Prothomalo:
2025-12-04@16:47:02 GMT

জয়া–মহসিনা কি রাঁধতে পারেন

Published: 13th, May 2025 GMT

ছবি: কবির হোসেন

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অযত্ন-অসচেতনতা থেকেই বাড়ছে গলা ও বুক জ্বালাপোড়া, সতর্ক করলেন চিকিৎসকেরা

গলা ও বুক জ্বালাপোড়া এখন শুধু অস্বস্তির কারণই নয়; বরং বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়তে থাকা এক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি। দৈনন্দিন জীবনের অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপের কারণে এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটাকে বলা হয় ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’, সংক্ষেপে জিইআরডি; যা দীর্ঘমেয়াদে আরও জটিল রোগের পথ তৈরি করতে পারে। তবে নিয়ম মেনে জীবনযাপন ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে গলা ও বুক জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সারা বিশ্বে প্রতিবছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ‘গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সচেতনতা সপ্তাহ’ পালন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এমন পরামর্শ দেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকার মহাখালীর জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কনফারেন্স হলে গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী আলোচকেরা মসলাযুক্ত খাবার, ধূমপান, মদ্যপান ও কোমল পানীয় কমানোর পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।

গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজক জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এতে সহযোগিতায় প্রথম আলো এবং সায়েন্টিফিক পার্টনার ইসোরাল মাপ্‌স (Esoral MUPS)। অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয় এসকেএফ এবং প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে।

আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম মোহসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, বুক জ্বালা বা গলা জ্বালাপোড়া অনেকেরই সাধারণ সমস্যা। সপ্তাহে দু-তিনবার হলে সেটি স্বাভাবিক হিসেবে ধরা যায়। তবে যখন এই জ্বালাপোড়া অতিমাত্রায় বাড়ে বা নিয়মিত ঘটে, তখন স্বাস্থ্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, এই সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈজ্ঞানিক ধারণা এখনো খুব কম। তাই গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সম্পর্কে সঠিক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে এবং প্রতিরোধে করণীয় জানানোর উদ্দেশ্যেই আজকের এ আয়োজন।

১৫ থেকে ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ গলা ও বুক জ্বালাপোড়ায় ভোগেন বলে উল্লেখ করেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উদ্দৌলা। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, অনেক রোগীই জানেন না এই সমস্যা কেন হয়।...বুক জ্বালাপোড়া মনে হলেই তাঁরা যেকোনো ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে নেন। কিন্তু আসলে এই রোগের কারণ, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বা ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে তাঁদের পরিষ্কার ধারণা নেই।’ তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বুক বা গলা জ্বালাপোড়া চলতে থাকলে খাদ্যনালিতে প্রদাহ হতে পারে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্যানসারের কারণও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে জনগণকে সঠিক তথ্য জানানো অত্যন্ত জরুরি, যাতে তাঁরা সচেতন হন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বলেন, খাবারের সঙ্গে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিচে নামার কথা, কিন্তু কখনো উল্টো গলায় উঠে এলে বুক বা গলায় জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এটাকেই ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’ বলা হয়। চর্বিযুক্ত বা মসলাদার খাবার, কফি, চকলেট, অ্যালকোহল, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ, গর্ভাবস্থা, হায়াটাস হার্নিয়া এবং কিছু ওষুধ এই সমস্যা বাড়াতে পারে। তিনি আরও বলেন, যদি এই জ্বালাপোড়া তিন সপ্তাহের বেশি থাকে, তীব্র ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, খাবার গিলতে সমস্যা, ঘন ঘন বমি, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া বা কালো পায়খানা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে এন্ডোস্কপি পরীক্ষা বা বিশেষ চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

যদি খাবারের পর বুকে ব্যথা হয়, তাহলে শুধু বুক জ্বালাপোড়া ভেবে হেলাফেলা করা যাবে না বলে সতর্ক করে দেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রঞ্জিত কুমার বণিক। তিনি বলেন, এটা হৃদ্‌রোগ কি না, এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে রোগীর খাবারের রুচি কমে গেলে তা কখনোই সাধারণ সমস্যা মনে করা ঠিক হবে না। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার সরকার বলেন, এই রোগটি নির্ণয় করা আসলে খুব সহজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। রোগীর কথায়ই অনেক সময় স্পষ্ট ধারণা দেয়। গলা বা বুকে বেশি জ্বালাপোড়া, বুকে ব্যথা, দীর্ঘদিনের কাশি, গলার স্বর ভেঙে যাওয়া, গলায় অস্বস্তি বা কিছু আটকে থাকার অনুভূতি—এসবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করা উচিত। কারণ, পেট ও বুক একে অপরের কাছাকাছি। তাই নিশ্চিত হতে হবে যে এটি কি শুধু অ্যাসিড রিফ্লাক্স, নাকি হার্ট, পাকস্থলী, লিভার বা পিত্তথলির কোনো জটিলতা।

চিকিৎসা শুরুর আগে অবশ্যই রোগের মূল উৎস বা কারণ চিহ্নিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রয়েস উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিটি রোগীর চিকিৎসা আলাদাভাবে নির্ধারণ করতে হয়। কারণ, সবার শারীরিক অবস্থা এক রকম নয়। যাঁদের স্বাস্থ্য ভালো, তাঁদের জন্য কাউন্সেলিং ও চিকিৎসার ধরন এক রকম হবে। আবার যাঁরা বেশি রোগা ও দুর্বল, তাঁদের জন্য অন্যভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, অনেক রোগীর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থাকে, সেগুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. সেলিম রেজা বলেন, মাপ্‌স (MUPS) হলো একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যা ওষুধের দ্রুত শোষণ, সমানভাবে ছড়িয়ে পড়া এবং দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। এর বিশেষ কোটিং পাকস্থলীর অ্যাসিড থেকে ওষুধকে সুরক্ষা দেয়, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি ক্যাপসুল খুলে সহজে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় এটি শিশু ও বয়স্কদের জন্যও সুবিধাজনক। মোট কথা, মাপ্‌স ইসোমিপ্রাজল বা অনুরূপ ওষুধকে আরও কার্যকর ও নিরাপদ করে তোলে।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা ইসোরাল মাপ্‌সের (Esoral MUPS) পক্ষ থেকে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সচেতনতা সপ্তাহ পালন করে আসছি।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতেও আমরা এ ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। কারণ, আমাদের কাছে ব্যবসা-লাভই মূল লক্ষ্য নয়; বরং এর সঙ্গে একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা জড়িত। মানুষের স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ানোই আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য।’

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘ভালো খাব, ভালো থাকব—বিষয়গুলো বুঝতে হবে। সচেতন হয়ে জীবন যাপন করলে পরিপাকতন্ত্রের এই সমস্যা খুব একটা কাছে আসতে পারবে না। ছোট ছোট অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই অনেক বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।’

নিজে বুক জ্বালাপোড়ায় ভুগছেন বলে জানান অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো অভিনেতাদের কাজের ধরন এমন যে খাবারের সময়-অসময় থাকে না। তাই আমিও ব্যক্তিগতভাবে এই সমস্যায় ভুগেছি। আসলে আমরা যে পেশাতেই থাকি না কেন, নিয়ম মানা, পরিমিত খাবার গ্রহণ এবং সঠিক জীবনযাপন অনুসরণ করলে বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ রাখাই সবচেয়ে বড় সচেতনতা।’

মডেল ও অভিনেতা ইয়াশ রোহান বলেন, ‘আমরা ১৬-১৭ বছরের সময় যেভাবে জীবন যাপন করি, বয়স ত্রিশে পৌঁছালে সেই অভ্যাসগুলো বদলানো জরুরি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রয়োজনও বদলে যায়। তাই খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, ব্যায়াম—সবকিছুতেই সচেতন হওয়া উচিত। একটু নিয়ম মানলেই অনেক জটিলতা এড়ানো যায় এবং সুস্থ থাকা সম্ভব।’

আলোচনার শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিক্রয় বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই একটি সহজ বার্তা সামনে নিয়ে এগিয়ে যাই—গলা ও বুক জ্বালাপোড়া উপেক্ষা না করে সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই।’

গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. সহিদুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. ইমতিয়াজ মাহবুব প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ