প্রতিদিন গ্রাম থেকে সাইকেলে শহরে গিয়ে পত্রিকা বিলি করেন নড়াইলের স্বপন
Published: 20th, November 2025 GMT
চিত্রা নদীর পাড়ে হেমন্তের অপ্রশস্ত কুয়াশা তখনো পুরোপুরিভাবে কাটেনি। এমন সময় অদূরের গ্রাম থেকে নড়াইল শহরে গিয়ে হাজির হন স্বপন কণ্ডু (৫৭)। শহরের হাতিরবাগান বাসস্ট্যান্ডে দিনের পত্রিকাগুলোর অপেক্ষায় থাকেন। যশোর থেকে আসা পত্রিকার বান্ডিল বুঝে পাওয়া মাত্রই চেনা ছন্দে কাজ গুছিয়ে নেন। রিল খুলে পত্রিকাগুলো সাজিয়ে নেন নিজের বাইসাইকেলে রাখা সামনের ব্যাগ ও পেছনের ক্যারিয়ারে। এরপর বাইরে বেরিয়ে শুরু হয় স্বপনের হাঁকডাক, ‘এই খবর আছে, খবর আছে, আজকের তাজা খবর.
আগ্রহী পথচারীরা এগিয়ে যান স্বপনের কাছে, কেউ কিনে নেন এক কপি, কেউ দুটি। ব্যস্ততার সেই মুহূর্ত পেরোলেই স্বপনের সাইকেল ছুটে চলে শহরের রাস্তা-গলিপথ ধরে—দোকানপাট, বাসাবাড়ি ও অফিসে—সব জায়গায় খবর পৌঁছে খবর পৌঁছে দেন।
গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বপনের সঙ্গে ঘোরেন এই প্রতিবেদক। এ সময় জানা যায়, স্বপনের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার হাটবাড়িয়া গ্রামে। সেখান থেকে প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে শহরে গিয়ে তিন দশক ধরে করছেন পত্রিকা বিক্রির কাজ। সংসারে আছে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও বৃদ্ধ শাশুড়ি। বড় ছেলে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন এবং মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সংসারের সব খরচই চলে স্বপনের পত্রিকা বিক্রির টাকায়।
স্বপন কণ্ডু স্মৃতি হাতড়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবক বয়সে শূন্য হাতে বিয়ে করিছিলাম। আর্থিক সংকটে তখন খুবই অসহায় অবস্থা। এরই মধ্যি বাড়ির পাশের সাংবাদিক অশোক দাদা আর যশোর থেকে প্রকাশিত লোকসমাজ পত্রিকার তখনকার ম্যানেজার বাদল ভাই আমাকে পত্রিকা বিক্রির প্রস্তাব দেন। বাদল ভাইয়ের কথামতোই পত্রিকা বিক্রি শুরু করিছিলাম। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখন এই কাজই করে যাচ্ছি। এই আয়েই আমি বাড়িতে ঘর দিছি। দুই ছেলেমেয়েরে পড়াশোনা করাচ্ছি।’
দুই পাঠককে পত্রিকা বুঝিয়ে দিচ্ছেন স্বপন কণ্ডু (৫৭)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নড়াইল শহরের বউবাজার এলাকায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বপন র
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শুরু, যান চলাচল বন্ধ
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কোটাবৈষম্য ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে হরতাল পালন করছে তিনটি সংগঠন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৩৬ ঘণ্টার এ হরতাল শুরু হয়। আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন সংগঠন তিনটির নেতারা।
এর আগে গতকাল বেলা তিনটায় কোটাবিরোধী ঐক্যজোট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ নামের তিনটি সংগঠন এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। তিনটিই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের সংগঠন। আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এ কর্মসূচি ডাকা হয়েছে। হরতাল সমর্থনকারীরা এ পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ পরীক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা বাতিলের দাবি করছেন।
আজ সকাল সাড়ে আটটায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের কলেজগেট,ভেদভেদি, তবলছড়ি, দোয়েল চত্বর, বনরূপা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষিপ্তভাবে পিকেটিং করছে হরতাল সমর্থনকারীরা। শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে দূরপাল্লার গাড়ি ও নদীপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অফিস–আদালতে কাজে যাওয়া মানুষ ও সাধারণ পথচারীরা।
হরতাল সমর্থনকারীদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, জরুরি সেবা যেমন হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও ওষুধের দোকান তাঁদের কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। রাঙামাটি দোয়েল চত্বরে পিকেটিং করা শিক্ষার্থী রিয়াজুল দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা হরতালের আওতার বাইরে থাকবে।’
সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের চেষ্টা করছেন হরতাল সমর্থনকারীরা। এ সময় বিভিন্ন গাড়ির চালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ সকালে রাঙামাটি শহরের বনরূপা এলাকায়