ্ন মায়ের পোস্টে অনেকেই আওয়াজ তুলেছেন ‘শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়ন নির্মূল করুন।’

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, বড়দের পেডোফিলিয়ার শিকার হলে শিশুর মন, শরীর, আচরণ, আত্মবিশ্বাস ও ভবিষ্যৎ সম্পর্ক সবকিছুই গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পেডোফিলিয়ার শিকার হওয়া শিশু ভয়, উদ্বেগ ও দুঃস্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, অপরাধবোধ ও নিজেকে দোষী ভাবা, বিষণ্নতা ও পিটিএসডি বা আঘাত– পরবর্তী মানসিক আভিঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে।

সময়মতো পরিবারের সহযোগিতা, চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং না পেলে শিশুকে এর ভার সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

পাঠকদের মনে থাকার কথা, বছর তিনেক আগে (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২) এক বয়স্ক মানুষের যৌন লালসার শিকার হয়ে সাত বছরের এক শিশু এতটাই বিপর্যস্ত হয়েছিল যে সে বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আত্মহত্যা করার চেষ্টার পরেই জানা যায় ঘটনাটা।

আরও পড়ুনসবার সন্তান হয়ে ওঠা শিশু মুনতাহাকে কেন বাঁচানো যায় না১১ নভেম্বর ২০২৪

ওই ঘটনায় শিশুটি প্রথমে ভয়ে সংকুচিত হলেও সে ব্যথায় অতিষ্ঠ হয়ে পরের দিন সন্ধ্যায় ফুফুকে ঘটনাটি বলে, ‘দোকানদার আঙ্কেল জোর করে ব্যথা দিয়েছে।’ এটা কোনো অভিযোগ ছিল না। স্রেফ আস্থায় থাকা একজনকে শিশুটি জানাতে চেয়েছিল গা শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতার কথা। হয়তো তার কষ্টের কথা বলে সে হালকা হতে চেয়েছিল।

বড়রা জানেন না শিশুদের সঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে কেমন ব্যবহার করতে হয়; এমন হলে শিশুকে তার শারীরিক আর মানসিক সুস্থতার জন্য কী পদক্ষেপ নিতে হয়।

শিশুকে দোষারোপ করে এবং জনে জনে বারবার একই প্রশ্ন করে বড়রা তাকে সেই গর্তে ফেলে দেন, যে গর্ত থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায়।

যে ঘটনার পরিকল্পনা ফাঁদ পাতা ও বাস্তবায়ন—সবকিছুতে একজন বয়স্ক মানুষের হাত; তখন শিশুকে দোষারোপ করে তার মনের মধ্যে অপরাধবোধ চাগিয়ে তোলার কোনো যুক্তি নেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুটির ভোগান্তি বাড়ে।

ওই শিশুর ক্ষেত্রেও তা–ই ঘটেছিল। বড়রা কেউ বিশ্বাস করেননি। উল্টো শিশুটিকেই তাঁরা বকাবকি করেন। নিরুপায় শিশু তাই বোধ হয় মৃত্যুকেই তার শেষ আশ্রয়ের জায়গা মনে করেছিল।

আরও পড়ুনআপনাকে দেখেই কিন্তু শিখছে আপনার শিশু০৪ মে ২০২৪

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নির্যাতনের ঘটনা যদি ঘটে, তাহলে কখনো শিশুকে দায়ী করা যাবে না। তাকে মানসিকভাবে সমর্থন করতে হবে। তাঁর সামনে এ ঘটনা নিয়ে বারবার আলোচনা বা কান্নাকাটি করা যাবে না। এতে তার মানসিক সংকট চরমে পৌঁছে যায়।

এই সাত বছরের শিশুটির ক্ষেত্রেও তা–ই ঘটেছিল। শেষমেশ সে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভাগ্য ভালো, শিশুটি বেঁচে গিয়েছিল। পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল যৌন নির্যাতককে।

ছেলে শিশুরা যে সহজেই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে, সেটি অনেকের ধারণাতেই নেই। এই সুযোগটাই নেয় ছদ্মবেশী যৌন নির্যাতক বা পেডোফাইলরা।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২১ সালে আইন সালিশ কেন্দ্রের এক হিসাবে দেখা যায়, সে বছর (২০২১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত) মোট ৭৫ জন ছেলেশিশুকে ধর্ষণসহ যৌন হয়রানি করা হয়েছিল।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, সংখ্যাটি এর চেয়ে অনেক বেশি হবে। বছর পাঁচেক আগে একটি সংগঠনের সাতক্ষীরা আর ঢাকার ৯টি স্কুলে চালানো জরিপ থেকে দেখা যায়, প্রতি ১০ জনের একজন ছেলে যৌন নির্যাতন বা অশোভন আচরণের শিকার হয়।

শুধু মা–বাবা কেন, দেশের মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোও ছেলেশিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন বলে মনে হয় না। উদ্বিগ্ন হলে প্রকাশিত ভিডিও নিয়ে তাঁরা কথা বলতেন অথবা নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন তদন্তের ব্যবস্থার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসতেন।

এই জরিপে বিভিন্ন বয়সের ও ক্লাসের মোট ১ হাজার ২০০ ছাত্র অংশ নিয়েছিল। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রির সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ছয়জন ছেলেশিশুর মধ্যে কমপক্ষে একজন যৌন হয়রানির শিকার। মেয়েশিশুদের মধ্যে এই হার প্রতি চারজনে একজন।

মেয়েশিশুরা যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাছের লোকজন যেমন আত্মীয়, শিক্ষক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে।

চট্টগ্রামে সেই শিশুর কথা আমরা পত্রিকায় জেনেছিলাম, যাকে ধর্ষণ করেছিল, সে শিশুটির নিকটাত্মীয়। পুলিশ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠায়।

অনেকে মনে করেন, দরিদ্র পরিবারের ছেলেশিশুরা একটু বেশি ঝুঁকিতে থাকে। অভিভাবকদের নজরদারির বাইরে থাকলেই শিশুরা যৌন নির্যাতনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সেখানে ধনী–গরিবের বিষয়টি গৌণ।

শিশু নির্যাতনবিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে একজন ভারতীয় বক্তার জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় জানতে পারি, মা–বাবার অর্থের অভাব না থাকায় দেশের অত্যন্ত সম্মানিত ও কাঙ্ক্ষিত বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়েছিল তাঁর।

স্কুলের ছুটিতে বাড়ি এলে ব্যস্ত মা–বাবা অধিকাংশ সময় তাকে গৃহভৃত্যের কাছে রেখে বাইরে যেতেন। গৃহভৃত্য সেই সুযোগে নিয়মিত এই অবোধ কিশোরকে ধর্ষণ করেছেন।

বোর্ডিং স্কুল ছুটির সময় আর সব ছেলে যখন আনন্দে মেতে উঠত, কিশোরটি মনেপ্রাণে চাইত ছুটি যেন না হয়, তাকে যেন বাড়িতে যেতে না হয়।

শিশুর সম্ভাব্য যৌন নির্যাতন ও যৌন হেনস্তার ক্ষেত্রে একজন মা তাঁর মেয়ে সন্তানকে নিয়ে যত উদ্বিগ্ন–উৎকণ্ঠায় থাকেন, ছেলেকে নিয়ে ততটাই নিরুদ্বেগ নিশ্চিন্তে থাকেন। একজন মা জানান, ‘ছেলেকে নিয়ে আমার অন্য ভয়; তাকে কেউ তুলে নিয়ে যাবে না তো! তাকে কেউ ফুসলিয়ে নিয়ে বা জোর করে যৌন নির্যাতন করবে, এটা কখনো হয় নাকি? আমরা শুনি, মেয়েরাই কেবল এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়।’

শুধু মা–বাবা কেন, দেশের মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোও ছেলেশিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন বলে মনে হয় না। উদ্বিগ্ন হলে প্রকাশিত ভিডিও নিয়ে তাঁরা কথা বলতেন অথবা নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন তদন্তের ব্যবস্থার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসতেন।

হতে পারে নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামজাদা শিক্ষক বলেই সবাই চুপ আছেন। কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন এসব ‘এআই’–এর কীর্তি। সেটি হলেও তদন্তের কোনো বিকল্প নেই।

গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক। ই–মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ