উড়োজাহাজে ব্যবহৃত তেলের দাম কমল ১১ টাকা
Published: 13th, May 2025 GMT
উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের (জেট ফুয়েল) দাম কমেছে। অভ্যন্তরীণ রুটে লিটারপ্রতি ১১১ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৩ টাকা ৫৭ পয়সা এবং আন্তর্জাতিক রুটে ৭৫ সেন্ট থেকে কমিয়ে ৬০ সেন্ট নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
আজ মঙ্গলবার বিইআরসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ দাম ঘোষণা করেন। নতুন দর আজ রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হবে।
অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত রেখে আমদানি মূল্যের অংশটুকু প্রতি মাসে সমন্বয় করার ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দাম বেড়ে যাবে, আর কমে গেলে কমে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মিজানুর রহমান, সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, আবদুর রাজ্জাক, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.
এত দিন বিপিসি জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের ধারা বাতিল করে দিয়েছে। এরপর গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল, জেট এ–১–এর দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের পর গত ২৩ মার্চ প্রথমবারের মতো জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণের গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আন্তর্জাতিক রুটের জন্য লিটারে ১ সেন্ট কমানোর এবং অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য ১ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল।
বিপিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেট ফুয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ মেট্রিক টনে।
২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধা বিচারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি গঠিত হয়। আইনে সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়া হলেও প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধু গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ইআরস
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের দাবি
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি জানিয়েছেন গবেষক, চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মীসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এমন দাবি জানান তারা।
এছাড়া সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯০ টাকা করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, “সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরের দাম কাছাকাছি হওয়ায় দাম বাড়লেও মধ্যম থেকে নিম্নস্তরের সিগারেট সেবনের প্রবণতা বাড়ে, তবে দুই স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ালে সেই সেবনের প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি তরুণেরা সিগারেট সেবনে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণের তামাকজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।”
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য খাত সংষ্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা এবং ইয়ুথ ফোরাম সদস্য এএফএম সাদমান সাকিব।
এ সময় মূল প্রবেন্ধ ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম জানান, সুপারিশ অনুযায়ী আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.০৩% হবে। প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লাখ ৬৯ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি ক্যানসার রোগী আছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্যানসারের জন্য সরাসরি দায়ী হলো তামাক। তামাকসহ সব স্বাস্থ্য ক্ষতিকর পণ্যের জন্য সিন ট্যাক্স প্রচলন ও তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যয় করার প্রস্তাবনা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।”
তামাক হ্রাসে যা যা করণীয় তার সবই সরকারের উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কর প্রস্তাবনার সাথে একমত পোষন করে সুশান্ত সিনহা বলেন, “কর বাড়িয়ে তামাক পণ্যের মূল্য বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে কোম্পানির লভ্যাংশ কমবে। কেননা করের টাকা পুরোটাই সরকারের কোষাগারে জমা হবে। কর বৃদ্ধি পেলে চোরাচালান বাড়বে মর্মে তামাক কোম্পানির মিথ্যাচারের বিরোধিতা করে বলেন বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সিগারেট সবচেয়ে সস্তা।”
শাফিউন নাহিন শিমুল জানান, সিগারেট বা তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার। তামাকপণ্য বিক্রি থেকে যে রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশ। এমনকি, কার্যকর করারোপের মাধ্যমে সিগারেট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
এছাড়া প্রস্তাবিত তামাক কর সংস্কার একটি সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখবে। পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাত ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহে অর্থায়ন এবং টেকসই কর ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিতে সক্ষম হবে বলেও জানান বক্তারা।
ঢাকা/হাসান/সাইফ