ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভীন পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন তার ছোট বোন ফিরোজা পারভীন এবং তার মা মরিয়ম বেগম মেরি। এছাড়া জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পপি তাদের মারধর করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। 

এ বিষয়ে নায়িকার বিরুদ্ধে সোমবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তার বোন ফিরোজা পারভীন। বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম।

জিডির পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নায়িকার বোন ফিরোজা পারভীন ও মা মরিয়ম বেগম মেরি। ফিরোজা পারভীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এক বছর আগে বাবা মারা গেছে। তিনি ছেলে-মেয়ের নামে ৬ কাঠা জমি রেখে গেছেন। সেই জমিটি পপি তার নামে লিখে নিতে চায়। এখনও আমাদের মা-ভাইবোন বেঁচে আছি তাহলে আমরা তার নামে জমি দেবো কেনো? বাবা বেঁচে থাকতে তো তিনি কোনো কথা বলেনি। বাবা মারা যাওয়ার পর কেনো তিনি কথা বলছেন। পপির একটাই দাবি এই জমি তার নামে লিখে দিতে হবে।’

পপির হাতে মারধরেরও শিকার হয়েছেন বলে জানান ফিরোজা পারভীন। তার কথায়, জমি সংক্রান্ত কোনো কথাই শুনতে চায় না পপি। তার দাবি একটাই, জমি তার নামে লিখে দিতে হবে। কথা বলতে গেলে আমাকে মারধর করেছে এবং হুমকি দিয়ে গেছে। আমাকে মারধরের ভিডিও জিডির সঙ্গে থানায় জমা দিয়ে এসেছি।’

অভিযোগ করে ফিরোজা পারভীন বলেন, ‘আমাদের বাসার বিদ্যুতের লাইন পপি তার নামে ট্রন্সফার করে নিয়েছে। গতকাল সেই বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে আমরা এখন অন্ধকারে আছি। এখন কথা হল, আমার মাসহ ভাই-বোন সবাই আছি। সেখানে তার নামে কীভাবে বিদ্যুতের লাইন থাকে।’

এদিকে পপির মা মরিয়ম বেগম মেরি বলেন, ‘পপির তো অনেক পয়সা আছে। কিন্তু আমাদের এই জমিটা তার কীসের এতো দরকার। আমরা সেটাই বুঝতে পারছি না। তবে আমরা এটুকু বুঝতে পারছি পপি তার স্বামীর কথা মত চলছে। দুইজন মিলে আমাদের সঙ্গে আমাদের জমিটার সঙ্গে লেগেছে। আমার পাঁচটা সন্তান এবং আমি একসঙ্গে থাকি। ওর বাবা বেঁচে থাকতে তারা কিছু করেনি। পপি যেটা চাচ্ছে সেখানে তো আমার আর পাঁচটা বাচ্চারও হক আছে। কিন্তু ওই হক সে দেবে না। একটা জমিটা নিয়ে নেবে। এটা কী করে সম্ভব?’  

এদিকে থানায় করা জিডি সূত্রে জানা গেছে, পৈতৃক ৬ কাঠা জমি দখলের নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার ও শিপনসহ পপি ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিববাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে যান। এতে বাধা দিলে পপি ও তার স্বামী ফিরোজা পারভীনকে হুমকি দেন।

এসব বিষয়ে জানতে পপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন য গ কর ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ ও সুবর্ণাকে

রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তার স্ত্রী সুর্বণা রায়কে (৬০) চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার সকালে রহিমাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তাদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে যোগেশ রায়ের মাথার পেছনে এবং সুবর্ণা রায়ের কপালে কোপ মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, যোগেশ চন্দ্র রায় উত্তর রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ও সাবেক প্রধান শিক্ষক। ২০১৭ সালে তিনি অবসরে যান। তার দুই ছেলে চাকরির কারণে ঢাকা থাকেন। ফলে স্বামী-স্ত্রী দুজনই গ্রামে একা থাকতেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার, মারুফাত হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ২২ মিনিটে ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয় যোগেশের। রবিবার সকাল ৭টার দিকে দিনমজুর দীপক চন্দ্র রায় প্রতিদিনের মতো বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে সন্দেহ করেন। প্রতিবেশীদের ডেকে মই বেয়ে ভেতরে ঢুকে তিনি খাবার ঘরে যোগেশ রায়ের এবং রান্নাঘরে সুর্বণা রায়ের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে সুরতহাল শেষে বিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় ডিবি, সিআইডি, পিবিআই এবং র‍্যাব-১৩ এর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনাস্থলে গিয়েছেন রংপুর-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার এবং জামায়াতের প্রার্থী এটিএম আজহারুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত নেতাকর্মী ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা।

এটিএম আজহারুল ইসলাম জানান, নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে এভাবে কুপিয়ে হত্যা করা দেশে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির চরম অবনতির ইঙ্গিত। তাই দ্রুত এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

এ দিকে দুপুরেই কর্মস্থল থেকে ছুটে আসেন পুলিশে কর্মরত নিহতের দুই ছেলে। মেঝেতে বাবা-মায়ের মরদেহ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তারা। তবে বড় ছেলের স্ত্রী কল্যাণী রায় বলেন, ‘‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। চাকরির সুবাদে আমরা ঢাকা থাকি। প্রতিনিয়ত তাদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ হয় আমাদের। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই যখন শুনি তাদের হত্যা করা হয়েছে বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি।’’

শ্বশুর-শাশুড়িকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দ্রুত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন কল্যাণী রানী।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, বিজয়ের মাসে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দ্রুত তদন্ত করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন বলেন, “চুরি-ডাকাতির কোনো আলামত নেই। বাড়ির উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে ঘাতকরা ঢুকতে পারে। খুব দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।’’

ঢাকা/আমিরুল//

সম্পর্কিত নিবন্ধ