বিএনপি সংস্কার চায় কি না, এ নিয়ে এখন প্রশ্ন তৈরি হবে: নাহিদ
Published: 29th, October 2025 GMT
‘সংস্কারের বিপক্ষে ঐকমত্য কমিশনে আমরা অনেক দলকে অবস্থান নিতে দেখেছি। বিএনপি অনেকগুলো বড় সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। গোটা সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তারা (বিএনপি) চায় কি না, এটা নিয়ে এখন প্রশ্ন তৈরি হবে। পুরো সময়টায় দেখেছি আমরা, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি ভেটো দিয়েছে, বিরোধিতা করেছে।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে বিএনপির প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। আজ বুধবার বিকেলে রংপুরের পর্যটন মোটেলে দলীয় কর্মসূচি শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
রংপুর বিভাগের ৮ জেলা ও একটি মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য আজ সকালে নাহিদ ইসলাম ছাড়াও এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আতিক মুজাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরে আসেন। বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদ নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
অন্য সব দল ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে ও জনগণের ভেতরে একটা চাপ তৈরি হওয়ার কারণে কিছু সময় বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছিল বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বলব যে এখানে দলীয় অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে ঐকমত্য কমিশন ও গণ–অভ্যুত্থানের পরে যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে এর থেকে ভালো কোনো উপায় আমাদের সামনে নেই।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। দেশে একটা নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। স্থিতিশীলতা ও আস্থার প্রয়োজন, সে কারণে দ্রুত সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।’
গণ–অভ্যুত্থানের পর জনগণের অনেক প্রত্যাশা ছিল বলে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে দেশে। মানুষের মধ্যে একটা ভয় দেখতে পাচ্ছি। সবকিছু আগের মতো হয়ে যাচ্ছে কি না। নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ আসবে কি না, স্বৈরতন্ত্র আসবে কি না, মানুষের কথা বলার জায়গা থাকবে কি না, এসব নিয়ে।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশে নানামুখী সংকট আছে। আবার পতিত স্বৈরাচারী শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সঙ্গে নানা ধরনের বৈদেশিক শক্তি জড়িত। ফলে আমরা একটা সংকটের মুখে আছি। এই সংকটের মধ্যে আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।’
সংস্কার, বিচারের দাবিকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয়, সেটি টেকসই হবে না বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, একটি টেকসই ও স্থিতিশীল পরিবর্তনের জন্য সংবিধানের কিছু জায়গায় আমরা ঐকমত্য হয়েছি, ন্যূনতম এই সংস্কার নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সেখানে বাধা ও সরকার থেকে যদি গড়িমসি তৈরি হয়, তাহলে এই সরকারকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে থাকলেও সমঝোতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমরা রাজনীতি করব না। কিন্তু নির্বাচনের কৌশলগত কারণে বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কোনো ধরনের সমঝোতার প্রয়োজন হয়, আমরা সেটার জন্য রাজি আছি। কারও সঙ্গে জোট হবে কি হবে না, সেটার ওপর বসে বা নির্ভর করে নেই। আমরা আমাদের মতো করে কার্যক্রম করতেছি ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতেছি।’
বিভিন্ন দলের মধ্যে কলঙ্ক রয়েছে দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সেটা বিএনপি বলেন, অতীতে তাদের শাসনামল নিয়ে, দুর্নীতি নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। ৫ আগস্টের পরে তাদের অনেক সমালোচনা হয়েছে। একইভাবে জামায়াতেরও ঐতিহাসিক দায়ভার রয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও জামায়াতকে নিয়ে অনেক ধরনের সমালোচনা হয়েছে। ফলে সেই জায়গা থেকে এই ধরনের দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনে গেলে আমাদের ভাবতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম অবস থ ন ঐকমত য আম দ র ধরন র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধে ঢাবির ১৯৫ শহীদের ইতিহাস জানাতে ছাত্রদল নেতার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতা।
রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শহীদের নাম ও পরিচয় লেখা ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেন তিনি।
এই কর্মসূচির উদ্যোগ নেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু হায়াত মো. জুলফিকার। তিনি ক্যাম্পাসের টিএসসি প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সম্মুখভাগ, হাকিম চত্বর, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন প্রাঙ্গণ, মল চত্বর, ভিসি চত্বর, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, আইন অনুষদ প্রাঙ্গণ, মোতাহার হোসেন ভবন, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার, কার্জন হল এলাকা, দোয়েল চত্বর, চারুকলাসহ প্রতিটি আবাসিক হলসংলগ্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের নাম ও পরিচয় লেখা ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেন।
এ বিষয়ে জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৯৫ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হন। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাঁদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ত্যাগ ও অবদান অনেকাংশে তরুণ প্রজন্মের আড়ালে চলে যাচ্ছে। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই শহীদদের নাম-পরিচয় ও তাঁদের আত্মোৎসর্গের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই তিনি এ উদ্যোগ নেন।
আবু হায়াত মো. জুলফিকার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের শহীদেরা কেবল ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ কোনো নাম নন; তাঁরা আমাদের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার ভিত্তি। তাঁদের আত্মত্যাগকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের ইতিহাস সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য।’
মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শহীদের ইতিহাস জানানোর ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কাজ যেন অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী শাহরিয়ার তানজিল বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতিসত্তা, চেতনা ও প্রেরণার এক অমলিন উৎস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে ১৯৭১ সালে ১৯৫ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারী প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।’
শাহরিয়ার তানজিল বলেন, ‘এই আত্মত্যাগ আমাদের জন্য যেমন গভীর বেদনার, তেমনি এটি সাহস, দায়িত্ববোধ ও অনুপ্রেরণার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্ল্যাকার্ড স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের স্মরণ করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’