কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেব: সাতক্ষীরার ডিসি
Published: 20th, November 2025 GMT
সাতক্ষীরার নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আখতার বলেছেন, “সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জনগণের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে আমরা বদ্ধপরিকর। কোনোভাবেই এ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনে জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবেন, আমরা শুধু এই প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে যা যা করার প্রয়োজন, তাই করব। আমি কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেব।”
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন এ সভার আয়োজন করে।
আফরোজা আখতার বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব সমস্যার কথা উঠে এসেছে, সেগুলো সমাধান করা হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষক সবার সচেতনতা জরুরি। আমরা সেই সচেতনতা তৈরিতে কাজ করব। জনগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা না থাকলে কোনো বিষয়ই সরকারের পক্ষে একা সম্ভব নয়।”
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মাহফুজুর রহমান, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
আরো বক্তব্য রাখেন- সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, সাংবাদিক আবু তালেব মোল্যা, সুশীলনের উপ-পরিচালক জিএম মনিরুজ্জামান, ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু মুসা, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা আক্তার বিউটি, সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়েব হাসান বাবু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরাফাত হোসেন।
সভায় বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরার আম, কুল, টালি বিদেশে রপ্তানি হলেও মধ্যস্বত্ব ভোগীরা লাভবান হচ্ছে, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত। শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় প্রাণসায়ের খাল খনন জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাল্যবিবাহ বাড়ছে। জুয়া ও মাদকের ভয়াবহতা বেড়েছে। সুন্দরবনসহ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার অভাবে তা বিকশিত হচ্ছে না। সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের কাজ দ্রুত নষ্ট হয়ে গেছে। সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়কের কাজ যেন ভালো হয় সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীর পূর্ণ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োজন
সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরাপদ ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর সক্রিয় ও নিরপেক্ষ ভূমিকা অত্যাবশ্যক। সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা, পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বিত নিরাপত্তাব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব। সরকার এসব প্রস্তুতি নিলে নির্বাচন নিয়ে জনগণের আস্থা বাড়বে। ভোট সুষ্ঠু হবে। দেশ স্থিতিশীল থাকবে।
‘নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতকরণে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা: সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলেছেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তন কক্ষে এই সেমিনার হয়। সেমিনারের আয়োজক এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
সেমিনারে প্রধান বক্তার বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. রোকন উদ্দিন বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ভোট কারচুপি ও সহিংসতায় দলীয় প্রশাসনই মূল ভূমিকা রাখে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো জরুরি। এ ছাড়া দেশে এখনো বিপুল অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে আছে, যা উদ্ধার না হলে নির্বাচনের আগে সহিংসতা বাড়বে। দীর্ঘদিন মাঠে থাকার ফলে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, পারিবারিক জীবন ও মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। সেনাবাহিনী জনগণের আস্থা ও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বিদেশি প্রভাব ও ভুয়া প্রচারণা জনগণ-সেনাবাহিনীর সম্পর্ক দুর্বল করতে চায়।
রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় কোন্দল, দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন এবং পুরোনো ধরনের রাজনীতি পরিত্যাগ না করলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না বলে মন্তব্য করেন রোকন উদ্দিন।
সেমিনারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। সরকার নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে। আদৌ নির্বাচন হবে কি না, সেই প্রশ্নও জনগণের মনে তৈরি হচ্ছে। তাই সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীকে জনগণের পাশে থাকতে হবে। তাহলে ফ্যাসিবাদমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।
অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকলে একতরফা বা রাতের ভোট সম্ভব হতো না বলে মন্তব্য করেন রাশেদ খান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেই ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।
আগামী নির্বাচন বানচালের জন্য বিদেশি প্রভাব ও নিষিদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থিতার আড়ালে চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেন সেমিনারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এসব প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মিলিত ভূমিকা নিতে হবে। নিষিদ্ধ বা বিতর্কিত রাজনৈতিক শক্তিগুলো নির্বাচনে অংশ নিলে অরাজকতা বাড়বে। তাই নির্বাচন কমিশনকে কঠোর থাকতে হবে। জনগণকে সচেতনভাবে ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে হবে।
বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির সদস্যসচিব ফাতিমা তাসনীম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর তরুণসহ সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নতুন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ভোট দখলের শঙ্কা রয়েছে। তাই সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে ভোটের পাঁচ-সাত দিন আগে থেকেই টহলে নামানো দরকার। সব হটস্পটে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। যাতে নারী, বয়স্ক ও নতুন ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হয়।
সেমিনারে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান। তিনি বলেন, অ্যাসোসিয়েশন আগামী জাতীয় নির্বাচনে স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার ন্যায়সংগত ও জিরো টলারেন্স প্রয়োগের প্রত্যাশা করে। তারা মনে করে, উপমহাদেশে সহিংসতা, পেশিশক্তি ও প্রশাসনিক পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশেই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রেখে পেশাদার ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে।সংগঠনটি আশা প্রকাশ করেছে, প্রযুক্তিনির্ভর তদারকি—যেমন ড্রোন মনিটরিং, বডি-ওন ক্যামেরা ও লাইভ বিশ্লেষণ নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ করবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসনের সমন্বিত কমান্ড স্ট্রাকচার দ্রুত প্রতিক্রিয়াসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, যা একটি শান্তিপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন উপহার দিতে সহায়ক হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মুশফিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের সভাপতি বাপ্পী সরকার। সেমিনারে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।