উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করা পর্যন্ত নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাবে এবং উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকও নিয়মিত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। 

এতে বলা হয়, গতকাল (রবিবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য রিপোটার্স অনুষ্ঠানে দেওয়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। 

বস্তুত, সরকারের গৃহীত সংস্কার ও নীতিমালা প্রণয়নের কাজ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে এটা সঠিক নয়, বরং সংস্কার কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে চলমান থাকবে। 

এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করা পর্যন্ত নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাবে এবং উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকও নিয়মিত অনুষ্ঠিত হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে গতকাল (২৬ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য রিপোটার্স প্রোগ্রাম অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “নভেম্বরের পর মন্ত্রিসভার (উপদেষ্টা পরিষদের) বৈঠক আর হবে না, তখন সরকার নির্বাচন কমিশনের অধীনে তার ভূমিকা পালন করবে।”

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট অন ষ ঠ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মিনহাজের বিদায়: এই মনোবেদনা রাখিব কোথায়

ম্যাথ ক্যাঙারুর বার্ষিক সভা থেকে দেশে ফিরে আবার দুই দিনের সফরে জামালপুর-ময়মনসিংহের উদ্দেশে বের হয়ে পড়ি। সেখান থেকে ২৩ অক্টোবর অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা রওনা হই। রাত সোয়া ৯টার দিকে হোয়াটসঅ্যাপে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার শিহাবের একটি বার্তা আসে, একটি ছবি সংযুক্ত। ট্রেনের দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে ছবিটি তখন খুলতে পারিনি। প্রায় এক ঘণ্টা পর নেটওয়ার্ক ফিরে এলে ছবিটি খুলে দেখি। সদা হাস্যময় মিনহাজের মুখ। একমুহূর্তের জন্য বুঝতে পারিনি, এটি এক মনোবেদনার সংবাদ।

আমাদের প্রিয় সৈয়দ মোহাম্মদ মিনহাজ হোসাইন আর নেই! (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)

আমি হতবিহ্বল হয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি। বিশ্বজিৎ চৌধুরী ২৪ অক্টোবর বিকেলে মিনহাজকে স্মরণ করার সভায় উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছেন। তখনই বুঝতে পারি, বিদেশে থাকায় আমি মিনহাজের এই অকাল প্রয়াণের খবর সময়মতো জানতে পারিনি।

রাতের অন্ধকার চিরে ট্রেন এগিয়ে চলে, আর আমার মন ফিরে যায় বছর দশেক আগে এক দিনে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নেমে আমরা কয়েকজন যাচ্ছি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির উদ্দেশে। সঙ্গে আছে তরুণ মিনহাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের এক উদ্যমী প্রভাষক। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে অনেক দূরে চন্দনাইশের সেই ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেখি, উৎসবমুখর পরিবেশ। ল্যাবে চলছে প্রতিযোগিতা, বাইরে নানা আয়োজন। শিক্ষক–‍শিক্ষার্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি। সেদিন দেখা হয়েছিল আমার প্রিয় শিক্ষক চট্টগ্রাম কলেজের অজিত স্যারের সঙ্গেও। আর মিনহাজ ব্যস্ত ছিল তার দায়িত্বে। সম্ভবত সেটিই ছিল আমাদের প্রথম পরিচয়।

এরপর দেখি, মিনহাজ আমাদের প্রথম আলো বন্ধুসভা চট্টগ্রাম শাখার সদস্য। গণিত অলিম্পিয়াডের কাজ করতে গিয়ে সারা দেশের বন্ধুসভার অনেক উদ্যমী, দেশপ্রেমী তরুণের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, মিনহাজ তাদের অন্যতম।

পরে নানা সময় ফোনে, ই–মেইল বা মেসেজে মিনহাজের সঙ্গে কথা হয়েছে, দেখা হয়েছে, কাজ হয়েছে। সব সময়ই তার চিন্তা ছিল, ছেলেমেয়েদের জন্য কী করা যায়। বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি থাকার সময় বন্ধু উৎসব, তারুণ্যের উৎসব—এসব আয়োজনে ছিল তার উজ্জ্বল উপস্থিতি।

নজির আহমেদ চৌধুরী রোডে মিনহাজদের একান্নবর্তী পরিবারের সবার বসবাস। সেখান থেকেই ১৯ অক্টোবর ২০২৫ সকালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল মিনহাজ। সেটিই ছিল তার শেষ যাত্রা। নিজের মেয়ে ও স্ত্রীর কাছে আর ফেরা হলো না মিনহাজের।

চট্টগ্রামের জন্য তার ভাবনা ছিল অবিরাম।

এরই মধ্যে সে যোগ দেয় চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেও তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিক্ষার্থীরা। সৈয়দ মোহাম্মদ মিনহাজ হোসাইন ছিল চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) পিএইচডি গবেষক। চুয়েট থেকে তার এমএসসি ও বিএসসি ডিগ্রি। তার গবেষণার ক্ষেত্র ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, কম্পিউটার ভিশন ও পরিবেশবিজ্ঞান। মিনহাজ ২০২৪ সালে বেস্ট রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড এবং ইউজিসি পিএইচডি ফেলোশিপ অর্জন করেন। তার গবেষণা বহু আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সে প্রকাশিত হয়েছে।

আমার সঙ্গে যখনই আলাপ হয়, তখনই শুনি কোনো না কোনো আয়োজনের কথা। মিনহাজের উৎসাহেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি কমিটির সদস্য হই, কারিকুলাম সভায় যোগ দিই, এমনকি অ্যাক্রেডিটেশন ভিজিটেও উপস্থিত থাকি।

মিনহাজ একাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করত। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার ক্লাবের প্রোগ্রামিং উইংয়ের মডারেটর এবং আইইইই প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ব্র্যাঞ্চের মেন্টর হিসেবে তার ব্যস্ততার কমতি ছিল না।

মিনহাজ নিজের কথা খুব কম বলত। সব সময় বন্ধুসভা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রসঙ্গ। পরিচয়ের বহু বছর পর জানতে পারি, তার দাদি আর আমার ছোট দাদি সহোদরা। আমরা দুজনই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা এলাকার সন্তান।

মিনহাজের বাবা আমার চাচা হলেও পাড়ার অন্যদের মতো আমিও তাঁকে ভাই ডাকতাম। মিনহাজ সব সময় আমাকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করত কেন জানি না।

মনে করার চেষ্টা করছিলাম, হয়তো ছোটবেলায় ওর বাবার কাঁধে মিনহাজকে দেখেছি। এমইএস স্কুলের মাঠে যখন আমরা ক্রিকেট খেলতাম, তখন হয়তো ছোট্ট মিনহাজও দর্শক হয়ে থাকত।

নজির আহমেদ চৌধুরী রোডে মিনহাজদের একান্নবর্তী পরিবারের সবার বসবাস। সেখান থেকেই ১৯ অক্টোবর ২০২৫ সকালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল মিনহাজ। সেটিই ছিল তার শেষ যাত্রা। নিজের মেয়ে ও স্ত্রীর কাছে আর ফেরা হলো না মিনহাজের।

মাস কয়েক আগে ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। আলোচনার বিষয়—চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিংয়ে আরও ভালো করতে পারে। তখন সে জানায়, সে এখন বিভাগের চেয়ারম্যান। শুধু প্রিমিয়ার নয়, চট্টগ্রামের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং টিম নিয়ে একটি বুটক্যাম্প আয়োজন করতে চায়। আমি যেন আয়োজনে সাহায্য করি। নানা ব্যস্ততায় সেই আয়োজন পিছিয়ে যায়। কে জানত, মিনহাজ সেই স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারবে না!

সেই থেকে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। মিনহাজ আমার প্রায় ২০ বছরের ছোট। ওর এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কী দরকার ছিল!

মহান আল্লাহ তাআলার পরিকল্পনা আমরা জানি না। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।

আল্লাহ তাআলা মিনহাজকে জান্নাতবাসী করুন।

কিন্তু এ মনোবেদনা আমি রাখব কোথায়!

মুনির হাসান প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক

সম্পর্কিত নিবন্ধ