বন্দরে জোড়া খুন : নেপথ্যে আবুল কাউসার আশা?
Published: 22nd, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে একের পর এক হত্যাকাণ্ড আর সন্ত্রাসের ঘটনায় জনমনে যখন তীব্র আতঙ্ক, তখন বন্দর এলাকার সাম্প্রতিক জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযোগের তীর সরাসরি স্থানীয় বিএনপি নেতা আবুল কাউসার আশার দিকে।
রাজনৈতিক আধিপত্য, মাদক ব্যবসা ও অটোস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে ঘটা এই সহিংসতায় আশার জড়িত থাকার জোরালো অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর মতে, তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ডই বন্দরকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে।
গত শনিবার বন্দরে মাত্র আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে আব্দুল কুদ্দুস ও মেহেদী হাসান নামে দুজন নির্মমভাবে খুন হন। এই হত্যাকাণ্ডের মূলে রয়েছে আশার অনুসারী হিসেবে পরিচিত রনি-জাফর গ্রুপ এবং হান্নান সরকারের সমর্থক বাবু-মেহেদী গ্রুপের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব।
স্থানীয় সূত্র বলছে, উভয় গ্রুপই আদতে আশার নিয়ন্ত্রণে। হান্নান সরকারও আশার পিতা আবুল কালামের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করে। এই নৃশংস ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আশা ও তার বাহিনী বন্দরে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অটোস্ট্যান্ড, হাট-বাজার দখলের মিশনে নামে সে।
খান মাসুদ, আজমেরী ওসমানের মতো বিতর্কিত ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতদের গুন্ডা বাহিনী ও অনুসারী নিয়ে আশার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বন্দরের শান্ত পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে বলে মনে করছেন অনেকে। সর্বশেষ অটোস্ট্যান্ড দখলের জেরেই এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে।
নিহত মেহেদীর পরিবার আশার ভয়ে এতটাই তটস্থ যে, তারা মামলা পর্যন্ত করতে সাহস পাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, জোড়া খুনের নেপথ্যে থাকায় এবং মামলার ভয়ে আশা বিদেশে পালানোর পাঁয়তারা করছে।
শুধু দখলদারিত্ব আর সন্ত্রাসই নয়, আশার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও নগ্ন হস্তক্ষেপের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, সরকারি নিয়ম ভেঙে নিজের ডিগ্রি/অনার্স পাস স্ত্রীকে মাস্টার্স পাস দেখিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন তিনি।
এমনকি, এসএসসি ফেল করা এক শিক্ষার্থীর বাবাকেও সেই কমিটির সদস্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছে।
এলাকাবাসী বলছে, আশার মতো নেপথ্যের নায়করা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কারণেই নারায়ণগঞ্জে অপরাধ কমছে না। তারা অবিলম্বে আশাসহ সকল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে এবং অভিযুক্তরা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে।
পুলিশ সুপার আধিপত্য বিস্তারকে হত্যাকাণ্ডের কারণ বললেও, আশার মতো ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নারায়ণগঞ্জে শান্তি ফিরবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ মানুষ।
এসব বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী আবুল কাউসার আশার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক পারভেজের বাবা আব্দুল কুদ্দুসকে চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পারভেজকে না পেয়ে তার বাবা আব্দুল কুদ্দুসকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের ভাই দুদু মিয়া বলেন, “ভাই বারবার বলেছিল, আমারে জানে মাইরো না। কিন্তু ওরা শোনেনি।”
এই হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। কুদ্দুসের স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর মধ্যেই রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়।
এসময় তারা মেহেদী হাসানকে বন্দর সিরাজদৌল্লাহ ক্লাব মাঠের কাছে একা পেয়ে ধরে নিয়ে যায় এবং বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য স ঘর ষ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ হত য ক ণ ড সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১৫নং ওয়ার্ডে নগর ভাবনার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
“আমাদের নগর আমরাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবো” এই স্লোগানকে সামনে রেখে নগর ভাবনা নামক সংগঠন এর পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের জিমখানা-জল্লার পার অংশের লেকে এ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন বাসদ নারাণয়গঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য নগর ভাবনার আহ¦ায়ক এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, ১৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ^াস।
এতে অংশ গ্রহন করেন সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সদস্য বৃন্দের মধ্যে এড. মাজেদুল হক রাজন, কাজী মাহবুবুল আলম জয়, মো. শাহাদাত হোসেন সিমন, নিগার সুলতানা পলি, ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, মো. লিলু মিয়া, গোপাল ঘোষ, আবুল কালাম সাদিকা, রমেন্দ্র সরকার, অজয় বিশ^াস রিপন, তুলসী কুন্ডু, মুন্নি সরদার, মো. শাজাহান সহ বিভিন্ন এলাকার সদস্য বৃন্দ।
এ সময় অসিত বরন বিশ^াস বলেন, এই নগর আমাদের সবার, নগরের লেক, পার্ক আমাদের, তাই নগরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে এবং জন সচেনতা তৈরী করে একটি সুন্দর ও স¦াস্থ্যসম্মত নগরী গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, সরকারি সম্পত্তি মানে সরকারি কর্মচারি কর্মকর্তারা মালিক এটা ঠিক নয়। সরকারি সকল সম্পত্তির মালিক হচ্ছেন জনগন। তিনি লেকের পানিতে বালিশ ও তোষক ভেসে থাকতে দেখে বলেন, একজন মানুষ চরম দায়িত্বহীন হলেই লেকের মধ্যে বালিশ ও তোষক ফেলতে পারে।
তাই জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।