আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর ইনকিলাব মঞ্চের তিন প্রস্তাব
Published: 11th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে ইনকিলাব মঞ্চ। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী এ প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন।
এই তিন প্রস্তাব হলো প্রথমত দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। প্রথম ট্রাইব্যুনাল ব্যক্তির বিচার করবে। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল দলের বিচার করবে। দ্বিতীয়ত, অনেক আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছে, যারা কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। এদের নিয়ে অনেকে মামলা–বাণিজ্য করে। এদের জন্য একটা ‘তওবা কমিশন’ গঠন করার মাধ্যমে তাদের দায়মুক্তি দিতে হবে। তৃতীয়ত, আগামী ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান করা।
এ সময় শরিফ ওসমান হাদী সরকারের প্রতি এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার নতুন পুলিশ নিয়োগের আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, ‘বিসিএসে এত বছর যত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সব আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সুপারিশে হয়েছে। সেই আওয়ামী পুলিশরা কি এখন আওয়ামী লীগকে ধরবে? বাংলাদেশে এত যুবক বেকার। আপনারা এই ১০ মাসে নতুন করে পুলিশ নিয়োগ দিলে অনেক যুবকের কর্মসংস্থান হতো। আমি সরকারকে বলব, আপনারা এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দিন।’
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ১০ মাস পরে হওয়ার কথা ছিল না উল্লেখ করে ইনকিলাব মঞ্চের এই নেতা বলেন, ‘এটা তো তাদের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই করার কথা ছিল।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা মনে কইরেন না আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় আমরা আমাদের অন্যান্য দাবি ভুলে যাব। আপনাদের অতি দ্রুত গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে। শুধু জুলাই গণহত্যা নয়, একই সঙ্গে পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে শরিফ ওসমান হাদী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটা ধারা ছিল, এই ট্রাইব্যুনাল যেকোনো দলেরও বিচার করতে পারবে। কিন্তু গতকাল বলা হলো এটা আগে আইনে ছিল না, আইন সংশোধন করে নতুন করে তা যুক্ত করা হলো। কিন্তু এটা তো পূর্বের আইনে ছিল। তাহলে আমাদের প্রশ্ন হলো কোন উপদেষ্টা এই আইন বাদ দিয়েছেন?’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই মে মাসে যখন জনতা আন্দোলনে নামল, তখন আপনারা বলছেন, এই মে মাসেই দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল করবেন। তাহলে এত দিন সেটা করেন নাই কেন?’
শরিফ ওসমান হাদী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপনে (লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন) জাতীয় পার্টির নাম নাই কেন? তারা কি দুধে ধোয়া? তারা কি বিনা ভোটে এমপি হন নাই? আওয়ামী লীগের শরিক ১৪–দলীয় জোটের নাম নাই কেন?’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব সরক র র গঠন ক আওয় ম অপর ধ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগের বিচারের দাবি বিএনপিই তুলেছিল: সালাহউদ্দিন আহমেদ
বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় সরকারকে সধুবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি কয়েক মাস আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তখন প্রধান উপদেষ্টা যদি দাবিটি আমলে নিতেন, তাহলে গত কয়েকদিনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবিধান সংস্কার বিষয়ে নাগরিক জোটের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিএনপি শাহবাগে না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে- সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা কেন শাহবাগে যাবো। আমাদের দাবি তো বহু আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও গণমানুষের কথাগুলো বলেছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে যে সমস্ত ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যার জন্য দায়ী দল হিসেবে তাদেরকে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে নিষিদ্ধ করা হয়। এর উদাহরণ সারা পৃথিবীতে আছে। সুতরাং দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করবে এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য স্বাগতম জানাই।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, বিএনপি এই রকম যেসব পরামর্শ দিয়েছে দেশ ও জনগণের পক্ষে তা যেন যথাসময়ে আমলে নেয়। সরকার ও দেশ পরিচালনায় আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব।
সারাদেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব বলে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এ জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি, নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে।
আওয়ামী লীগ ও তাদের অন্যান্য সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকার আরও একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা মনে হয় এইজন্য সরকারকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। কারণ এই আইনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের কথা বলা আছে। এখানে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ নেই বলেও জানান সালাহউদ্দিন।
বিএনপি এতদিন যে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বলে আসছে, সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ কতটা গণতান্ত্রিক- এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেন, তারা একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, তারা একটি মাফিয়া শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তারা দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়াতন্ত্রের চর্চা করেছিল দেশের মানুষের ওপর। তারা আর রাজনৈতিক দল নেই। তারা একটা মাফিয়া শক্তি, ফ্যাসিবাদী দল। সুতরাং তাদেরকে রাজনৈতিক দলের কোনো তকমা দিতে চাই না। আওয়ামী লীগের ডিএনএতে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক চর্চা নেই বলেও দাবি করেন সালাহউদ্দিন।