আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালন করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আসন্ন নির্বাচনকে দেশের জন্য শত বছরের ভিত্তি নির্মাণের সুযোগ উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের ওপর যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হোন। জীবনের শেষে যখন আমরা ভাবব, কী করেছি—তখন এটিই প্রথমে আসা উচিত যে আমরা এই বিল্ডিং কোড তৈরিতে অংশ নিতে পেরেছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভূমিকম্প হলে আমরা বিল্ডিং কোড মানা হয়েছে কি না তার কথা বলি। এই নির্বাচন আমাদের সমাজের জন্য সেই বিল্ডিং কোড তৈরি করার সুযোগ। এমন একটি কোড তৈরি করতে হবে, যা যত বড় ঝাঁকুনিই আসুক, নড়বে না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু পাঁচ বছরের একটি প্রচলিত নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি এবার একটি গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘গণভোট আরও বড় বিষয়—এটা সেই “বিল্ডিং কোড”। আমরা যে বিল্ডিং কোড স্থাপন করব, সেটাই আগামী এক শ বছর জাতিকে পথ দেখাবে।’

প্রধান উপদেষ্টা জানান, নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসপিদের পদায়নে দৈবচয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এটি সহজভাবে নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বক্তব্য দেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম।

আমাদের কাজ হবে ধাত্রীদের মতো

আসন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ জন্ম নেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের কাজ হবে ধাত্রীদের মতো—একটি নতুন জাতির জন্ম দিতে সহায়তা করা।’ তিনি বলেন, এই নির্বাচন বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ‘পর্যবেক্ষকেরা বাইরে থেকে এসে ত্রুটি খুঁজতে চাইবে। কিন্তু এমন একটি (স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর) নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে, যা তারা উদাহরণ হিসেবে বহন করে বহু দেশে আলোচনা করবে।

গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী স্বপ্নের নির্বাচন

প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘এটি গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী নির্বাচন। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছিল এবং আমরা যারা সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত—এই নির্বাচন তাদের আদর্শ ও স্বপ্নপূরণের মাধ্যম।’ যে স্বপ্নের জন্য তারা জীবন দিয়েছে, সে স্বপ্ন এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।

সেবার মান বাড়াতে ও কর্মসম্পাদনে সৃজনশীলতা দেখাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেরা কর্মসম্পাদনকারী কর্মকর্তাকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসকে (১৭) স্মরণ করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি আনাসের চিঠি উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমি স্বার্থপরের মতো বসে থাকতে পারি না। আমি যদি ফিরতে না পারি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।’

কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর উপদেষ্টা বলেন, ‘তার (আনাসের) কথাই আমাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে। আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আনাস যেভাবে বলেছিল কাপুরুষের মতো বসে থাকতে চায় না—আমরাও বসে থাকতে চাই না। তার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। সেটিই আমাদের দায়িত্ব।’ তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের আগামী তিন মাস নিরলসভাবে কাজ করে আনাসের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

সভায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন এবং জামালপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মোহাম্মদ জাবের সাদেক বক্তব্য দেন।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ কর মকর ত দ র আহ ব ন জ ন র জন য আম দ র অন ষ ঠ আসন ন

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন যাচ্ছেন যারা

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর অথবা শুক্রবার সকালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।

আরো পড়ুন:

আরো ৩৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা: এভারকেয়ারের সামনে থেকে গুজবের ছড়াছড়ি

দেশ ও দেশের বাইরের বেশ কয়েকজন চিকিৎসকসহ ১৪ জন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন বলেও জানান ডা. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে উনার চিকিৎসার তদারকি করছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চেয়েছেন।”

খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন হলেন— পুত্রবধূ সৈয়দা শামীলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. ফখরউদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. নূরুদ্দিন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল ও আল মামুন। বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) সদস্য হাসান শাহরিয়ার ইকবাল ও সৈয়দ সামিন মাহফুজ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী আব্দুল হাই মল্লিক ও সহকারী একান্ত সচিব মাসুদার রহমান।

এছাড়া গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও রূপা সিকদারও খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়ায় তার অবস্থা সংকটময় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার থেকে খালেদা জিয়াকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে চিকিৎসকরা নিবিড়ভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এই বোর্ডে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরাও রয়েছেন। এছাড়া গতকাল বুধবার এই মেডিকেল বোর্ডে যুক্তরাজ্য এবং চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দুইটি দল যোগ দিয়েছে।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ