বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. ছোলায়মান আলী ফকির গবেষণার ভিত্তিতে বলেছেন, রোজেলা (চুকাই) পানীয় সম্পূর্ণ ক্যাফেইনমুক্ত। এটি চা-কফির বিকল্প স্বাস্থ্যকর পানীয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রোজেলা থেকে উৎপন্ন পানীয়ের গুণাগুণ তুলে ধরেন মো.

ছোলায়মান আলী ফকির। তিনি ‘রোজেলা উদ্ভিদের পাতা ও বৃতি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রধান গবেষক। তাঁকে গবেষণাকাজে সহযোগিতা করেছেন ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী স্বাগত ইসলাম ও আফিয়া মারিয়াম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলনকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান গবেষক বলেন, চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন বেশি মাত্রায় গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রোজেলায় আছে অর্গানিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন (অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট; যেগুলো শরীর নিজে উৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শুকনা বৃতির প্রতি গ্রামে অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৬০ থেকে ১ দশমিক ৮৬ গ্রাম। অন্যান্য ফল ও সবজিতে এসব উপাদান বিশেষ করে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট অন্যান্য মৌলের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকলেও রোজেলায় থাকে মুক্ত অবস্থায়। তাই রোজেলায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এটি শরীরে প্রতিদিন উৎপন্ন হওয়া টক্সিক উপাদানের বিরূপ প্রভাব কমাতে কার্যকর। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, ‘দেশে যে রোজেলা পানীয় বা রোজেলার শুকনা বৃতি বাজারে পাওয়া যায়, তার দাম সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশি। অথচ এই উদ্ভিদ সামান্য পতিত জমিতেই ভালো জন্মে। খরচও খুব কম।’ তিনি ১৯৯০ সাল থেকে রোজেলা বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোজেলার বৃতি থেকে লাল রঙের চা বাজারে থাকলেও সবুজ রোজেলার চা এখনো প্রচলিত নয়। তাই এটির সঙ্গে লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে মুখরোচক চা তৈরি করেছে গবেষক দল। সংবাদ সম্মেলনে রোজেলার চার ধরনের পানীয় উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি লাল ও সবুজ রোজেলা থেকে তৈরি আচার, পাতার গুঁড়া, রোজেলা পানীয় ও মসলা পানীয় প্রস্তুতপ্রণালিও দেখানো হয়।

পানীয়টির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, তা জানতে চাইলে প্রধান গবেষক বলেন, এমন কিছু তাঁরা পাননি।

চাষের দিক থেকে রোজেলাকে বিশেষভাবে সম্ভাবনাময় একটি ফসল হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান গবেষক। তিনি বলেন, ‘এটি লবণাক্ত জমিতেও জন্মে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ বহু এলাকায় এর পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রোজেলার বৃতি থেকে জ্যাম, জেলি, চা, আচার, চাটনি, জুসসহ বহু পণ্য তৈরি করা যায়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্যও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে এটি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান প্রামাণিক, অধ্যাপক মো. আশরাফুজ্জামান, অধ্যাপক আ খ ম গোলাম সারওয়ার, অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শাহানারা বেগম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল উদ ভ দ

এছাড়াও পড়ুন:

চা-কফির বিকল্প স্বাস্থ্যকর পানীয় রোজেলা, দাবি গবেষকের

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. ছোলায়মান আলী ফকির গবেষণার ভিত্তিতে বলেছেন, রোজেলা (চুকাই) পানীয় সম্পূর্ণ ক্যাফেইনমুক্ত। এটি চা-কফির বিকল্প স্বাস্থ্যকর পানীয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রোজেলা থেকে উৎপন্ন পানীয়ের গুণাগুণ তুলে ধরেন মো. ছোলায়মান আলী ফকির। তিনি ‘রোজেলা উদ্ভিদের পাতা ও বৃতি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রধান গবেষক। তাঁকে গবেষণাকাজে সহযোগিতা করেছেন ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী স্বাগত ইসলাম ও আফিয়া মারিয়াম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলনকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান গবেষক বলেন, চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন বেশি মাত্রায় গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রোজেলায় আছে অর্গানিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন (অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট; যেগুলো শরীর নিজে উৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শুকনা বৃতির প্রতি গ্রামে অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৬০ থেকে ১ দশমিক ৮৬ গ্রাম। অন্যান্য ফল ও সবজিতে এসব উপাদান বিশেষ করে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট অন্যান্য মৌলের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকলেও রোজেলায় থাকে মুক্ত অবস্থায়। তাই রোজেলায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এটি শরীরে প্রতিদিন উৎপন্ন হওয়া টক্সিক উপাদানের বিরূপ প্রভাব কমাতে কার্যকর। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, ‘দেশে যে রোজেলা পানীয় বা রোজেলার শুকনা বৃতি বাজারে পাওয়া যায়, তার দাম সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশি। অথচ এই উদ্ভিদ সামান্য পতিত জমিতেই ভালো জন্মে। খরচও খুব কম।’ তিনি ১৯৯০ সাল থেকে রোজেলা বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোজেলার বৃতি থেকে লাল রঙের চা বাজারে থাকলেও সবুজ রোজেলার চা এখনো প্রচলিত নয়। তাই এটির সঙ্গে লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে মুখরোচক চা তৈরি করেছে গবেষক দল। সংবাদ সম্মেলনে রোজেলার চার ধরনের পানীয় উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি লাল ও সবুজ রোজেলা থেকে তৈরি আচার, পাতার গুঁড়া, রোজেলা পানীয় ও মসলা পানীয় প্রস্তুতপ্রণালিও দেখানো হয়।

পানীয়টির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, তা জানতে চাইলে প্রধান গবেষক বলেন, এমন কিছু তাঁরা পাননি।

চাষের দিক থেকে রোজেলাকে বিশেষভাবে সম্ভাবনাময় একটি ফসল হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান গবেষক। তিনি বলেন, ‘এটি লবণাক্ত জমিতেও জন্মে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ বহু এলাকায় এর পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রোজেলার বৃতি থেকে জ্যাম, জেলি, চা, আচার, চাটনি, জুসসহ বহু পণ্য তৈরি করা যায়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্যও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে এটি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান প্রামাণিক, অধ্যাপক মো. আশরাফুজ্জামান, অধ্যাপক আ খ ম গোলাম সারওয়ার, অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শাহানারা বেগম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ