প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির অধীনে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৩১ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চত হওয়া গেছে। 

দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩০ পুরুষ ও একজন নারী। অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং বিভিন্ন মামলায় সাজা হয়েছে– এমন ব্যক্তিদেরই ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। 

ঢাকায় যাদের পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনকে এসকর্ট বা বিশেষ নিরাপত্তাসহ পৌঁছে দিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা। বাকি বাংলাদেশিদের সাধারণ যাত্রীর মতো পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে পাঁচ বাংলাদেশিকে। ফ্লাইটটি একই ধরনের যাত্রী নিয়ে নেপাল হয়ে বাংলাদেশে আসে।

ফেরত আসা দু’জনের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। তাদের মধ্যে নোয়াখালীর শাহাদত হোসেন সমকালের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, গত ৯ মার্চ তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। বিমান খরচ যুক্তরাষ্ট্র সরকার বহন করেছে। শাহাদত হোসেন বলেন, ‘তারা আমাকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তুলে দিয়েছিল। কোনো অসম্মানজনক আচরণ করেনি। হাতকড়া পরানো বা বাজে কোনো ব্যবহার করেনি। আমি সাধারণ যাত্রীর মতো এসেছি।’ 

শাহাদত যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ অ্যাসাইলাম চেয়েছিলেন। তা মঞ্জুর না হওয়ায় তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি ৯ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। 
পুলিশের বিশেষ শাখার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের যাতে সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হয়– এ ব্যাপারে শুরু থেকেই জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে সরকার। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তোলা হয়। বাংলাদেশের অনুরোধ এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার কারণে বাংলাদেশি কাউকে হাতকড়া পরানো হয়নি বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। অনেক দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে সামরিক বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশিদের সাধারণ ও চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

ট্রাম্প প্রশাসন সে দেশে অবৈধ অভিবাসী এবং ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে, ভারতীয় নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে সামরিক বিমানবোঝাই করে পাঠানোর ঘটনা গণমাধ্যমে এলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। 

জানতে চাইলে ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কত বাংলাদেশি অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও জানতে পারেনি সরকার। কেউ অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমন নাগরিকদের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায় তারা। এর পর সেই তথ্য পাঠানো হয় বাংলাদেশে। পুলিশের বিশেষ শাখা তাদের নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। আর যে কয়েক দফায় ৩১ জনকে দেশে পাঠানো হয়েছে, প্রতিবারই আগে থেকে তা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের হস্তান্তর করা হয়। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে রেজিস্টারে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। 

একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস আগেই বাংলাদেশ সরকারকে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অবহিত করেছে। এ নিয়ে সরকারকে কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয়। 

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিষয়টি দেখভাল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় একাধিক বৈঠক করে। সেখানে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অবৈধ অভিবাসী হিসেবে যারা ফেরত এসেছেন, তাদের আইনি কোনো সহযোগিতা দরকার হলে, সরকার তা করবে। এ জন্য বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। 

গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান সমকালকে বলেন, যেসব অভিবাসী বিদেশ থেকে ফেরত আসেন, বিমানবন্দরে তাদের সহযোগিতা করে থাকে ব্র্যাক। প্রয়োজনে তাদের কাউন্সেলিং এবং আর্থিক সহযোগিতাও দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসাদের ক্ষেত্রে সরকার চাইলে ব্র্যাক সহায়তা দেবে। 

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত সপ্তাহেও ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। গত শনিবার যে পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তাদের বিষয়ে আগেই বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়। চার্টার্ড ফ্লাইটে ওই পাঁচজনের বুধবার ঢাকায় পৌঁছার কথা ছিল। বিশেষ কারণে তাতে দু’দিন বিলম্ব হয়। ফেরত আসা এই পাঁচজনের মধ্যে দু’জন নোয়াখালীর বাসিন্দা। বাকি তিনজনের বাড়ি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে।

যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি সরকারি দপ্তর অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি তদারক করে থাকে। দপ্তরগুলো হলো– অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট। ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর ২৯ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হয়। এতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর তথ্য এই প্রথম প্রকাশ পেল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র কর মকর ত সমক ল ব ষয়ট সহয গ সরক র হ তকড়

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তান জন্মে কেন সি সেকশন দরকার হয়

প্রশ্ন

আমি ৩৪ বছরের একজন নারী। ৩১ বছর বয়সে সি সেকশনে আমার প্রথম সন্তান হয়েছে। এখন আরেকটি সন্তান নিতে চাচ্ছি। ঠিক কত বছর পর আবার বাচ্চা নেব বুঝতে পারছি না। ভয় লাগছে যে আবার যদি সি সেকশন হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে কি না। আমাকে একটু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন।

রুনি, কুমিল্লা।

পরামর্শ

আপনি উল্লেখ করেছেন, আপনার বয়স এখন ৩৪ বছর, এ বয়সে গর্ভধারণে কোনো অসুবিধা হবে না। সন্তান গ্রহণের জন্য বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার বয়স যত বাড়তে থাকবে, গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও জটিলতার পরিমাণ ততই বাড়তে পারে। তাই পরবর্তী সন্তান নিতে চাইলে আর দেরি করবেন না।

লিখেছেন প্রথম সন্তান সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসব হয়েছিল। কিন্তু কেন সিজারিয়ান পদ্ধতির প্রয়োজন হয়েছিল, তা বলেননি। অনেক সময় গর্ভের শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা—দুজনের ক্ষেত্রেই জটিলতা দেখা দিলে সি সেকশনে যেতে হয়। আপনার ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হয়েছিল, উল্লেখ করলে ভালো হতো।

আপনার পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রেও সিজারিয়ান পদ্ধতির প্রয়োজন হবে কি না, তার আগে জেনে নিতে হবে কেন এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্য রয়েছে—

গর্ভে শিশুর অবস্থান স্বাভাবিক না থাকলে, মায়ের পেলভিস শিশুর আকারের তুলনায় ছোট হলে, প্রসবের সময় শিশুর হৃৎস্পন্দন কমে গেলে কিংবা অক্সিজেনের অভাব হলে। প্রসববেদনা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা জরায়ুমুখ ঠিকমতো না খুললেও সি সেকশনে যেতে হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের কোনো রোগব্যাধি বা শারীরিক জটিলতা; যেটি প্রসবকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে—এমন বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসক এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তাই আগে থেকেই দুশ্চিন্তা না করে, গর্ভধারণের পর নিয়মিত একজন গাইনি ও ফিটোমেটারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। চিকিত্সকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নিলে আপনার অহেতুক ভাবনা কমে যাবে। যদি গর্ভের শিশুর কোনো ত্রুটি কিংবা স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে, তা-ও শনাক্ত হবে।

তা ছাড়া যদি স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব হয়, সেটিও চিকিৎসকের কাছেই জেনে নিতে পারবেন।

আরও পড়ুনগর্ভকালীন ডায়াবেটিসে মায়ের পাশাপাশি সন্তানের ঝুঁকি তৈরি হয়২৯ নভেম্বর ২০২৫প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা

স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসার প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা : অধুনা, প্রথম আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘প্রতারক পুরুষ বিশ্বাসঘাতকতা গোপন রাখে, তবে আল্লাহ সব দেখেন’
  • নিম্নবিত্তের জীবনে সুখের সংজ্ঞা
  • পসরা সাজিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিলছে তাৎক্ষণিক ঋণসুবিধাও
  • বাফেলোতে মসজিদের সামনে দীর্ঘ সময় আইস পুলিশের অবস্থান
  • মিরসরাইয়ে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত
  • প্রায় ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশি সহায়তায় সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা
  • ‘আমিরুল বিশ্বসেরাদের একজন হতে পারে’
  • চার নায়িকার ‘ট্রাইব্যুনাল’, দেখা যাবে ঈদে
  • কামিন্স তো ফিরেছেনই, অ্যাডিলেড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে আরও যাঁরা আছেন
  • সন্তান জন্মে কেন সি সেকশন দরকার হয়