দুর্গম বনের ভেতর ঘুরে বেড়ান তাঁরা। হাতে থাকে লাঠি ও ছাতা। পরনে সবুজ পোশাক। রোদ-বৃষ্টি কোনোটাই তাঁদের আটকাতে পারে না। কেউ বনের গাছ কাটতে চাইলে বাধা দেন। গত ১৯ বছর ধরে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এভাবেই বন পাহারা দিচ্ছেন টেকনাফের ২৮ নারী। তাঁদের এমন উদ্যোগের ফলে রক্ষা পেয়েছে হাজারো গাছপালা।
২০০৬ সালে বন বিভাগ এবং ইউএসএআইডির সহায়তায় গঠিত হয় বেসরকারি সংগঠন ‘নিসর্গ নেটওয়ার্ক’। এই সংগঠনের ব্যবস্থাপনায় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কেরনতলী গ্রামের বাসিন্দা খুরশিদা বেগম গঠন করেন ২৮ সদস্যের ‘বন পাহারা দল’। এর পর থেকে টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন বনাঞ্চল সংরক্ষণে পাহারা দিয়ে আসছে দলটি। যদিও টেকনাফের বনাঞ্চল মানেই যেন অস্ত্রধারী ডাকাত দলের আস্তানা, অপহরণ, বিভিন্ন জীবজন্তুর আক্রমণের ভয়। তবু এসব কোনো কিছুই এই নারীদের থামাতে পারেনি। ইতিমধ্যে তাঁদের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।
২৮ নারীর খোঁজে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে টেকনাফ স্থলবন্দরের পশ্চিম পাশের বনে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে দেখা মেলে বন পাহারায় থাকা নারীদের। শাল-সেগুন-গর্জনসহ নানা জাতের গাছগাছালিতে ভরা ঘন পাহাড়ি অরণ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন নারীরা। সবারই বয়স ২০ থেকে ৫০–এর মধ্যে। নারী দলের নেতৃত্ব দেন খুরশিদা বেগম (৪৬)। তিনি কেরনতলী নারী বন পাহারা দলেরও সভাপতি। প্রথম আলোকে জানালেন, পাহারা দেওয়ার কাজ প্রতিদিনই চলে। সকাল ৯টায় নারীরা বনাঞ্চলে ঢোকেন। শুরুতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে নেন। তারপর চারজন করে সাতটি দলে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েন বনাঞ্চলের এদিক-সেদিক। বিকেল চারটায় বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। এর মধ্যে দুপুরের খাবারও সারেন বনের ভেতর। মূলত কেউ যেন গাছপালা না কাটে, আগুন না লাগায়; তা-ই দেখেন নারী সদস্যরা।
খুরশিদার গ্রামের সীমানা ঘেঁষেই ঘন বনজঙ্গল। ছোটবেলায় সে বনে বিচরণ ছিল তাঁর। বন্য প্রাণীর অবাধ যাতায়াত দেখেছেন তিনি। গভীর বনে থাকা ভয়ানক সব প্রাণীর গল্প শুনেছেন বড়দের কাছে। একসময় বনের সঙ্গে তাঁর গভীর আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনও হয়েছে, সারা দিন বনেই কাটিয়েছেন তিনি।
বনকে ভালোবাসার স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই নারী। পেয়েছেন ‘ওয়াংগারি মাথাই’ পুরস্কার। ইতালির রাজধানীর রোমে গিয়ে সেই পুরস্কার হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তখন বয়স ছিল মাত্র ২৭।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নারী পাহারা দলের সদস্যরা কাজ করছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন প হ র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।