পাবনায় ৫ জুয়েলারি দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি
Published: 4th, December 2025 GMT
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় নৈশ প্রহরীকে বেঁধে রেখে পাঁচ জুয়েলারি দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার অষ্টমনিষা বাজারের পাঁচটি জুয়েলারি দোকানে চুরি হয়।
আরো পড়ুন:
শরীয়তপুরে চিকিৎসক দম্পতির বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাকসহ ৩০টি গরু লুট
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের পূর্ব দিকে আঁখি জুয়েলার্স, মা জুয়েলার্স, মধু জুয়েলার্স, উত্তম জুয়েলার্স ও মাতৃ জুয়েলার্স স্বর্ণের দোকান। প্রতিদিনের মতো দোকানের কাজকর্ম সেরে দোকান তালাবদ্ধ রেখে চলে যান ব্যবসায়ীরা। রাত ২টার দিকে গুমানী নদী দিয়ে একটি স্পিডবোটে করে ১২-১৫ জনের ডাকাতদল প্রথমে অষ্টমনিষা বাজারে নামে। তারপর বাজারে থাকা তিনজন নৈশ প্রহরীকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে তারা। এরপর একে একে পাঁচটি জুয়েলারি দোকানে তালা কেটে ভেতরে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, আঁখি জুয়েলার্সের ২০ ভরি সোনা, ১৮০ ভরি রুপা ও নগদ ২০ হাজর টাকা; মা জুয়েলার্সের ১১ ভরি সোনা, ৩০০ ভরি রুপা ও নগদ ৪০ হাজার টাকা; মধু জুয়েলার্সে ৫ ভরি সোনা, ৩ লাখ নগদ টাকা ও ২০০ ভরি রুপা; উত্তম জুয়েলার্সে ১২ ভরি সোনা, ১৫ লাখ টাকা ও ১০০ ভরি রুপা এবং মাতৃ জুয়েলার্সে আড়াই ভরি সোনা, ২৫ ভরি রুপা ও দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতদল।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী রতন কর্মকার বলেন, ‘‘রাত ২টার দিকে আমার বাসায় গিয়ে গেটে শব্দ করে ডাকাডাকি শুরু করে ডাকাতদল। তারা নিজেদের প্রশাসনের লোক বলে পরিচয় দেয়। এরপরও বাড়ির গেট খুলিনি।’’
আঁখি জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী আত্তাব আলী বলেন, ‘‘আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।’’ মা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ আলী বলেন, ‘‘অনেক টাকা ঋণ করে দোকান করেছি। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’’
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে ভোরে ডাকাতি হওয়া দোকান ও এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত করবে।’’
বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কেউ থানায অভিযোগ দেয়নি বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘‘ডাকাতির ঘটনা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন টিম কাজ করছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/শাহীন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ক তদল ত ব যবস ব যবস য ও নগদ
এছাড়াও পড়ুন:
পার্বত্য চুক্তি কোন সরকারের সময়ে কতটুক বাস্তবায়ন হয়েছে
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আকাশ-পাতাল ভিন্নমত রয়েছে। এমনিতে চুক্তি নিয়েও নানা মতের কথা আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) ২৮ বছর আগে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে দেড় দশকের বেশি ক্ষমতায় ছিল।
বিগত সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্য ধারাগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অঙ্কের হিসাবে ৯০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন শেষ এবং ১০ শতাংশ প্রক্রিয়াধীন। অন্যদিকে পিসিজেএসএসের বিবৃতিতে বরাবরই চুক্তি বাস্তবায়নে হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরা হয়। এবারের (চলতি বছরের) বিবৃতিতে পিসিজেএসএস বলেছে, চুক্তি স্বাক্ষরের ২৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও দুই–তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত রয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৩৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। তাহলে কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা?
আরও পড়ুনপার্বত্য মন্ত্রণালয় ও জেলা পরিষদের ক্ষমতা এবং ক্ষমতায়ন নিয়ে কিছু কথা১৬ অক্টোবর ২০২৫পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য শান্তিচুক্তি হয়েছে। যদি ৯০ শতাংশ চুক্তি বাস্তবায়ন হয়ে থাকে, অশান্তিও ৯০ শতাংশ দূর হওয়ার কথা! কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে কি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বাস্তবতা মেলে?
খাগড়াছড়ি জেলা শহরে ও গুইমারায় সেপ্টেম্বরের ঘটে যাওয়া ঘটনা, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কাজ না দেওয়া, গত মাসে রাঙামাটিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থাই প্রমাণ করে শান্তি ফিরে আসেনি। শুধু অশান্ত পরিস্থিতিকে চাপা দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এমনিতে পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে এখানে ‘সিকিউরিটি’ আছে, ‘সেফটি’ নেই অবস্থা।
তাহলে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের চিত্র এবং কোন সরকারের সময়ে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, খতিয়ে দেখা যেতে পারে। চুক্তি বাস্তবায়নের তিনটি ধাপ বা স্তর রয়েছে। প্রথমত, প্রস্তুতিমূলক কাজ, দ্বিতীয়ত, চুক্তি বাস্তবায়ন ও তৃতীয়ত, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ। দেখা যায়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে গঠন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, চুক্তি পরিবীক্ষণ কমিটি, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন।
চুক্তির আগে জাতীয় পার্টি পাঁচটি বিভাগ ও বিএনপি ১৯৯৩ সালে ১০টি বিভাগ হস্তান্তর করে। পরে বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ২০০৬ সালে আর চারটি বিভাগ হস্তান্তর করেছে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারে ২০০৯ সালে ক্ষমতা এলেও ২০১২ সালের আগে কোনো বিভাগ জেলা পরিষদে হস্তান্তর করেনি।এটি মূলত চুক্তি বাস্তবায়নের প্রস্তুতিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির কাজ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু প্রস্তুতিমূলক কাজ করার পরে আওয়ামী লীগ সরকার আর চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ করেনি। চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হলো আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদে সরকারি বিভাগ হস্তান্তর ও পরিষদগুলোকে ক্ষমতায়নের জন্য বিধিবিধান প্রণয়ন।
এই পর্যন্ত হস্তান্তরিত বিভাগগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শান্তিচুক্তির আগে ও পরে ২৯টি বিভাগ, দপ্তর ও দপ্তরবিহীন বিষয় জেলা পরিষদে হস্তান্তর হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিএনপি সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ১৩টি সরকারি বিভাগ জেলা পরিষদে হস্তান্তর হয়েছে। শান্তিচুক্তির আগে ছিল স্থানীয় সরকার পরিষদ (১৯৮৯ সালে গঠিত স্থানীয় সরকার পরিষদ চুক্তির পরে ১৯৯৮ সালে জেলা পরিষদে রূপান্তর হয়েছে)।
ওই সময় থেকে হিসাব করলে চুক্তির আগে জাতীয় পার্টি পাঁচটি বিভাগ ও বিএনপি ১৯৯৩ সালে ১০টি বিভাগ হস্তান্তর করে। পরে বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ২০০৬ সালে আর চারটি বিভাগ হস্তান্তর করেছে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারে ২০০৯ সালে ক্ষমতা এলেও ২০১২ সালের আগে কোনো বিভাগ জেলা পরিষদে হস্তান্তর করেনি।
আবার জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় সরকার পরিষদের সময়ে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি সরকারের হস্তান্তরিত বিভাগগুলোর কিছু দপ্তরকে বিভাগ দেখিয়ে হস্তান্তর করেছে। যেমন কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সরকারি শিশু পরিবার। এগুলো প্রকৃতপক্ষে কৃষি, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত দপ্তর। মূল বিভাগ হস্তান্তর হলে ওই দপ্তরগুলো হস্তান্তরের প্রয়োজন নেই।
এ ছাড়া ২০১৩ ও ২০২৪ সালে জুমচাষ, মহাজনি কারবার, জন্ম–মৃত্যু ও অন্যান্য পরিসংখ্যান, স্থানীয় শিল্প-বাণিজ্যের লাইসেন্স—দপ্তরবিহীন কিছু বিষয় হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু দপ্তরগুলোর বর্তমানে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর চুক্তি কার্যকর করার জন্য কোনো নির্বাহী আদেশ দেওয়া হয়নি। এ জন্য জেলা পরিষদ থেকে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য বারবার চিঠি দিয়েও প্রশাসনের কর্মকর্তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। পর্যটন করপোরেশন ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের হস্তান্তর চুক্তি হয়েছে, কিন্তু এখনো কার্যকর করা যায়নি। জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভাগ হস্তান্তরের চুক্তিগুলো দুর্বল ও আমলাতান্ত্রিক ফাঁকফোকরে জটিল।
জেলা পরিষদের আইনের ২২ ও ২৩ ধারা অনুযায়ী সরকার জনস্বার্থে যেকোনো বিভাগ ও বিষয় জেলা পরিষদে হস্তান্তর করতে পারে। এ ছাড়া মৌলিক কিছু বিষয় আইনশৃঙ্খলা, স্থানীয় পুলিশ, ভূমি প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ ও অন্যান্য বিভাগ হস্তান্তরের কথা থাকলেও এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। জেলা পরিষদ ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালা না হওয়ায় ক্ষমতায়ন হচ্ছে না। সেগুলো হস্তান্তরসহ চুক্তি বাস্তবায়নে স্বাক্ষরকারী আওয়ামী সরকারের দায় বেশি বলে জনসংহতি সমিতির নেতারা প্রায় সময় বলে থাকেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৯৭ সালে চুক্তির সময়ে লংমার্চ করে বিরোধিতাকারী বিএনপি চুক্তি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি বিভাগ হস্তান্তর করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন হবে। বিএনপির কি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে কোনো কিছু থাকবে? বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মনোনীত খাগড়াছড়ির প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে হয়তো সরাসরি কিছু থাকবে না। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সম্পর্কে ইশতেহারে অবশ্যই থাকবে।
বুদ্ধজ্যোতি চাকমা প্রথম আলোর বান্দরবান প্রতিনিধি
*মতামত লেখকের নিজস্ব