চট্টগ্রামে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীকে পুলিশে দিলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 4th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে পুলিশে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁর নাম ইসরাত জাহান। আজ রোববার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী ইসরাত জাহান ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তাঁকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে আসে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইসরাত জাহান ক্যাম্পাসে বারবার বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছিলেন। তিনি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনটির পক্ষে উসকানি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
ওসি জাহিদুল কবির বলেন, আটক ছাত্রলীগ নেত্রীকে গত ৫ আগস্টের মামলায় আজ সোমবার আদালতে হাজির করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তরুণীকে বিয়ের জন্য প্রবীণ ব্যবসায়ীর ‘৩ কোটি টাকা’ খরচ, তবু চার হাত এক হলো না
দুজনের বয়সের পার্থক্য প্রায় ৪০ বছরের। একজন ব্যবসায়ী, অন্যজন সাধারণ পরিবারের মেয়ে। ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ীর দাবি, তরুণী তাঁকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। নানা অজুহাতে তাঁর কাছ থেকে তিন কোটি টাকা নিয়েছেন।
প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তরুণীর বিরুদ্ধে ১২ জুন রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি বলছেন, তরুণী আগেই বিয়ে করেছেন। তাঁর বাচ্চাও আছে।
এর বিপরীতে তরুণীর ভাষ্য, বিয়ের কথা লুকিয়েছিলেন, তা সত্য। তবে তিনি তিন কোটি টাকা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেননি। বরং ‘বাবার বয়সী ওই ব্যবসায়ী তাঁকে ফাঁদে ফেলে’ দিনের পর দিন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করেছেন। তিনিও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর এ হাবিব ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীর করা মামলা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সত্য কী, তা খুঁজে বের করা হবে।
বিয়ের জন্য তিন কোটি টাকা খরচ!
৫৯ বছর বয়সী ওই আবাসন ব্যবসায়ী রাজধানীর রামপুরায় থাকেন। ছয় বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। তাঁর ভাষ্য, তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছর পর ফেসবুকে ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তরুণীর মুঠোফোন নম্বর নেন। এরপর নিয়মিত কথা হতো। দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে তিনি তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
ব্যবসায়ীর ভাষ্যমতে, তখন তরুণীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁর বাবা অনেক আগে মারা গেছেন। মা ভীষণ অসুস্থ। ছোট একটা ভাই। আর্থিক অনটনে আছেন। এ কারণে ব্যবসায়ীর কাছে আর্থিক সাহায্য কামনা করেন। পরে চট্টগ্রামে তরুণীর বাসায় যান ব্যবসায়ী। পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
মামলার এজাহারে দাবি করা হয়েছে, ওই তরুণী তাঁকে (ব্যবসায়ী) বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। চিকিৎসা, ঘরভাড়াসহ পারিবারিক নানা প্রয়োজনে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিতে শুরু করেন। তিনিও বিশ্বাস করে তরুণীর পেছনে দুই হাতে টাকা খরচ করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তরুণীর এক বান্ধবীর মা হাসপাতালে মারা যান। তরুণীর কথায় তিনি (ব্যবসায়ী) হাসপাতালের বকেয়া বিলও পরিশোধ করেছিলেন।
ব্যবসায়ীর দাবি, ৫ বছরে (২০২০–২০২৫ সালের মে পর্যন্ত) ওই তরুণী বিয়ের জন্য স্বর্ণালংকার কেনা, ঘরভাড়া, লেখাপড়ার খরচসহ নানা প্রয়োজনে তাঁর কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা নিয়েছেন। প্রথম থেকেই তরুণীর দেওয়া বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতেন। এজাহারে তিনটি বিকাশ নম্বরের উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হলেও নানা অজুহাতে পিছিয়ে দিতেন তরুণী। দুবার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। গায়েহলুদের শাড়িসহ বিয়ের সরঞ্জাম কেনার টাকা নেন। গায়েহলুদের ছবিও তাঁর (ব্যবসায়ী) মুঠোফোনে পাঠান। কিন্তু বিয়ে করতেন না।
সর্বশেষ গত মে মাসে বিয়ের জন্য ওই তরুণী এক লাখ টাকা নেন বলে দাবি করেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বিয়ের দিন ঠিক হয় ২৩ মে। পরে তরুণী তাঁকে (ব্যবসায়ী) জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়িতে পানি উঠে গেছে। এই মুহূর্তে বিয়ে করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। পরে বিয়ের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
ওই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে তরুণী আমাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়ে আসছে। আমিও তরুণীকে পাগলের মতো বিশ্বাস করেছি। যখন যত টাকা চেয়েছে, আমি দিয়েছি। আমার তিন কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু তরুণী আমাকে বিয়ে করল না। আমাকে প্রতারিত করল।’
ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘সর্বশেষ যখন আমাকে বিয়ে করবে না বলে তরুণী জানিয়ে দেয়, তখন আমি তরুণীর ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া শুরু করি। জানতে পারি, আমার সঙ্গে শুরু থেকে মিথ্যা কথা বলেছে। কারণ, তরুণী আরও কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছে। তার বাচ্চাও রয়েছে।’
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ীর করা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। ব্যবসায়ী বলেছেন, তরুণীকে বিশ্বাস করে তিনি ভুল করেছেন।
‘বাবার বয়সীকে কেন বিয়ে করব’
তরুণীর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে। তবে ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। সেখানেই পড়ালেখা। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ওই ব্যবসায়ী তাঁর মায়ের পূর্বপরিচিত। সেই সূত্রে পরিচয়। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাঁদের পরিবারে ওই ব্যবসায়ীর আসা–যাওয়া শুরু হয়। ২০২১ সালে মা মারা যাওয়ার পর ব্যবসায়ী তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন।
তরুণী বলেন, ‘আমি ও আমার ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মা মারা যাওয়ার আগে ওই ব্যবসায়ীর কাছে ১২ লাখ টাকা দিয়ে যান। সেই টাকা থেকে প্রতি মাসে আমাদের খরচের জন্য টাকা দিতেন ব্যবসায়ী।’
তরুণীর ভাষ্য, ব্যবসায়ীর সঙ্গে যখন পরিচয় হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বা ১৯। এর দুই বছর পর মা মারা গেলে ছোট ভাইকে নিয়ে তিনি বিপদে পড়েন। মা মারা যাওয়ার পর থেকে ব্যবসায়ী তাঁদের চট্টগ্রামের বাসায় যেতেন। তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চাইতেন।
বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন দাবি করে তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বয়স কম। আমি জানতাম, আমার বয়সী ছেলেমেয়ে আছে তাঁর। তারপরও আমাকে বয়স্ক ওই ব্যবসায়ী বিয়ের জন্য চাপাচাপি করতে থাকেন। আমার বাবার বয়সী মানুষকে কেন বিয়ে করতে হবে? আমার মন কোনোভাবে তাঁকে বিয়ে করতে সায় দিত না।’
ব্যবসায়ীর কাছে বিয়ে ও বাচ্চা থাকার তথ্য লুকানোর কথা স্বীকার করেন তরুণী। তবে তিনি তিন কোটি টাকা নেননি বলে দাবি করেন। তরুণী অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী আমাকে ফাঁদে ফেলে সম্পর্ক করতে বাধ্য করেছে দিনের পর দিন। আমার কাছে তার প্রমাণ আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে হয়রানি করার জন্য যেহেতু ব্যবসায়ী মামলা করেছেন, আমিও ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমাকে দিনের পর দিন হয়রানি করেছেন তিনি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূর এ হাবিব ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে আরও প্রমাণপত্র দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীকে বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীর কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এবং তদন্তের পর প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।