পটুয়াখালী-১ আসন (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

গতকাল বুধবার বিকেলে সদর উপজেলায় এক নির্বাচনী সভায় আলতাফ হোসেন চৌধুরী জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘ওনারা ব্যাংকার দিয়ে রাজনীতি করাবে, কন্ট্রাক্টর দিয়ে নির্বাচন করাবে। গণ অধিকারের ভিপি নূরকে দিয়ে নির্বাচন করাবে। তাকে দিয়ে শুধু নির্বাচনই করাবে না, তাকে টাকাও দেবে, কিন্তু নূর রাজি হয়নি। তখন তারা রুহুল আমিন হাওলাদারকে (জাতীয় পার্টি) ধরছে। তারা আমাকে হারাতে ১০০ কোটি টাকার বাজেট করেছে।’

আলতাফ হোসেন চৌধুরীর এ বক্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান (টোটন) বলেন, ‘তাঁর এসব বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাঁর এ ধরনের উক্তি জেলা বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কটূক্তিমূলক। আগামী ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া একজন প্রার্থী জনসমক্ষে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না, তা সংশ্লিষ্ট মহলের বিবেচনার জন্য রেখে দিলাম।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘এ ছাড়া তিনি জেলা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “জেলা কমিটি বাদ দেন, ওটা ফ্রিজ হয়ে গেছে, হিমাগারে চলে গেছে।” কাউন্সিলে নির্বাচিত হওয়া জেলা বিএনপির নেতৃত্বকে তিনি ডাকবেন কি না, তিনি তা পরে দেখবেন। একজন প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে জেলা বিএনপির নির্বাচিত কমিটিকে এইভাবে অবমূল্যায়ন করা সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি স্পষ্ট অসম্মান, যা তিনি পারেন না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘আলতাফ হোসেন চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগ থেকেই জেলা বিএনপি নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু তিনি বাসায় অবস্থান করে তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আর তাঁর নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক বানিয়েছেন দলীয় পদবিহীন মাকসুদ আহমেদ বায়জীদ পান্নাকে, যিনি কখনোই দলের দুর্দিনে মাঠে ছিলেন না। তা ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে আলতাফ হোসেন চৌধুরী এখন পর্যন্ত জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসার প্রয়োজন মনে করেননি।’

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকারসহ জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনআমাকে হারাতে জেলা বিএনপি ১০০ কোটি টাকার বাজেট করেছে, বললেন বিএনপির প্রার্থী৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আলত ফ হ স ন চ ধ র ব এনপ র ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই...

‘গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর ঘরভরা সন্তান’—এই ছিল একসময় বাঙালির আদর্শ সুখী পরিবারের প্রত্যাশা। এখন গোয়ালভরা গরুও নেই, পুকুরভরা মাছও নেই, গোলাভরা ধানও নেই। তবে সুখের কথা, ঘরভরা সন্তানের কোনো অভাব নেই। এই অভাব নেই-এর প্রভাব নিয়ে ভেবেছিলাম আর লেখালেখি করব না—আমার ধারণাটাই হয়তো ভুল। কারণ, সেসব লেখা (প্রথম আলোতেই প্রকাশিত) হালে পানি পায়নি, কারও সমর্থন তো দূরের কথা।

আমার অজ্ঞতাপ্রসূত অনধিকারচর্চা হিসেবে হয়তো তিরস্কৃতও হয়েছে। তবে কয়েক দিন আগে একজন রিকশাচালকের টেলিভিশন ক্যামেরায় দেওয়া মন্তব্যটি শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। জ্ঞানী-গুণীরা না হলেও একজন সাধারণ শ্রমিকের উপলব্ধি থেকে আমার বিশ্বাসের সমর্থন তো পেলাম। তাঁর কথার মধ্যে আমার বিশ্বাসেরই প্রতিধ্বনি খুঁজে পেলাম। তিনি বলেছিলেন, এ দেশ ‘ফেরেশতা’ এলেও চালাতে পারবেন না, কারণ এ দেশে শুধু মেট্রোরেলের নিচে যত মানুষ রাত যাপন করে, পৃথিবীর বহু দেশেও এত মানুষ নেই।

মানবসম্পদ যে শুধু আশীর্বাদই নয়, উপচে পড়া এ সম্পদ যে অভিশাপও হতে পারে, একজন বিজ্ঞ নয়—অজ্ঞ (?) সাধারণ মানুষের কথার মধ্যে তার পর্যবেক্ষণ লক্ষ করা গেল। তবে এ তো অতি সাধারণ একজন মানুষের পর্যবেক্ষণ। এ প্রসঙ্গে কিছু অসাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ লক্ষ করা যাক।

ভারতের বিখ্যাত লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী খুশবন্ত সিংয়ের একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য,  ‘...আমি মোটামুটি নিশ্চিত, আজকের দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, বস্তি, দুর্নীতি ও অপরাধ—এসবের বেশির ভাগই অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং আমরা যে আত্মঘাতী হারে সন্তান জন্ম দিচ্ছি, তার ফল।’ কথাগুলো আমাদের ক্ষেত্রেও
শতভাগ প্রযোজ্য।

অজ্ঞতা, উদাসীনতা, ধর্মীয় বিধিবিধানের অপব্যাখ্যা ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা আমাদের এই ক্ষুদ্র দেশের জন্য কী দুর্ভোগ যে ডেকে আনছে, তা বোঝার ক্ষমতা যে আমাদের নেই তা নয়। কিন্তু জনতুষ্টির বিবেচনায় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে লেখক, বুদ্ধিজীবী, তথা সিভিল সোসাইটি—সবাই বিষয়টিকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যান (অধম ক্ষমাপ্রার্থী)।

স্বাধীনতার সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, পঞ্চাশ বছর পর তা এসে দাঁড়িয়েছে আঠারো কোটিতে (সরকারি হিসাবে, বাস্তবে তা কুড়ি কোটি ছাড়িয়ে যাবে)।

কিছুদিন আগে একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি দেশে আঠারো কোটি মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম।’

এই সংগ্রাম থেকেই জন্ম নিচ্ছে যত অশিক্ষা, অপরাধ, প্রতারণার নব নব কৌশল। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়বে একচিলতে জমির জন্য ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, চাঁদাবাজি, দখলদারি ইত্যাদি নিয়ে খুনোখুনি, তথা নানা ধরনের অপমৃত্যু। মানুষের জীবনের যেন কোনো মূল্য নেই। সরবরাহ বেশি হলে মূল্য কমে যাওয়া—অর্থনীতির এ সাধারণ নিয়ম যেন এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

একটি মানবশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বেঁচে থাকার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিক পন্থায় সুযোগ না পেলে যেকোনো পন্থায় সে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেই। চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস ইত্যাদির জন্মও এভাবেই। তবে ‘কচু কাটতে কাটতে ডাকাত’—একপর্যায়ে বেঁচে থাকার এ যুদ্ধ ওপরে ওঠার সংক্ষিপ্ত পন্থা হয়ে ওঠে।

আমাদের দেশে এই শর্টকাট পন্থাটি সমাজের সর্বস্তরেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। বহু বিত্তশালীর উত্থানের পেছনেও এই শর্টকাট পন্থা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও এই সমাজবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছে। তরুণেরা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, হচ্ছে।

উইনস্টন চার্চিলের একটি মন্তব্য মনে পড়ছে, ‘ইন্ডিয়ান্স ব্রিড লাইক রেবিট’ (ভারতীয়দের প্রজনন ইঁদুরের মতো) । মন্তব্যটি আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক এবং ক্ষুব্ধ হওয়াও স্বাভাবিক, কিন্তু কথাটি কি একেবারেই মিথ্যা?

স্বাধীনতার সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, পঞ্চাশ বছর পর তা এসে দাঁড়িয়েছে আঠারো কোটিতে (সরকারি হিসাবে, বাস্তবে তা কুড়ি কোটি ছাড়িয়ে যাবে)।

আরও পড়ুনজনসংখ্যা, উন্নয়ন ও বৈষম্যের মধ্যে সম্পর্ক কী১১ নভেম্বর ২০২৫

কলকারখানা, বাসস্থান ইত্যাদির প্রয়োজনে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, পাহাড়-পর্বত—কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। এ ছাড়া উপায়ই-বা কী। চারদিকে শুধু ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই। প্রকৃতিকে এভাবে বিধ্বস্ত করলে সে তার প্রতিশোধ নেবেই। ২১ নভেম্বরের ভয়ংকর দুর্যোগ আমাদের জন্য কি একটি ওয়েকআপ কল নয়? ঢাকা শহর মানুষের ভারে ন্যুব্জ। শুধু ঢাকাই নয়, সারা দেশের চিত্রও একই।

আমরা জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করব, লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব—এসব জনতুষ্টিমূলক মেঠো বয়ান অনেক শুনেছি। যাঁরা এসব আশ্বাসবাণী শোনান, তাঁরা নিজেরাও জানেন, যে গতিতে আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে, কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টা তথা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এর সঙ্গে পাল্লা দিতে সমর্থ হবে না।

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’

এ শুধু গান নয়, বাস্তব। এ দেশের মাটি, জল, হাওয়া, ষড়্‌ঋতুর বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি আর কোথাও কি খুঁজে পাওয়া যাবে? ভূস্বর্গ পাওয়া যাবে, মাটির পৃথিবী নয়। আমরা যাঁরা দেশটাকে, মাতৃভূমিকে ভালোবাসি, তাঁদের ভেবে দেখতে হবে। অন্তত এই একটি বিষয়ে কোনো জনতুষ্টির রাজনীতি নয়।

স্বল্পমেয়াদি কসমেটিক সমাধানের চেষ্টা না করে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা করতে হবে—এ আমাদের জাতীয় সমস্যা, সব সমস্যার মূল।

সৈয়দ আব্দুল হাদী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, সংগীতশিল্পী

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যাট–প্যাড কিনতে পেছাচ্ছে বিপিএল
  • বরগুনায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণর দায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড
  • শ্রীপুরে কথা–কাটাকাটির জেরে ৫ সহপাঠীকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ, কিশোর পলাতক
  • দুদকের পরিধি বাড়ছে, আসছে নতুন নিয়ম
  • ডেঙ্গুতে মাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু
  • জাহান্নামের আগুন যাদের দিয়ে প্রথম জ্বালানো হবে
  • মিস ইউনিভার্সের মালিকদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও মাদক পাচারের অভিযোগ
  • জ্ঞান চর্চার ছয় স্তর: ইবনুল কাইয়িমের দিকনির্দেশনা
  • ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই...