পেলে: বার্থ অব আ লেজেন্ড—‘জিঙ্গা’ মাতালেও দর্শকের মন ভরল না
Published: 17th, November 2025 GMT
এ আর রাহমানের জীবন মানেই সংগীত। গানবাজনার বাইরে তাঁর পৃথিবী প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ‘পেলে: বার্থ অব আ লেজেন্ড’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার প্রস্তাব পেয়ে প্রথমেই তিনি যে কাজটা করেছিলেন, তা হলো গুগল করে পেলের জীবনটা ভালো করে ঝালিয়ে নিয়েছিলেন।
সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৬ সালের ৬ মে। পাঁচ দিন পর ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে রাহমান বলেন, ‘এই প্রজেক্টের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সবার আগে গুগল করে পেলের সম্বন্ধে জেনেছি। কারণ, আমার জীবন পুরোটাই সংগীতময়। তাঁর সম্বন্ধে অসাধারণ কিছু বিষয় জানার পর চিত্রনাট্যটি পড়েছি। প্রজেক্টটির প্রতি এরপর অসম্ভব সম্মান জন্ম নেয়।’
ব্রাজিলের তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী এই কিংবদন্তিকে পৃথিবীর কোনো কোনায় আলাদা করে চিনিয়ে দেওয়ার দরকার পড়ে না। তবু তাঁর জীবনটা না জেনে কাজ হাতে নিতে চাননি রাহমান। জানার কাজটাও তিনি করেছিলেন মন দিয়ে। হয়তো সে কারণেই সিনেমার তাঁর বানানো ‘জিঙ্গা’ ট্র্যাক ব্রাজিলের দর্শকের মন জয় করে নেয়। অস্কারের মনোনয়ন পর্যন্ত পেয়েছিল, যদিও চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা হয়নি। ঠিক যেমনটা হয়েছিল সিনেমাটির ক্ষেত্রেও—জেফ ও মাইকেল জিমবালিস্টের তৈরি এই ছবি নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু পূরণ হয়েছে সামান্যই।
পেলের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো কারভালদো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ বন
এছাড়াও পড়ুন:
মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও
ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।
অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।
বাধা পেরিয়েতারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।
গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।
ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন