যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন এ ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোল্ড কার্ড’।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যমান ইবি-ফাইভ ভিসা কর্মসূচির জায়গায় নতুন এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে এবং এটি মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করবে। প্রতিটি গোল্ড কার্ডের মূল্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ কোটি টাকার বেশি)।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, গোল্ড কার্ড ব্যবস্থার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী অধিবাসী হতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

বিদ্যমান ইবি-ফাইভ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিদেশিদের গ্রিন কার্ড দেওয়া হয়ে থাকে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গোল্ড কার্ড বিক্রি করতে যাচ্ছি। আর সে কার্ডের মূল্য ধরা হবে ৫০ লাখ ডলার। এটি আপনাদের গ্রিন কার্ডের সুবিধা দেবে এবং এটি (মার্কিন) নাগরিকত্ব পাওয়ার একটি পথ হতে যাচ্ছে। ধনী ব্যক্তিরা এই কার্ডটি কিনে আমাদের দেশে আসবেন।’

দুই সপ্তাহের মধ্যে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

এক সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রুশ ধনকুবেররাও এ গোল্ড কার্ড পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সম্ভবত। আরে, আমি কিছু রুশ ধনকুবেরকে চিনি, যাঁরা বেশ দারুণ মানুষ।’

বর্তমানে ইবি-ফাইভ ইমিগ্রান্ট ইনভেস্টর প্রোগ্রাম নামক কর্মসূচিটি পরিচালনা করছে ইউ.

এস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)। এটি যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংস্থা। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙা করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে কংগ্রেস এ কর্মসূচি চালু করেছিল।

গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইবি-ফাইভ কর্মসূচি...এটা একেবারেই বাজে পদ্ধতি, এটা মিথ্যা ও জালিয়াতিতে ভরা। এটি হলো কম দামে গ্রিন কার্ড পাওয়ার একটি উপায়। তাই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই ধরনের হাস্যকর ইবি-ফাইভ কর্মসূচি না রেখে আমরা ইবি-ফাইভ কর্মসূচি শেষ করে দিই। এর জায়গায় আমরা ‘ট্রাম্প গোল্ড কার্ড’ আনতে যাচ্ছি।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ