এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখতে না দেওয়ায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সহপাঠীদের মারধরে মারা যান ইমন হোসেন (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. সাকিব শেখকে (২০) ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১২।

শুক্রবার (৯ মে) রাতে র‌্যাবের একটি টিম ঢাকার উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে সাকিবকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার (১০ মে) সকালে আসামিকে বেলকুচি থানায় হস্তান্তর করা হয়।

আরো পড়ুন: সিরাজগঞ্জে সহপাঠীদের মারধরে আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩

অপহরণের শিকার সেই পল্লী চিকিৎসক উদ্ধার

গ্রেপ্তার সাকিব সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার নাড়ামুড়ি গ্রামের রঞ্জিত হোসেনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৮ এপ্রিল শাহজাদপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ইমদাদুল মোল্লার ছেলে ও খুকনী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমন হোসেনকে মারধর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল ইমন মারা যান।  

বেলকুচি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “সহপাঠীদের মারধরে আহত ইমন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলার পলাতক আসামি ছিলেন সাকিব। আজ শনিবার সকালে সাকিবকে থানায় হস্তান্তর করেছে র‌্যাব-১২ এর সদস্যরা।”

গত ১৭ এপ্রিল এনায়েতপুর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি’র ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন সহপাঠী ইমনের খাতা দেখতে চান। ইমন তাদের খাতা দেখাতে রাজি হননি। এ ঘটনার জেরে গত ১৮ এপ্রিল বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর নতুনপাড়ায় ডেকে নিয়ে ইমনকে মারধর করেন তার সহপাঠীরা। এসময় ইমনের মাথার বাঁ পাশের খুলি ভেঙে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

কিছুটা সুস্থ হলে ইমনকে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। পরে ইমন আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে আবারো এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল ইমনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২৭ এপ্রিল নিহতের বাবা ইমদাদুল হক বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা করেন।

ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আস ম ব লক চ পর ক ষ ম রধর সহপ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত পাবনার আশিক-গৌরব-ধ্রুব

৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাবনার তিন কৃতী সন্তান আশিকুর রহমান, মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব ও খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। তাদের মধ্যে আশিক শিক্ষায়, ধ্রুব স্বাস্থ্যে এবং গৌরব প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

এই তিন তরুণ তুর্কি চাকরি জীবনে প্রবেশের পর সমাজের অবহেলিত এবং অসহায় মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ।

আশিকুর রহমান (২৮) পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও মরহুমা আলেয়া খাতুনের সন্তান। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। নিজের সাফল্যের পেছনে বাবা ও ভাইয়ের অবদানের কথা জানিয়েছেন এই যুবক।

আরো পড়ুন:

৪৮তম বিশেষ বিসিএসের প্রিলিমিনারি ১৮ জুলাই

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন

আশিক বলেন, “আমার বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার আর আমাদের ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। বাবা আমাকে আগলে রাখতেন। তিনি কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। বাবা আর মেজো ভাই সবুজের জন্য আজ আমি এখানে।”

আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিক। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। এরপর থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন আশিক।

আশিক ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব পাবনা পৌরসভার শালগাড়িয়া কসাইপট্টি মহল্লার মো. হাফিজুর রহমান ও মোছা. নাহিদ খানমের সন্তান। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাবা হাফিজুর রহমান পাবনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি অবসরে যান। মা গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ধ্রুব।

ফাহিম রহমান ধ্রুব ২০১৩ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ২০২১ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। ২০২৩ সালে সেখানে ইন্টার্ন শেষ করেন। ইন্টার্ন চলা অবস্থায় বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন এই যুবক।

অনুভূতি জানাতে গিয়ে ধ্রুব বলেন, “মা-বাবা সবসময় আমাকে উৎসাহ-সাহস আর সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে আমার শিক্ষক আর ব্যাচমেটদেরও অবদান রয়েছে। সবার দোয়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতায় আজ আমি বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।”

বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। পাবনা পৌরসভার ঘোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা খন্দকার গোলাম মুস্তাফা-মরহুমা গুলশান আরা দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি।

গৌরবের বাবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান। মা মরহুমা গুলশান আরা একই প্রতিষ্ঠানে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

গৌরব ২০১১ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৩ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।

গৌরব স্নাতকের পরই শুরু করেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। পড়ালেখার পাশাপাশি গৌরব একজন প্রশিক্ষিত সংগীত শিল্পী, যা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে সহায়তা করেছে। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল এসেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে।

নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে গৌরব বলেন, ‌“এই সফলতার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। মা সবসময় আমাকে বলতেন-ভালো করে পড়ো, ইনশাআল্লাহ একদিন সফল হবে। আজ তিনি আমার পাশে নেই, কিন্তু আমি জানি, আজকের দিনে তিনি পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বাবাও সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলতেন, চেষ্টা করো, সবসময় পাশে আছি।”

বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে এই তিন তুর্কী বলেন, ‌সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নেগেটিভ কোনো কিছু ভাবা যাবে না। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস শক্ত রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত গড়ে ৪ ঘণ্টা পড়ালেখায় সময় দিতে হবে। নিজের সাবজেক্টের বাইরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আয়ত্বে রাখতে হবে।

তারা বলেন, ভাল কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু তা যেন লক্ষ্য থেকে সরিয়ে না দেয়। ভাগ্য সহায় হলে অবশ্যই সফলতা আসবে।

ভবিষ্যত জীবনে সমাজের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এই তিন যুবক। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরান ঢাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী নিহত
  • পুরান ঢাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক শিক্ষার্থী নিহত
  • বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত পাবনার আশিক-গৌরব-ধ্রুব