জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের
Published: 25th, June 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, ‘আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয়, তাহলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।’
আজ বুধবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতা এ কথা বলেন।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করতে আসে জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদল। তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার।
গতকাল মঙ্গলবার দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পায় জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতীক ও নিবন্ধন বুঝে নেওয়া এবং বেশ কিছু দাবি জানাতে আজ সিইসির সঙ্গে দেখা করতে আসেন দলটির প্রতিনিধিরা।
পরে হামিদুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে দলীয় প্রার্থীদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মেয়র বানাতে দলীয় প্রভাব কাজে লাগানো হয়। জনমতের প্রতিফলন হয় না। যেটি আমরা অতীতেও দেখেছি। এ জন্য আমরা বারবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি।’
জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার যেই ফরম্যাটেই হোক না কেন, নির্বাচনের আগে একটি সরকারের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। সব দল এই বিষয়ে একমত হয়েছে। এ জন্য আমরা বলেছি, সেই সরকারের অধীনে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়, তাহলে এটা অনেক বেশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। সেখানে জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্বটা আসবে।’
নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার বিষয়ে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ করে গতকাল গেজেট প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার অন্যায়ভাবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। গেজেটের মাধ্যমে আমাদের সেই অধিকার ফিরে এসেছে। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দেওয়ার যে বাধা ছিল, তা উঠে গিয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি।’
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন একটি সুন্দর পদ্ধতি বলে আমরা মনে করি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি আছে। ঐকমত্য কমিশনেও আমরা এই দাবি জানিয়েছি। আজ নির্বাচন কমিশনেও আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি উত্থাপন করেছি, যেন এটি বাংলাদেশে চালু করা হয়। আমরা ১ শতাংশ ভোটের ভিত্তিতে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বণ্টন করার জন্য বলেছি।’
হামিদুর রহমান আরও বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি চালু হলে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন জাতির কাছে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমে আসবে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হবে। এই পদ্ধতিতে দলীয় মনোনয়ন–বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে।’
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘বাংলাদেশের ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বিদেশে কর্মরত আছেন। কিন্তু তাঁরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এতে তাঁদের মনে দুঃখ–কষ্ট আছে। তার চেয়ে বড় কথা, তাঁরা সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। এ জন্য আমরা কমিশনকে এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছি। পোস্টাল, অনলাইনসহ যেসব পদ্ধতি আছে, সেগুলো চালু করে প্রবাসীদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, আমরা নির্বাচন কমিশন, সরকার—সবকিছু অবজার্ভ (পর্যবেক্ষণ) করছি। সুতরাং এই জায়গায় আস্থা–অনাস্থার বিষয়টি নিয়ে আমরা আবার মন্তব্য করছি না। কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলব। যদি ব্যত্যয় ঘটে, সে জায়গায় কথা বলতে হবে। আমরা আশাবাদী, তারা ভবিষ্যতে জনআস্থাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: জি এম কাদের
আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা জেলা শাখার মতবিনিমিয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ওই সভায় জি এম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমি তার প্রতিবাদ করেছি। একইভাবে এখন বলছি, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’
জি এম কাদের বলেন, ‘জুলাই গণহত্যায় অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার ও আমাদের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। আইন উপদেষ্টা ও আইজিপি বলেছেন, অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তাহলে যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না কেন?’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইনের কথা হচ্ছে একজন নিরপরাধকে বাঁচাতে প্রয়োজনে দশজন দোষীকে ছেড়ে দাও। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? একজন দোষীকে শাস্তি দিতে দশজন নিরাপদ মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে। বাড়িঘর ও অফিসে আগুন দিয়ে, মামলা হামলা করে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বর্তমান সরকারের অপকর্মের বিরোধিতা করছি, ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলছি।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের মানুষের মুখে হাসি নেই। দেশের মানুষ অতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। এখন যারা যা খুশি করতে পারে, তারা তো নির্বাচন চাইবে না। নির্বাচন যত পিছিয়ে যাবে, ততই তাদের লাভ। জনগণের কথা তাদের বিবেচনায় নেই। নির্বাচন চাই না, এটা বলার আপনি কে? সবাইকে বলতে দিন, এটাই তো গণতন্ত্র। স্বৈরাচার হবেন? থাকতে পারবেন না। এ দেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্র মেনে নেয় না।’
জি এম কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার আইনের মারপ্যাঁচে আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এখন এই সরকারও আইনের মারপ্যাঁচে আমাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেশীয় রাজনীতিবিদ ও বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে একটি সফল সম্মেলনে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যাকে নিয়োগ দিয়েছি, তাকে বাদ দেওয়ার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষমতাও আছে। আওয়ামী লীগ সরকার যা করেছে, বর্তমান সরকারও তা–ই করছে, পরিবর্তন কী হলো?’
জি এম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার বলা হয়, একই কাজ যদি বর্তমান সরকারও করে, তাকে কী বলবেন? আমাদের দলীয় প্রতীক অন্যদের দেওয়া হবে, এমন ভয় দেখিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেল করেছিল আওয়ামী লীগ, এখন আবার সেই খেলা শুরু হয়েছে। সরকার আমাদের পিছে লেগে রয়েছে। সুবিধা তো দূরের কথা, আমরা আমদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে পারি না। জনগণের চোখে এখন আমরাই মজলুম।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ইকবাল হোসেন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল প্রমুখ।