কাতারের দোহায় দীর্ঘ আলোচনার পর বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গাজায় যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত বিবরণ চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছেছেন আলোচকরা। মধ্যস্থতাকারী কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের নেতারা আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

দোহায় আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা রুদ্ধদ্বার আলোচনায় আশাবাদ তৈরি হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইসরায়েল এবং গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনার পথে রয়েছে। খবর রয়টার্সের।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, উভয় পক্ষকে একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়েছে এবং চূড়ান্ত বিবরণ নিয়ে আলোচনা চলছে।

আরো পড়ুন:

গাজায় প্রাণহানি ৪৬ হাজার ৫০০ ছাড়াল

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ শিশুসহ ৪৯ জন নিহত

তবে, একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা মঙ্গলবার রাতে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাস এখনো তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কারণ গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে কীভাবে সরিয়ে নেয়া হবে সেই বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে হামাস।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চুক্তি স্বাক্ষর প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে রেখে আলোচনা করছে।

মঙ্গলবার জো বাইডেন ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি আলোচনার অগ্রগতির বিষয়ে কথা বলেছেন। 

দুই নেতার ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, “উভয় নেতা আগামী কয়েক ঘণ্টা সরাসরি এবং তাদের টিমের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই প্রেসিডেন্ট একটি চুক্তি কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।”

হামাস জানিয়েছে, আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং তারা আশা করছে এই শেষ রাউন্ডের আলোচনায় চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে।

ইসরায়েলি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যদিও কিছু বিবরণ নিয়ে এখনো কাজ করা প্রয়োজন। আমরা কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছি, তবে এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাইনি।”

মঙ্গলবার রোম সফররত ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে জোটের কট্টর জাতীয়তাবাদী দলগুলার তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও, যদি চূড়ান্তভাবে একমত হয় তবে ইসরায়েলের জোট সরকারের বেশিরভাগ অংশই গাজা চুক্তিকে সমর্থন করবে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত আলোচনাটি যদি সফল হয়, তাহলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধবিরতির আলোচনা সফল হওয়ার পাশাপাশি গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ, হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা, ছিটমহলের বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে গৃহহীন করা এবং এখনও প্রতিদিন কয়েক ডজন মানুষকে হত্যা করা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে।

এর ফলে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমতে পারে, যেখানে যুদ্ধ পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাকে সংঘাতের ইন্ধন জোগাচ্ছে এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এছাড়া, ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটককৃতদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন অবশিষ্ট জিম্মিকে উদ্ধার করতে পারবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীরাও মুক্তি পাবে।

শিশু ও নারী বন্দীদের প্রথমে মুক্তি দেওয়া হবে

সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “এই চুক্তি.

.. জিম্মিদের মুক্ত করবে, যুদ্ধ বন্ধ করবে, ইসরায়েলকে নিরাপত্তা প্রদান করবে এবং হামাসের শুরু করা এই যুদ্ধে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার সুযোগ দেবে।”

যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর আলোচনার মধ্যেও মঙ্গলবার গাজার দেইর আল-বালাহ এবং রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আওতায় গাজায় মানবিক সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। কিন্তু সীমান্ত প্রবেশাধিকার এবং নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা এখনও বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।

ইসরায়েলে জিম্মিদের পরিবার আশা এবং হতাশার দোলাচলে আটকে আছে। তারা বলছেন, “আমরা এই সুযোগটি মিস করতে পারি না। এটিই শেষ সুযোগ; আমরা তাদের বাঁচাতে পারি।”

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির প্রথম পর্যায়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে শিশু, নারী, কিছু নারী সৈন্য, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ইসরায়েল ধীরে ধীরে এবং আংশিকভাবে কিছু সেনা প্রত্যাহার করবে।

একটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ১ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সীমান্ত অতিক্রম করার পর ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ শুরু করে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। 

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, তখন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৪৬ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের অভিষেককে এখন ব্যাপকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য একটি কার্যত সময়সীমা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র জন য পর য য় ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা

ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী লক্ষ্মী মাঞ্চু। তার পরবর্তী সিনেমা ‘ঢাকসা’। এ সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৪৭ বছরের এই অভিনেত্রী। কয়েক দিন আগে গ্রেট অন্ধ্রকে সাক্ষাৎকার দেন লক্ষ্মী। এ আলাপচারিতার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করায় লক্ষ্মী বলেন— “আপনার এত সাহস হয় কী করে!” 

মুম্বাইয়ে যাওয়ার ফলে কি আপনার পোশাকের স্টাইলে কোনো প্রভাব পড়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে লক্ষ্মী বলেন, “আমি আমেরিকাতে থেকেছি। সেখান থেকে হায়দরাবাদে, এখন মুম্বাইয়ে আছি। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি নিজেকে এইভাবে উপস্থাপন করার জন্য। এই পরিশ্রম আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, যা আমাকে আমার মতো পোশাক পরতে উৎসাহ দেয়।” 

এরপর সাংবাদিক সরাসরি লক্ষ্মীর পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করেন, জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, “আপনি কি একজন পুরুষকে একই প্রশ্ন করতেন? আপনার এত সাহস হয় কী করে! আপনি কি মহেশ বাবুকে বলতেন—‘আপনার তো এখন ৫০ বছর বয়স, তাহলে আপনি কেন জামা খুলে ছবি তুলছেন?’ তাহলে একজন নারীকে কেন এই প্রশ্ন? মানুষ আপনার এই প্রশ্ন থেকে কী শিখবে? একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনার দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।” 

পরে সাংবাদিক স্বীকার করেন যে, এই ধরনের প্রশ্ন একজন অভিনেতাকে করতেন না। প্রশ্নটি করার কারণ ব্যাখ্যা করে সাংবাদিক জানান, তার পোশাক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের চর্চা চলছে, যার কারণে এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসা। 

লক্ষ্মী মাঞ্চুর অন্য পরিচয় তিনি তেলেগু সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা মোহন বাবুর কন্যা। ৫০ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন মোহন বাবু। ব্যক্তিগত জীবনে বিদ্যা দেবীর সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি। এ সংসারে রয়েছে কন্যা লক্ষ্মী ও পুত্র বিষ্ণু মাঞ্চু। তারা দুজনেই অভিনয়শিল্পী।

তথ্যসূত্র: দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক অধ্যাপকের কাছেই অসহায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
  • চৌধুরীবাড়ি ব্যবসায়ী নির্বাচনে ব্যাডমিন্টন মার্কায় গনসংযোগে এগিয়ে মেরাজ
  • ফ্রান্সজুড়ে কৃচ্ছ্রতা বিরোধী বিক্ষোভ
  • চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নারীবাদ
  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা