পণ্য আমদানির বিপরীতে অনেক ব্যাংক সময়মতো বিলের মূল্য পরিশোধ করছে না। এ কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিল পরিশোধে তদারকি জোরদার করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা কোনো বিল পরিশোধযোগ্য না হলে তা সংশ্লিষ্ট বিদেশি ব্যাংকগুলোকে চিঠির মাধ্যমে জানানোর নির্দেশনা দিয়ে আজ রোববার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি ডলার। এর মধ্যে বৈদেশিক স্বীকৃত বিল ২০ কোটি ও স্থানীয় বিল ৩২ কোটি ডলার। গত জানুয়ারির শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের পরিমাণ কমে হয় ২৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে বৈদেশিক স্বীকৃত বিল ৯ কোটি ও স্থানীয় বিল ১৫ কোটি ডলার।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আমদানির বিপরীতে বিল মূল্য যথাসময়ে পরিশোধিত না হলে তা দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যয় বৃদ্ধিসহ অনুকূল পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এই বিবেচনায় মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিল (বৈদেশিক বা স্থানীয়) দ্রুত পরিশোধ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলসমূহ (বৈদেশিক বা স্থানীয়) বিস্তারিত পর্যালোচনা করে (মামলাধীন, মামলার কারণ, বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ভিত্তিক বিশ্লেষণপূর্বক) সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিস্তারিত পর্যালোচনায় শাখাভিত্তিক সাফল্য মূল্যায়ন করে যেসব শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ অপরিশোধিত স্বীকৃত বিলের (বৈদেশিক বা স্থানীয়) পরিমাণ বেশি, সেগুলোয় বিশেষ পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মামলাধীন কোনো বিল পরিশোধযোগ্য না হলে তা সরবরাহকারীর ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যথাসময়ে আমদানি মূল্য পরিশোধের গুরুত্ব বিবেচনায় মূল্য পরিশোধ না করার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ধরনের লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাও ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ হবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল পর শ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ