কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই-মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই সহকারীর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে থাকা সংবাদের বিস্তারিত তথ্য সংক্ষেপে জানার সুযোগ থাকা অনেকেই নিয়মিত এআইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য জেনে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) ও বিবিসির পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এআই সহকারীগুলো প্রায় ৪৫ শতাংশ সংবাদের বিষয়বস্তু ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। এই ভুল ভাষা বা অঞ্চল নির্বিশেষে দেখা গেছে। গবেষণায় ১৪টি ভাষার সংবাদ ব্যবহার করা হয় এবং ১৮ দেশের ২২টি গণমাধ্যম অংশ নেয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা চ্যাটজিপিটি, কোপাইলট, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটির প্রায় তিন হাজার প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করেন, যার মধ্যে রয়েছে নির্ভুলতা, উৎস, মতামত থেকে তথ্যের পার্থক্য ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ। দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন এআই টুলের মাধ্যমে পাওয়া প্রায় ৪৫ শতাংশ উত্তরে কমপক্ষে একটি ভুল রয়েছে। প্রায় ৩১ শতাংশ উত্তরে গুরুতর উৎসভিত্তিক সমস্যা রয়েছে, যেখানে অনেক সংবাদে উৎস অনুপস্থিত বা বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা পাওয়া গেছে গুগলের তৈরি জেমিনি এআইয়ে। এআই সহকারীটির ৭৬ শতাংশ উত্তরে উল্লেখযোগ্য ত্রুটি ছিল, যা অন্য এআই সহকারীগুলোর তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

অনেকেই এআই সহকারীকে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করছেন। রয়টার্স ইনস্টিটিউটের ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট ২০২৫ অনুসারে, অনলাইনে সংবাদ পড়েন, এমন গ্রাহকদের ৭ শতাংশ সংবাদ পেতে এআই সহকারী ব্যবহার করেন। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৫ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা এখন ১৫ শতাংশের মতো। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের মিডিয়া ডিরেক্টর ও ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জিন ফিলিপ ডি টেন্ডার বলেন, ‘গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন টুলসের ব্যর্থতা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এসব ভুল পদ্ধতিগত, আন্তসীমান্তনির্ভর ও বহুভাষিক। আমরা মনে করছি, এআইয়ের ভুল গণমাধ্যমের প্রতি জনসাধারণের আস্থাকে দুর্বল করছে। যখন লোকেরা কী বিশ্বাস করবে, তা জানে না, তখন তারা কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করে না। এতে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে বাধা তৈরি হতে পারে।’

বিবিসির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর পিটার আর্চার বলেন, ‘আমরা এআই ও তা কীভাবে দর্শকদের সামনে আরও বেশি মূল্য তৈরি করবে, তা নিয়ে আগ্রহী। পাঠকেরা আসলে লোকেরা যা পড়ে, দেখে তা বিশ্বাস করে। কিছু উন্নতি হলেও এটা স্পষ্ট যে অনেক এআই টুলসে সমস্যা রয়েছে। আমরা চাই এসব টুল সফল হোক। আমরা দর্শক ও বিভিন্ন এআই কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার জন্য আগ্রহী। এরই মধ্যে গবেষক দল এআই–সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য একটি টুলকিট তৈরি করেছেন।

সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এআই সহক র ব যবহ র সমস য এআই স

এছাড়াও পড়ুন:

এআইয়ের যুগে দর্শনার্থী হারাচ্ছে উইকিপিডিয়া

ইন্টারনেটের উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার হিসেবে একসময় প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল উইকিপিডিয়ার। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) সার্চ ও চ্যাটবট প্রযুক্তির বিস্তারে এখন সেই অবস্থান চ্যালেঞ্জের মুখে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন সংস্থা উইকিমিডিয়া জানিয়েছে, এআই–চালিত সারাংশ ও কথোপকথনভিত্তিক চ্যাটবট ব্যবহারকারীদের সরাসরি তথ্য দিচ্ছে। ফলে মানুষ উইকিপিডিয়ার মূল সাইটে কম প্রবেশ করছেন। এর প্রভাব এরই মধ্যে স্পষ্ট। উইকিপিডিয়ার সার্বিক দর্শনার্থী বা ট্রাফিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

উইকিমিডিয়ার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন সার্চ মাধ্যম এখন এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন করছে যে ব্যবহারকারীর আর মূল উৎসে গিয়ে পড়ার প্রয়োজন হয় না। গুগল, ওপেনএআই বা অন্যান্য সার্চ সেবা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সংক্ষেপে ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরছে। ফলে ‘লিংকে না গিয়েই’ মানুষ তথ্য পাচ্ছেন, আর সেই সুযোগেই কমে যাচ্ছে উইকিপিডিয়ার পাঠকসংখ্যা। বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের জ্ঞানের ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত উইকিপিডিয়া এভাবে ধীরে ধীরে তার প্রভাব হারাচ্ছে। উইকিমিডিয়ার মতে, এটি শুধু দর্শক কমে যাওয়ার বিষয় নয়। এর সঙ্গে জড়িত মাধ্যমটির অস্তিত্ব ও আর্থিক অবস্থান টিকিয়ে রাখার প্রশ্নও।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের ছদ্মবেশে পরিচালিত নানা বটও এখন তাদের ওয়েবসাইটের বড় ট্রাফিক উৎসে পরিণত হয়েছে। এসব বট নিরাপত্তা ফিল্টার এড়িয়ে উইকিপিডিয়ার কনটেন্ট সংগ্রহ করছে এবং তা ব্যবহার করছে এআই–চালিত সার্চ ইঞ্জিন ও চ্যাটবটগুলো। চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রাজিল থেকে এমনই এক ট্রাফিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা হয়, যেখানে মানুষ ও বটের ট্রাফিকের পার্থক্য স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। উইকিপিডিয়া একা নয়, একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বড় বড় সংবাদমাধ্যমও। তাদের অভিযোগ, এআই সার্চ ইঞ্জিনগুলো সংবাদমাধ্যমের কনটেন্ট ব্যবহার করছে, কিন্তু পাঠকেরা মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন না। গুগল সম্প্রতি মুঠোফোন ও ওয়েব উভয় প্ল্যাটফর্মে এআই মোড চালু করেছে, যা সার্চ ফলাফলে সংক্ষিপ্ত সারাংশ দেখায়। ফলে মানুষ প্রাথমিক তথ্য সেখানেই পেয়ে যাচ্ছেন, মূল উৎসে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।

তবু উইকিপিডিয়া প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের বিপক্ষে নয়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি চাইছে পরিবর্তনের এই ধারায় নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে। উইকিমিডিয়া জানিয়েছে, তারা এখন নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, যাতে উইকিপিডিয়ার কনটেন্ট দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহৃত হয় এবং উৎস হিসেবে তার মর্যাদা বজায় থাকে। তরুণ প্রজন্মকে আরও সম্পৃক্ত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে তারা। এর মাধ্যমে কনটেন্টের বিস্তার ঘটিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে উইকিপিডিয়াকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র: নিউজ ১৮ ডটকম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এআইয়ের যুগে দর্শনার্থী হারাচ্ছে উইকিপিডিয়া