‘আর হরে-লোদে সন্দ্বীপ যাইতে হবে না’
Published: 24th, March 2025 GMT
‘আগে হরে-লোদে ডুবিচুবি সন্দ্বীপ যাইতাম। একবার তো নৌকাতুন জাজে উডনের সময় হানিত হরি গেছিলাম। মরি যাইতাম গই, মাইনষে টানি তুলছিল। অন জোতা হাদ-দি যাইতাম হারির।’ (আগে কাদাপানি মাড়িয়ে সন্দ্বীপ যেতাম। একবার নৌকা থেকে জাহাজে ওঠার সময় পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম। মারা যেতাম, মানুষ টেনে তুলেছিল। এখন জুতা পায়ে দিয়ে যেতে পারছি।)
কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সন্তোষপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জোসনা বেগম (৬০)। ঢাকায় মেয়ের বাসা থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, আজ সোমবার ভোরে গাড়ি তাঁকে কুমিরা ফেরিঘাটে নামিয়ে দেয়। এরপর ঘাটে গিয়ে তিনি শুনতে পান বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ফেরি উদ্বোধন করা হবে। বিনা খরচে যাওয়া যাবে। সে জন্য তিনি কুমিরা থেকে আবার বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এসে ফেরিতে উঠেছেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে প্রথমবারের মতো ফেরি চলাচল শুরু হয় আজ সকাল থেকে। সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ফেরি সার্ভিস চালু করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও ছয় উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১৯ মার্চ থেকে এই নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চলাচল করছিল।
নাসরিন আক্তার নামের অপর যাত্রী জানান, কয়েক দিন পর ঈদ। কিন্তু তাঁর কাছে আজই ঈদের মনে হচ্ছে। নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কখনো সন্দ্বীপে যাবেন, তা তিনি ভাবেননি। আজ তিনি সন্দ্বীপের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন।
এলাকায় লোকাল গাড়ি চলবে। এতে যাতায়াত খরচ কমে যাবে। তাই অত্যন্ত খুশি সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁর ৫৫ বছর বয়সে একসঙ্গে এত বাস-ট্রাক-প্রাইভেট কার দেখেননি। ফেরি উদ্বোধনে মন্ত্রীরা আসবেন, তাই তিনিও উপজেলায় ভিড় করছেন।
সন্দ্বীপের সন্তোষপুর এলাকায় কৃষিকাজ করেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আই ২০ টিয়া ভাড়াতুন ঘাটদি আইযাই। ৫০০টিয়া ভাড়াও দেখছি। বুকসমান, কোমরসমান হানিত নামাই দিত। হরে-লোদে যাইতো–অইতো। কত কষ্ট গৈরতাম। ঘাডে আছিল সিন্ডিকেট। অন নাই।’ (আমি ২০ টাকা ভাড়ায় ঘাটে আসা-যাওয়া করি। ৫০০ টাকা ভাড়াও দেখেছি। বুকসমান, কোমরসমান পানিতে নামিয়ে দিত। কাদাপানি মাড়িয়ে যেতে হতো। কত কষ্ট করতাম। ঘাটে সিন্ডিকেট ছিল। এখন নাই।)
উদ্বোধন উপলক্ষে সাজানো হয় ঘাট ও ফেরি। আজ সকালে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।