‘সংস্কারের বিপক্ষে ঐকমত্য কমিশনে আমরা অনেক দলকে অবস্থান নিতে দেখেছি। বিএনপি অনেকগুলো বড় সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। গোটা সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তারা (বিএনপি) চায় কি না, এটা নিয়ে এখন প্রশ্ন তৈরি হবে। পুরো সময়টায় দেখেছি আমরা, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি ভেটো দিয়েছে, বিরোধিতা করেছে।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে বিএনপির প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। আজ বুধবার বিকেলে রংপুরের পর্যটন মোটেলে দলীয় কর্মসূচি শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলা ও একটি মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য আজ সকালে নাহিদ ইসলাম ছাড়াও এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আতিক মুজাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরে আসেন। বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদ নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

অন্য সব দল ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে ও জনগণের ভেতরে একটা চাপ তৈরি হওয়ার কারণে কিছু সময় বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছিল বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বলব যে এখানে দলীয় অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে ঐকমত্য কমিশন ও গণ–অভ্যুত্থানের পরে যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে এর থেকে ভালো কোনো উপায় আমাদের সামনে নেই।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। দেশে একটা নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। স্থিতিশীলতা ও আস্থার প্রয়োজন, সে কারণে দ্রুত সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।’

গণ–অভ্যুত্থানের পর জনগণের অনেক প্রত্যাশা ছিল বলে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে দেশে। মানুষের মধ্যে একটা ভয় দেখতে পাচ্ছি। সবকিছু আগের মতো হয়ে যাচ্ছে কি না। নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ আসবে কি না, স্বৈরতন্ত্র আসবে কি না, মানুষের কথা বলার জায়গা থাকবে কি না, এসব নিয়ে।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশে নানামুখী সংকট আছে। আবার পতিত স্বৈরাচারী শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সঙ্গে নানা ধরনের বৈদেশিক শক্তি জড়িত। ফলে আমরা একটা সংকটের মুখে আছি। এই সংকটের মধ্যে আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।’

সংস্কার, বিচারের দাবিকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয়, সেটি টেকসই হবে না বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, একটি টেকসই ও স্থিতিশীল পরিবর্তনের জন্য সংবিধানের কিছু জায়গায় আমরা ঐকমত্য হয়েছি, ন্যূনতম এই সংস্কার নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সেখানে বাধা ও সরকার থেকে যদি গড়িমসি তৈরি হয়, তাহলে এই সরকারকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে থাকলেও সমঝোতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমরা রাজনীতি করব না। কিন্তু নির্বাচনের কৌশলগত কারণে বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কোনো ধরনের সমঝোতার প্রয়োজন হয়, আমরা সেটার জন্য রাজি আছি। কারও সঙ্গে জোট হবে কি হবে না, সেটার ওপর বসে বা নির্ভর করে নেই। আমরা আমাদের মতো করে কার্যক্রম করতেছি ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতেছি।’

বিভিন্ন দলের মধ্যে কলঙ্ক রয়েছে দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সেটা বিএনপি বলেন, অতীতে তাদের শাসনামল নিয়ে, দুর্নীতি নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। ৫ আগস্টের পরে তাদের অনেক সমালোচনা হয়েছে। একইভাবে জামায়াতেরও ঐতিহাসিক দায়ভার রয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও জামায়াতকে নিয়ে অনেক ধরনের সমালোচনা হয়েছে। ফলে সেই জায়গা থেকে এই ধরনের দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনে গেলে আমাদের ভাবতে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম অবস থ ন ঐকমত য আম দ র ধরন র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠক হয়ে গেল, সুপারিশ দেবে আগামীকাল

সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়–সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে। আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা পর্যন্ত সব ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও ও ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে, সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে—সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে, সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায়, তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’

এ সময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা। সমাপনী বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।

‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে’ উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইনবিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল, সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘চব্বিশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করব।’

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতার প্রত্যাশা করে। গণ–অভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো—এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়। এই সুযোগ যেন না হারাই।’

কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, একই রকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।’ পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য সফর রাজ হোসেন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এ ধরনের সৌহার্দ্য থাকে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘যতগুলো শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে আমাদের জানিয়েছে, সংস্কার নিশ্চিত করা না হলে তাদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে বলে তারা মনে করে। যারা জুলাইয়ে জীবন দিল তারাই এর মূল ভিত্তি।’

আগামীকাল দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়–সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে সরকার এগোলে স্বাক্ষরেও অগ্রগতি হবে: এনসিপি
  • জুলাই সনদ: রাজনীতিতে যে সংকট তৈরি করতে পারে
  • ইতিবাচকভাবে দেখছে জামায়াতে ইসলামী
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে সালাহউদ্দিনের প্রতিক্রিয়া
  • সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট করার সুযোগ নেই: বিএনপি
  • প্রধান উপদেষ্টার হাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ পেশ দুপুরে 
  • আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার করবে ৯ মাসে
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠক হয়ে গেল, সুপারিশ দেবে আগামীকাল