সাড়ে ৩ ঘণ্টায় খুলনা থেকে ঢাকা, যাত্রাবাড়ীতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা
Published: 30th, October 2025 GMT
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় খুলনা থেকে বাস চালিয়ে দুপুর সাড়ে বারোটায় যাত্রাবাড়ী পৌঁছেছেন চালক রমজান আলী। দুপুর দেড়টার দিকেও তাঁকে আটকে থাকতে দেখা যায় যাত্রাবাড়ী উড়ালসড়কের গুলিস্তান টোল প্লাজায়। চোখমুখে ক্লান্তি। মাঝেমাঝেই এলোপাতাড়ি হর্ন দিচ্ছিলেন। তাতে অবশ্য কাজ হচ্ছিল না। বাসের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখা গেল, প্রায় সব যাত্রীর চোখেমুখে ক্লান্তি আর বিরক্তির ছাপ।
রমজান বললেন, ‘সাড়ে তিন ঘণ্টায় গাড়ি ঢাকায় আনলাম। কিন্তু আগে আগে ঢাকা পৌঁছে তো লাভ হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্লাইওভারেই বসে থাকি।’
৪ অক্টোবর বেলা ১১টা। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে গুলিস্তানগামী একটি পরিবহন প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে যাত্রাবাড়ী মোড়েই দাঁড়িয়ে আছে। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, সামনে সারি সারি বাস, ট্রাক, রিকশা এবং মোটরসাইকেল থেমে আছে। বিরক্ত হয়ে অনেক যাত্রীই বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন। বাস থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে দেখা গেল, বিপরীত পাশের সড়কে বিরাট আকারের একটি কার্গো ট্রাক দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে উল্টে পড়ে আছে। সেটিকে টেনে তোলার কাজ চলছে। সড়কের ওই লেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই লেনের যানবাহনগুলো হঠাৎই উল্টো সড়কে চলে এসেছে। ফলে যাওয়া–আসা উভয় দিকের রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে। সেই জট ছড়িয়ে পড়েছে যাত্রাবাড়ীর অলিগলিতেও।
৪ অক্টোবর রাত ১০টা। মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ীগামী একটি পরিবহন আটকে আছে সায়েদাবাদ রেলগেটের কিছুটা আগে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে গাড়ি নড়ছেই না। মধ্যবয়সী একজন যাত্রী বিরক্ত মুখে বারবার জানালা দিয়ে সামনে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বেশ কয়েকবার উঁকি দিয়ে পাশের যাত্রীকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘দেখেন, একটাও গাড়ি নেই, সব অটো (ব্যাটারিচালিত রিকশা)। রাস্তাটা কেমনে আটকায়ে রাখছে দেখেন।’
সারা দেশের প্রায় ৪০টি জেলার যানবাহন প্রতিদিন ঢাকায় প্রবেশের জন্য মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এবং ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ব্যবহার করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে। তবে অপরিকল্পিত নকশা, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং ট্রাফিক আইন না মানার কারণে ফ্লাইওভারের ওপরে ও নিচের সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। এতে কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছানোর সুফল অনেকাংশেই ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্পের তথ্য বলছে, এটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার। ফ্লাইওভারটি শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান হয়ে চানখাঁরপুলকে সংযুক্ত করেছে।
সারা দেশের প্রায় ৪০টি জেলার যানবাহন প্রতিদিন ঢাকায় প্রবেশের জন্য মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এবং ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ব্যবহার করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে।মূলত শনির আখড়া, ডেমরা, সায়েদাবাদ ও দোলাইরপাড়—এই চারটি পয়েন্ট দিয়ে যানবাহনগুলো ফ্লাইওভারে প্রবেশ করে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের মতো ঢাকার পাশের জেলাসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার পরিবহনগুলো শনির আখড়া পয়েন্ট দিয়ে, সিলেট বিভাগ ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় জেলার পরিবহনগুলো ডেমরা পয়েন্ট দিয়ে এবং বরিশাল, খুলনা বিভাগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহনগুলো দোলাইরপাড় পয়েন্ট দিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠে। এ ছাড়া সায়েদাবাদ পয়েন্ট থেকেও প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চলের যানবাহন এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ওঠানামা করছে।
এর বাইরে ঢাকার ভেতরের যাত্রাবাড়ী, দোলাইরপাড়, জুরাইন, ডেমরা, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড ও মাতুয়াইল এলাকায় বসবাসকারী মানুষও ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের জন্য এটি ব্যবহার করেন।
তিন অংশে স্থায়ী যানজট
গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবরের পর্যন্ত সরেজমিনে ফ্লাইওভারের চারটি প্রবেশমুখ ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি যানবাহন প্রবেশ করে ডেমরা ও দোলাইরপাড় পয়েন্ট দিয়ে। ব্যস্ত সময়ে গণপরিবহন এবং ব্যক্তিগত গাড়ি মিলিয়ে প্রতি মিনিটে এই দুই পয়েন্ট দিয়ে গড়ে ১২০টির বেশি যানবাহন প্রবেশ করতে দেখা গেছে। বাকি পয়েন্টগুলোতেও যানবাহন প্রবেশের হার প্রায় কাছাকাছি।
ফ্লাইওভারের তিনটি অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। প্রথমটি ফ্লাইওভারে ওঠার অংশে। দ্বিতীয়টি সায়েদাবাদ অংশে এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান ও চানখাঁরপুল অংশে।
দোলাইরপাড় পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পরিবহনগুলো ফ্লাইওভারে ওঠার আগে সড়কে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। এতে মূল সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে শুরুতেই উড়ালসড়কের প্রবেশমুখে যানজটে পড়ে যানবাহনগুলো। এরপর সেগুলো উড়ালসড়কে উঠতে পারলেও সায়েদাবাদ অংশ থেকে শুরু হয় ধীরগতি, যা শেষ হয় একবারে গুলিস্তান ও চানখাঁরপুল পয়েন্টে।
সায়েদাবাদ অংশে ধীরগতির অন্যতম কারণ যানবাহনগুলোর টোল প্লাজা পার হতে ধীরগতি। এ ছাড়া ঢাকার ভেতরে চলাচল করা গণপরিবহনগুলোকে ফ্লাইওভারে বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী ওঠাতে–নামাতেও দেখা গেছে, যা যানজট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
এরপর নামার মুখে চার লেনের ফ্লাইওভার গুলিস্তানে দুই লেন এবং চানখাঁরপুলে এক লেন হয়ে নেমে গেছে। ফলে এই সরু দুই অংশ পার হতে দীর্ঘ সময় গাড়িগুলোকে আটকে থাকতে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ঢাকা যাতায়াত করা বেসরকারি চাকরিজীবী লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোগান্তি বেশি হয় ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তান নামতে। কখনো কখনো এক–দেড় ঘণ্টাও লেগে যায়। এরপর গাড়িগুলোকে টোল কাউন্টার পার হতেও বেগ পেতে হয়। কারণ, টোল কাউন্টারের পর থেকে বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত সড়কটি হকারদের দখলে থাকে।’
ফ্লাইওভারের তিনটি অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। প্রথমটি ফ্লাইওভারে ওঠার অংশে। দ্বিতীয়টি সায়েদাবাদ অংশে এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান ও চানখাঁরপুল অংশে।গলার কাঁটা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল
যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভারের নিচেও একটি সড়ক রয়েছে। সেই সড়কের অবস্থাও বেহাল। সম্প্রতি সরেজমিনে যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে জায়গায় জায়গায় সড়ক ভেঙে একাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে চলে ধুলার রাজত্ব।
এই সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তথ্য বলছে, ১৯৮৪ সালে গুলিস্তান কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালকে স্থানান্তর করার জন্য আনন্দবাজার, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালীতে জমি দেওয়া হয়। তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালীতে তিনটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বর্তমান ধারণক্ষমতা অনুযায়ী, সেখানে ৭০০ থেকে ৮০০টি বাস রাখার অনুমোদন রয়েছে। তবে পরিবহনসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেখানে আড়াই থেকে তিন হাজার বাস রাখা হয়। চারদিকে সীমানাপ্রাচীরবেষ্টিত এই টার্মিনালের ভেতরে মাদকের আড্ডা বসে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবহন ব্যবসায় অদৃশ্য দালাল সিন্ডিকেটের কাছে মালিকপক্ষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারটার্মিনালের বাইরে অবৈধভাবে শত শত পরিবহন কাউন্টার গড়ে উঠেছে। একেকটি পরিবহনের একাধিক কাউন্টারও দেখা গেছে। এসব কাউন্টারের সামনে থেকেই পরিবহনগুলো যাত্রী ওঠানামা করায়। অতিরিক্ত যাত্রী ধরতে বাসগুলো বেশির ভাগ সময় টার্মিনালের বাইরেই রাখা থাকে। ফলে মূল সড়কে চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে প্রায়ই তীব্র যানজট দেখা দেয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন ব্যবসায় অদৃশ্য দালাল সিন্ডিকেটের কাছে মালিকপক্ষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
ক্ষতি শুধু সময়ের নয়
২০২৩ সালে ‘রিডিউসিং পলিউশন ফর গ্রিন সিটি’ শীর্ষক এক জরিপ প্রকাশ করেছিল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তাদের জরিপে বলা হয়েছিল, ঢাকার যাত্রীদের প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়, যা বছরে জনপ্রতি প্রায় ২৭৬ ঘণ্টার সমান। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, ২০০৭ সালে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। যানজটের কারণে ঢাকায় দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য তখন (২০২২) ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা।
বেসরকারি চাকরিজীবী রেজাউল করিমকে রায়েরবাগ থেকে কারওরানবাজার যেতে হয় প্রতিদিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার করা হয়েছে মানুষের সুবিধার জন্য। এত বড় দূরত্ব পনেরো মিনিটে পার হওয়ার জন্য। অথচ সেখানে নিয়মিত এক ঘণ্টার বেশি আটকে থাকা লাগে। নিচের সড়কে যানজটে পড়লে তবু বিকল্প সড়কের চিন্তা করা যায়। কিন্তু ফ্লাইওভারে একবার আটকা পড়লে না যেতে পারি সামনে, না পেছনে। লাভের থেকে তো ক্ষতিই বেশি।’
সমাধান কী
যানজট কমাতে হলে নিচের সড়কগুলোতে বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খানের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আধুনিক নগর পরিবহন পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয় না। ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে যানজট সমস্যার সমাধান করা যায়নি। বরং অনেক ফ্লাইওভারের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম লেগে থাকে। ফ্লাইওভারের কারণে নিচের রাস্তার ট্রাফিক পরিচালন ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রেই বেশ কমে গেছে।’
এই নগরপরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, ‘ফ্লাইওভারের ওপর নতুন কিছু করার তেমন সুযোগ নেই। ফ্লাইওভারের নিচের সড়কগুলো সংস্কার করতে হবে, যেন ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপ কমে আসে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি বাড়াতে হবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো.
অবহেলা, ক্ষোভ
গত বছর জুলাই আন্দোলনের অন্যতম হটস্পট ছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে এই এলাকায়। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, সেই সংখ্যা ১১৭। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর এক বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এ এলাকা থেকে গেছে আগের মতোই নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টির আড়ালে। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয়দের মনে। তাঁদের অভিযোগ, ওপরে গাড়ি চলার কারণে নিচে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে না। এতে নিচের রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট লেগে থাকে।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মো. আতিকুর রহমানের ভাই মো. সোলায়মান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ছিল রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের। যেখানে রাষ্ট্রেই পরিবর্তন এল না, সেখানে যাত্রাবাড়ীর পরিবর্তন কীভাবে আসবে? জুলাই অভ্যুত্থানে এই যাত্রাবাড়ীর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। অথচ এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনো যাত্রাবাড়ীর সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। আবর্জনার গন্ধে রাস্তায় চলা দায়!’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল ইওভ র র ন চ র সড়ক হ ন ফ ফ ল ইওভ র প রথম আল ক ব যবহ র কর ক উন ট র এই সড়ক পর বহন র জন য প রব শ র ভ তর সরক র ই সড়ক সড়ক র য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
সাড়ে ৩ ঘণ্টায় খুলনা থেকে ঢাকা, যাত্রাবাড়ীতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় খুলনা থেকে বাস চালিয়ে দুপুর সাড়ে বারোটায় যাত্রাবাড়ী পৌঁছেছেন চালক রমজান আলী। দুপুর দেড়টার দিকেও তাঁকে আটকে থাকতে দেখা যায় যাত্রাবাড়ী উড়ালসড়কের গুলিস্তান টোল প্লাজায়। চোখমুখে ক্লান্তি। মাঝেমাঝেই এলোপাতাড়ি হর্ন দিচ্ছিলেন। তাতে অবশ্য কাজ হচ্ছিল না। বাসের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখা গেল, প্রায় সব যাত্রীর চোখেমুখে ক্লান্তি আর বিরক্তির ছাপ।
রমজান বললেন, ‘সাড়ে তিন ঘণ্টায় গাড়ি ঢাকায় আনলাম। কিন্তু আগে আগে ঢাকা পৌঁছে তো লাভ হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্লাইওভারেই বসে থাকি।’
৪ অক্টোবর বেলা ১১টা। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে গুলিস্তানগামী একটি পরিবহন প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে যাত্রাবাড়ী মোড়েই দাঁড়িয়ে আছে। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, সামনে সারি সারি বাস, ট্রাক, রিকশা এবং মোটরসাইকেল থেমে আছে। বিরক্ত হয়ে অনেক যাত্রীই বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন। বাস থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে দেখা গেল, বিপরীত পাশের সড়কে বিরাট আকারের একটি কার্গো ট্রাক দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে উল্টে পড়ে আছে। সেটিকে টেনে তোলার কাজ চলছে। সড়কের ওই লেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই লেনের যানবাহনগুলো হঠাৎই উল্টো সড়কে চলে এসেছে। ফলে যাওয়া–আসা উভয় দিকের রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে। সেই জট ছড়িয়ে পড়েছে যাত্রাবাড়ীর অলিগলিতেও।
৪ অক্টোবর রাত ১০টা। মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ীগামী একটি পরিবহন আটকে আছে সায়েদাবাদ রেলগেটের কিছুটা আগে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে গাড়ি নড়ছেই না। মধ্যবয়সী একজন যাত্রী বিরক্ত মুখে বারবার জানালা দিয়ে সামনে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বেশ কয়েকবার উঁকি দিয়ে পাশের যাত্রীকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘দেখেন, একটাও গাড়ি নেই, সব অটো (ব্যাটারিচালিত রিকশা)। রাস্তাটা কেমনে আটকায়ে রাখছে দেখেন।’
সারা দেশের প্রায় ৪০টি জেলার যানবাহন প্রতিদিন ঢাকায় প্রবেশের জন্য মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এবং ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ব্যবহার করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে। তবে অপরিকল্পিত নকশা, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং ট্রাফিক আইন না মানার কারণে ফ্লাইওভারের ওপরে ও নিচের সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। এতে কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছানোর সুফল অনেকাংশেই ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্পের তথ্য বলছে, এটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার। ফ্লাইওভারটি শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান হয়ে চানখাঁরপুলকে সংযুক্ত করেছে।
সারা দেশের প্রায় ৪০টি জেলার যানবাহন প্রতিদিন ঢাকায় প্রবেশের জন্য মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এবং ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ব্যবহার করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে।মূলত শনির আখড়া, ডেমরা, সায়েদাবাদ ও দোলাইরপাড়—এই চারটি পয়েন্ট দিয়ে যানবাহনগুলো ফ্লাইওভারে প্রবেশ করে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের মতো ঢাকার পাশের জেলাসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার পরিবহনগুলো শনির আখড়া পয়েন্ট দিয়ে, সিলেট বিভাগ ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় জেলার পরিবহনগুলো ডেমরা পয়েন্ট দিয়ে এবং বরিশাল, খুলনা বিভাগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহনগুলো দোলাইরপাড় পয়েন্ট দিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠে। এ ছাড়া সায়েদাবাদ পয়েন্ট থেকেও প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চলের যানবাহন এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ওঠানামা করছে।
এর বাইরে ঢাকার ভেতরের যাত্রাবাড়ী, দোলাইরপাড়, জুরাইন, ডেমরা, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড ও মাতুয়াইল এলাকায় বসবাসকারী মানুষও ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের জন্য এটি ব্যবহার করেন।
তিন অংশে স্থায়ী যানজট
গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবরের পর্যন্ত সরেজমিনে ফ্লাইওভারের চারটি প্রবেশমুখ ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি যানবাহন প্রবেশ করে ডেমরা ও দোলাইরপাড় পয়েন্ট দিয়ে। ব্যস্ত সময়ে গণপরিবহন এবং ব্যক্তিগত গাড়ি মিলিয়ে প্রতি মিনিটে এই দুই পয়েন্ট দিয়ে গড়ে ১২০টির বেশি যানবাহন প্রবেশ করতে দেখা গেছে। বাকি পয়েন্টগুলোতেও যানবাহন প্রবেশের হার প্রায় কাছাকাছি।
ফ্লাইওভারের তিনটি অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। প্রথমটি ফ্লাইওভারে ওঠার অংশে। দ্বিতীয়টি সায়েদাবাদ অংশে এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান ও চানখাঁরপুল অংশে।
দোলাইরপাড় পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পরিবহনগুলো ফ্লাইওভারে ওঠার আগে সড়কে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। এতে মূল সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে শুরুতেই উড়ালসড়কের প্রবেশমুখে যানজটে পড়ে যানবাহনগুলো। এরপর সেগুলো উড়ালসড়কে উঠতে পারলেও সায়েদাবাদ অংশ থেকে শুরু হয় ধীরগতি, যা শেষ হয় একবারে গুলিস্তান ও চানখাঁরপুল পয়েন্টে।
সায়েদাবাদ অংশে ধীরগতির অন্যতম কারণ যানবাহনগুলোর টোল প্লাজা পার হতে ধীরগতি। এ ছাড়া ঢাকার ভেতরে চলাচল করা গণপরিবহনগুলোকে ফ্লাইওভারে বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী ওঠাতে–নামাতেও দেখা গেছে, যা যানজট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
এরপর নামার মুখে চার লেনের ফ্লাইওভার গুলিস্তানে দুই লেন এবং চানখাঁরপুলে এক লেন হয়ে নেমে গেছে। ফলে এই সরু দুই অংশ পার হতে দীর্ঘ সময় গাড়িগুলোকে আটকে থাকতে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ঢাকা যাতায়াত করা বেসরকারি চাকরিজীবী লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোগান্তি বেশি হয় ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তান নামতে। কখনো কখনো এক–দেড় ঘণ্টাও লেগে যায়। এরপর গাড়িগুলোকে টোল কাউন্টার পার হতেও বেগ পেতে হয়। কারণ, টোল কাউন্টারের পর থেকে বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত সড়কটি হকারদের দখলে থাকে।’
ফ্লাইওভারের তিনটি অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। প্রথমটি ফ্লাইওভারে ওঠার অংশে। দ্বিতীয়টি সায়েদাবাদ অংশে এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান ও চানখাঁরপুল অংশে।গলার কাঁটা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল
যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভারের নিচেও একটি সড়ক রয়েছে। সেই সড়কের অবস্থাও বেহাল। সম্প্রতি সরেজমিনে যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে জায়গায় জায়গায় সড়ক ভেঙে একাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে চলে ধুলার রাজত্ব।
এই সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তথ্য বলছে, ১৯৮৪ সালে গুলিস্তান কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালকে স্থানান্তর করার জন্য আনন্দবাজার, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালীতে জমি দেওয়া হয়। তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালীতে তিনটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বর্তমান ধারণক্ষমতা অনুযায়ী, সেখানে ৭০০ থেকে ৮০০টি বাস রাখার অনুমোদন রয়েছে। তবে পরিবহনসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেখানে আড়াই থেকে তিন হাজার বাস রাখা হয়। চারদিকে সীমানাপ্রাচীরবেষ্টিত এই টার্মিনালের ভেতরে মাদকের আড্ডা বসে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবহন ব্যবসায় অদৃশ্য দালাল সিন্ডিকেটের কাছে মালিকপক্ষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারটার্মিনালের বাইরে অবৈধভাবে শত শত পরিবহন কাউন্টার গড়ে উঠেছে। একেকটি পরিবহনের একাধিক কাউন্টারও দেখা গেছে। এসব কাউন্টারের সামনে থেকেই পরিবহনগুলো যাত্রী ওঠানামা করায়। অতিরিক্ত যাত্রী ধরতে বাসগুলো বেশির ভাগ সময় টার্মিনালের বাইরেই রাখা থাকে। ফলে মূল সড়কে চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে প্রায়ই তীব্র যানজট দেখা দেয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন ব্যবসায় অদৃশ্য দালাল সিন্ডিকেটের কাছে মালিকপক্ষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
ক্ষতি শুধু সময়ের নয়
২০২৩ সালে ‘রিডিউসিং পলিউশন ফর গ্রিন সিটি’ শীর্ষক এক জরিপ প্রকাশ করেছিল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তাদের জরিপে বলা হয়েছিল, ঢাকার যাত্রীদের প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়, যা বছরে জনপ্রতি প্রায় ২৭৬ ঘণ্টার সমান। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, ২০০৭ সালে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। যানজটের কারণে ঢাকায় দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য তখন (২০২২) ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা।
বেসরকারি চাকরিজীবী রেজাউল করিমকে রায়েরবাগ থেকে কারওরানবাজার যেতে হয় প্রতিদিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার করা হয়েছে মানুষের সুবিধার জন্য। এত বড় দূরত্ব পনেরো মিনিটে পার হওয়ার জন্য। অথচ সেখানে নিয়মিত এক ঘণ্টার বেশি আটকে থাকা লাগে। নিচের সড়কে যানজটে পড়লে তবু বিকল্প সড়কের চিন্তা করা যায়। কিন্তু ফ্লাইওভারে একবার আটকা পড়লে না যেতে পারি সামনে, না পেছনে। লাভের থেকে তো ক্ষতিই বেশি।’
সমাধান কী
যানজট কমাতে হলে নিচের সড়কগুলোতে বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খানের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আধুনিক নগর পরিবহন পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয় না। ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে যানজট সমস্যার সমাধান করা যায়নি। বরং অনেক ফ্লাইওভারের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম লেগে থাকে। ফ্লাইওভারের কারণে নিচের রাস্তার ট্রাফিক পরিচালন ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রেই বেশ কমে গেছে।’
এই নগরপরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, ‘ফ্লাইওভারের ওপর নতুন কিছু করার তেমন সুযোগ নেই। ফ্লাইওভারের নিচের সড়কগুলো সংস্কার করতে হবে, যেন ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপ কমে আসে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি বাড়াতে হবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আজাদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন যাত্রাবাড়ীর নিচের সড়কের পাশে থাকা পরিবহন কাউন্টারগুলোকে সায়েদাবাস বাস টার্মিনালের ভেতরে নেওয়ার। পাশাপাশি এই অঞ্চলের যানজট কমাতে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অবহেলা, ক্ষোভ
গত বছর জুলাই আন্দোলনের অন্যতম হটস্পট ছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে এই এলাকায়। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, সেই সংখ্যা ১১৭। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর এক বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এ এলাকা থেকে গেছে আগের মতোই নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টির আড়ালে। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয়দের মনে। তাঁদের অভিযোগ, ওপরে গাড়ি চলার কারণে নিচে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে না। এতে নিচের রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট লেগে থাকে।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মো. আতিকুর রহমানের ভাই মো. সোলায়মান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ছিল রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের। যেখানে রাষ্ট্রেই পরিবর্তন এল না, সেখানে যাত্রাবাড়ীর পরিবর্তন কীভাবে আসবে? জুলাই অভ্যুত্থানে এই যাত্রাবাড়ীর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। অথচ এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনো যাত্রাবাড়ীর সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। আবর্জনার গন্ধে রাস্তায় চলা দায়!’