ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে মারধরের শিকার সেই রিকশাচালককে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ
Published: 4th, December 2025 GMT
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার ও মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনায় গত এপ্রিল মাসে করা হত্যাচেষ্টা মামলায় আজিজুরকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। বর্তমানে তিনি এ মামলায় জামিনে আছেন।
সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক তৌহিদুর রহমান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক বাসার জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (এ) ধারায় গত ২৬ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অন্তর্বর্তী বা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। বিচারক এখনো আদেশ দেননি।
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে এবং আরও বিস্তারিত তদন্ত করে আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এই মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাঁকে আপাতত ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৭৩ (এ) ধারায় অব্যাহতি দেওয়া সমীচীন। ভবিষ্যতে তাঁর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া গেলে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের সময় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে পুলিশ ও বিজিবির সতর্ক অবস্থান। ১৮ নভেম্বর, ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাজি সেলিম রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, জানালেন তদন্ত কর্মকর্তা
রাজধানীর শাহবাগ থানার চানখাঁরপুল এলাকায় ঝুট ব্যবসায়ী মনির হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিমকে চার দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমান্ডে ইশারায় মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মাইনুল ইসলাম খান পুলক।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম এ আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক জিন্নাত আলী জানান, গত ২০ অক্টোবর হাজি সেলিমের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। কয়েক দিন আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে রাখার আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার ১২ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি হাজি সেলিমকে ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ‘বাক্প্রতিবন্ধী’ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি ইশারায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যা মামলার তদন্তে সহায়ক হবে। আসামির দেওয়া তথ্য মামলার তদন্তের স্বার্থে যাচাই–বাছাই অব্যাহত আছে। মুক্তি পেলে আসামির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিকে আবার রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, অসুস্থতাজনিত কারণে হাজি সেলিমের কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট শাহবাগ থানার চানখাঁরপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন ক্ষুদ্র ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির। দুপুরে ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ ঘটনায় মনিরের স্ত্রী এ বছরের ১৪ মার্চ শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজার এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে হেরে যান।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হাজি সেলিম। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজি সেলিম প্রার্থী হননি। তাঁর বদলে ছেলে সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিমকে ঢাকা-৭ আসন থেকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি নির্বাচিতও হয়েছিলেন।
হাজি সেলিম ও তাঁর স্ত্রী গুলশান আরার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। বিচারিক আদালত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল ওই মামলায় রায় দেন। রায়ে তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০২২ সালে ওই মামলায় হাজি সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। কিছুদিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত তাঁকে জামিন দেন।