কেন হয়

ফুট ড্রপ সাধারণত তিন ধরনের কারণে হতে পারে—

১. স্নায়ুর সমস্যা

পেরোনিয়াল নার্ভে আঘাত বা চাপ—হাঁটুর নিচে বা ঊরুর ওপরের অংশে নার্ভ চেপে গেলে।

লাম্বার রেডিকুলোপ্যাথি—কোমরের মেরুদণ্ডে ডিস্ক স্লিপ বা স্পন্ডেলাইসিসের কারণে এল ৪ ও এল ৫ নম্বর নার্ভ রুট চাপা পড়া।

সায়টিক নার্ভ ইনজুরি—পেছনের ঊরুর স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি—ডায়াবেটিস, অ্যালকোহলিজম, ভিটামিনের অভাব ইত্যাদির কারণে স্নায়ুর ক্ষতি।

২.

মাংসপেশি ও স্নায়ুরোগ

মটোর নিউরন ডিজিজ।

মাসকুলার ডিস্ট্রোফি।

পোলিওমাইলাইটিস (পোলিও সংক্রমণ)।

চারকোট-মেরি-টুথ রোগ

৩. মস্তিষ্ক বা স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা

স্ট্রোক-ব্রেইনের সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যা পায়ের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।

মাল্টিপোল স্কেলোরেসিস।

স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি।

যেসব লক্ষণ দেখা যায়

হাঁটার সময় পায়ের আঙুল মাটিতে ঠেকে যাওয়া।

পা টেনে হাঁটা বা পা অতিরিক্ত তুলে তুলে হাঁটা।

গোড়ালি ওপরের দিকে তুলতে না পারা।

দীর্ঘ মেয়াদে পায়ের মাংসপেশি ক্ষয় হওয়া।

আরও পড়ুনঅ্যাথলেট ফুট কিন্তু শুধু পায়ের অসুখ নয়১৪ মে ২০২৫চিকিৎসা কী

এর চিকিৎসা মূলত কারণভিত্তিক। যেমন—

প্রথমত: মূল রোগের চিকিৎসা

ডিস্ক স্লিপ বা নার্ভ প্রেশার থাকলে ফিজিওথেরাপি, ওষুধ, প্রয়োজনে সার্জারি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ।

স্ট্রোক হলে নিউরো-রিহ্যাবিলিটেশন।

নিউরো-মাসকুলার রোগে বিশেষায়িত চিকিৎসা।

দ্বিতীয়ত: ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন

স্ট্রেচিং ও স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ—বিশেষ করে টিবিয়ালিস অ্যান্টেরিয়র মাংসপেশি শক্তিশালী করা।

ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন নার্ভ—মাংসপেশি উদ্দীপিত করা।

গেট ট্রেনিং বা হাঁটার প্রশিক্ষণ।

কনট্রাকচার বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যায়াম।

তৃতীয়ত: সহায়ক যন্ত্রপাতি

অ্যাঙ্কল ফুট অর্থোসিস—পা সোজা ও স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

বিশেষ ধরনের জুতা।

চতুর্থত: সার্জারি (প্রয়োজনে)

লার্ভ ডিকম্প্রেশন—চাপা পড়া নার্ভ মুক্ত করা

টেনডন ট্রান্সফার—অন্য মাংসপেশির টেন্ডন স্থানান্তর করে পায়ের পাতা তুলতে সক্ষম করা।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

আরও পড়ুনজানেন কি ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে, মাথা থেকে নয়২৩ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুতে আরও ১৩ পদ সংযুক্তি চায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল শিক্ষার্থী সংসদসমূহের গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, ২০২৫–এর সংশোধনী চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। গঠনতন্ত্রে আরও ১৩টি পদ সংযুক্তির দাবি জানিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ছাত্রদল জকসু গঠনবিধিতে ১০টি নতুন সম্পাদক পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে। পদগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী বিষয়ক সম্পাদক, শুধু নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, ধর্ম ও সম্প্রীতি বিষয়ক সম্পাদক, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক এবং বিতর্ক সম্পাদক।

পাশাপাশি বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদকে বিভক্ত করে স্বাস্থ্য সম্পাদক ও পরিবেশ সম্পাদক এই দুটি আলাদা পদ সৃষ্টির দাবি তুলেছে ছাত্রদল। একইভাবে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদটিকে ভেঙে সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পাদক—এই দুটি পৃথক পদ গঠনের প্রস্তাব করেছে। কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টিরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

এ ছাড়া বর্তমান সংবিধিতে উল্লিখিত সদস্যপদগুলোর সাথে আরও তিনটি নতুন সদস্যপদ যুক্ত করে ১০টি সদস্যপদ করার প্রস্তাব করেছে ছাত্রদল।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে ২৭ অক্টোবর জকসুর সংবিধি চূড়ান্ত হয়। সংবিধিতে জকসুতে ২১টি পদ রাখা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল বলেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সেশনজট, গবেষণা সংকট, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা, ক্যানটিন ও লাইব্রেরির সীমাবদ্ধতার মতো ইস্যুগুলো দীর্ঘদিনের। ছাত্রদলের চাওয়া, জকসু শুধু রাজনৈতিক নয়, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউজিসিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে জকসুর সংবিধিতে পদ সংযোজন করার দাবি জানানো হয়েছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের সুযোগ না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাসাবাড়িতে থাকেন। শুধু একটি ছাত্রী হল রয়েছে, সেখানে সংকট সীমাহীন। যেহেতু হল নেই, সেখানে ছাত্র সংসদ বিদ্যমান না থাকায় জকসুতে সম্পাদকীয় পদ বৃদ্ধির কথা জানানো হয়েছিল। ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব ও সংকট সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি অত্যাবশ্যকীয়।

সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আমাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন কিছু পদ সংযুক্ত করেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি অত্যাধুনিক, যুগোপযোগী এবং বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবে। কিন্তু আমরা জকসু নীতিমালায় একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে প্রশাসনের ব্যাপক তাড়াহুড়ো দেখেছি, যা খুবই হতাশাজনক। আমরা আশা করছি আমাদের দাবি করা পদগুলো নীতিমালাতে সংযুক্ত করা হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে—এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা আশা করি এই নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। প্রশাসন সব ছাত্রসংগঠনকে সমান সুযোগ দেবে, যাতে প্রত্যেকে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে। রোডম্যাপ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রকাশ, সংশোধন, মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাইসহ সব ধাপ শেষে আগামী ২৭ নভেম্বর ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ