গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হতে পারে চুক্তি
Published: 15th, January 2025 GMT
কাতারের দোহায় দীর্ঘ আলোচনার পর বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গাজায় যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত বিবরণ চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছেছেন আলোচকরা। মধ্যস্থতাকারী কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের নেতারা আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দোহায় আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা রুদ্ধদ্বার আলোচনায় আশাবাদ তৈরি হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইসরায়েল এবং গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনার পথে রয়েছে। খবর রয়টার্সের।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, উভয় পক্ষকে একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়েছে এবং চূড়ান্ত বিবরণ নিয়ে আলোচনা চলছে।
আরো পড়ুন:
গাজায় প্রাণহানি ৪৬ হাজার ৫০০ ছাড়াল
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ শিশুসহ ৪৯ জন নিহত
তবে, একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা মঙ্গলবার রাতে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাস এখনো তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কারণ গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে কীভাবে সরিয়ে নেয়া হবে সেই বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে হামাস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চুক্তি স্বাক্ষর প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে রেখে আলোচনা করছে।
মঙ্গলবার জো বাইডেন ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি আলোচনার অগ্রগতির বিষয়ে কথা বলেছেন।
দুই নেতার ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, “উভয় নেতা আগামী কয়েক ঘণ্টা সরাসরি এবং তাদের টিমের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই প্রেসিডেন্ট একটি চুক্তি কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।”
হামাস জানিয়েছে, আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং তারা আশা করছে এই শেষ রাউন্ডের আলোচনায় চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে।
ইসরায়েলি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যদিও কিছু বিবরণ নিয়ে এখনো কাজ করা প্রয়োজন। আমরা কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছি, তবে এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাইনি।”
মঙ্গলবার রোম সফররত ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে জোটের কট্টর জাতীয়তাবাদী দলগুলার তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও, যদি চূড়ান্তভাবে একমত হয় তবে ইসরায়েলের জোট সরকারের বেশিরভাগ অংশই গাজা চুক্তিকে সমর্থন করবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত আলোচনাটি যদি সফল হয়, তাহলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধবিরতির আলোচনা সফল হওয়ার পাশাপাশি গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ, হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা, ছিটমহলের বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে গৃহহীন করা এবং এখনও প্রতিদিন কয়েক ডজন মানুষকে হত্যা করা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে।
এর ফলে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমতে পারে, যেখানে যুদ্ধ পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাকে সংঘাতের ইন্ধন জোগাচ্ছে এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এছাড়া, ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটককৃতদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন অবশিষ্ট জিম্মিকে উদ্ধার করতে পারবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীরাও মুক্তি পাবে।
শিশু ও নারী বন্দীদের প্রথমে মুক্তি দেওয়া হবে
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “এই চুক্তি.
যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর আলোচনার মধ্যেও মঙ্গলবার গাজার দেইর আল-বালাহ এবং রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আওতায় গাজায় মানবিক সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। কিন্তু সীমান্ত প্রবেশাধিকার এবং নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা এখনও বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
ইসরায়েলে জিম্মিদের পরিবার আশা এবং হতাশার দোলাচলে আটকে আছে। তারা বলছেন, “আমরা এই সুযোগটি মিস করতে পারি না। এটিই শেষ সুযোগ; আমরা তাদের বাঁচাতে পারি।”
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির প্রথম পর্যায়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে শিশু, নারী, কিছু নারী সৈন্য, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ইসরায়েল ধীরে ধীরে এবং আংশিকভাবে কিছু সেনা প্রত্যাহার করবে।
একটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ১ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সীমান্ত অতিক্রম করার পর ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ শুরু করে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, তখন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৪৬ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের অভিষেককে এখন ব্যাপকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য একটি কার্যত সময়সীমা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র জন য পর য য় ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
যে ৭ কারণে প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়
১.
প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার ক্ষেত্রে পুরোনো অনুভূতি ফিরে ফিরে আসার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। দুই পক্ষের যেকোনো এক পক্ষ যদি দুর্বল হয়ে যান, তাহলে তাঁদের উভয়ের বর্তমান সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়ে। অযথা সন্দেহ ও ঝামেলা তৈরি হয়।
২.প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার সময় আপনি নিজের অবচেতন মনেই বর্তমান সঙ্গীর সঙ্গে তাঁর তুলনা করে ফেলেন। এটা আপনার বর্তমান সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করে।
৩.প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনার বর্তমান সঙ্গীর মনে ঈর্ষা ও সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুনপ্রাক্তন মানেই কি প্রতিপক্ষ?২১ সেপ্টেম্বর ২০২২৪.যথেষ্ট বিরতি না নিয়ে প্রক্তনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আপনাকে জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়। ক্রমাগত অতীতে টেনে নিয়ে যায়। পুরোনো স্মৃতি ভোলা কঠিন হয়ে পড়ে। অতীত ঝেড়ে মানসিকভাবে সামনে এগোনোর পথে ‘মেন্টাল ব্লক’ সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের ‘মেট্রো...ইন দিনো’ সিনেমার প্রচারণামূলক একটি অনুষ্ঠানে এ সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের কাছে একজন প্রশ্ন করেন, ‘আমি আমার প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে চাই। কিন্তু আমার বর্তমান প্রেমিকের তা পছন্দ নয়। এটা কি রেড ফ্ল্যাগ নয়?’ এ প্রশ্নের উত্তর দেন বলিউডের নামকরা অভিনেতা অনুপম খের বলেন— ঈর্ষার অনুভূতির সঙ্গে শরীর ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। আপনি যখন আপনার প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, তখন আপনার বর্তমান সঙ্গী আপনার প্রাক্তনকে নিয়ে নানান কল্পনা করেন। এর ভেতর আছে শারীরিক স্পর্শ। এটা তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা আপনাদের বর্তমান সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। এটা ভালো না খারাপ, সেই আলাপে যাব না। তবে এটা মানুষের, বিশেষ করে পুরুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তাই প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিজের বর্তমান সম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলার প্রয়োজন কী! অন্য কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন।অনুপম খের, ভারতীয় অভিনেতা৫.প্রাক্তনের সঙ্গে কেন বন্ধুত্ব রাখতে চান? যদি নিজের আবেগ-অনুভূতি তাঁর সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান, তাহলে আপনার এ অভ্যাস আপনার সাময়িক ‘ডোপামিন রাশ’ করলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা আপনাকে মানসিকভাবে ক্লান্ত ও দুর্বল করে দিতে পারে।
আরও পড়ুনপ্রাক্তন ফিরতে চাইছেন, এখন কী করবেন২৯ আগস্ট ২০২৪৬.দুজনের সম্পর্কে একজন যদি নিছক বন্ধুত্বই চালিয়ে যেতে চান আর অন্যজন যদি পুরোনো সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে চান, সেখানে তৈরি হয় জটিলতা। আবার মনে করুন, একজন নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন, অন্যজন সিঙ্গেলই আছেন, তাঁর জন্য বন্ধুত্ব চালিয়ে যাওয়া, প্রাক্তন সঙ্গীর নতুন কাপল ছবিতে লাভ রিঅ্যাক্ট দেওয়া সহজ নয়!
৭.সাধারণত প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্ক যখন শেষ হয়ে যায়, খুব কম ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অবশিষ্ট থাকে। যেখানে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, সেখানে নতুন করে বন্ধুত্বের বীজ বুনতে যাওয়া বোকামি নয় কি? এতে আবারও নতুন করে তিক্ততা ও মানসিকভাবে নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অবশ্য আপনারা উভয়েই যদি সবকিছু পেছনে ফেলে নতুন করে প্রাক্তনের কাছেই ফিরে যেতে চান, বন্ধুত্ব হতে পারে তার প্রথম ধাপ।
সূত্র: দ্য আর্ট অব লাভ উইথ লুসিয়া ও ইনস্টাইল ডটকম
আরও পড়ুনপ্রাক্তন পিছু ছাড়ছেই না?০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪