যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভোগ’ সাময়িকীর সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন অ্যানা উইন্টোর
Published: 27th, June 2025 GMT
সাময়িকী কিংবদন্তিখ্যাত অ্যানা উইন্টোর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভোগ’ সাময়িকীর সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর দায়িত্ব পালনের পর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে এক কর্মী সভায় এ ঘোষণা দেন ফ্যাশন জগতের প্রভাবশালী এই ব্যক্তিত্ব।
৭৫ বছর বয়সী অ্যানা উইন্টোরকে আধুনিক ফ্যাশনের অন্যতম রূপকার এবং গ্ল্যামার দুনিয়ার দিকনির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর ছোঁয়ায় ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদ হয়ে উঠত সমসাময়িক ফ্যাশনের চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র। আর ভেতরের তারকাবহুল পাতাগুলোর ওপর ছিল তাঁর নিরঙ্কুশ প্রভাব।
ফ্যাশনের বাইবেলখ্যাত ‘ভোগ’ সাময়িকীর দৈনন্দিন সম্পাদনার দায়িত্বে উইন্টোরকে আর দেখা যাবে না। তবে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কন্দে নাস্ট তাঁর অবসরের ঘোষণা তাৎক্ষণিক খণ্ডন করে বলেছে, তিনি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন এবং ‘ভোগ’-এর ‘গ্লোবাল এডিটরিয়াল ডিরেক্টর’ হিসেবে থাকছেন।
নিউইয়র্কে কর্মীদের সঙ্গে ওই বৈঠকে উইন্টোর বলেন, ‘“ভোগ” যুক্তরাষ্ট্রে শিগগিরই নতুন সম্পাদকীয় প্রধান নিয়োগ দেবে।’
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত বক্তব্যে উইন্টোর বলেন, ‘এটা আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে আমি এখনই আমার অফিস ছেড়ে যাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের দিকে আমার পূর্ণ মনোযোগ থাকবে। আমাদের অসাধারণ সম্পাদনা দলগুলোর সঙ্গে বিশ্বজুড়ে আমি কাজ করব।’
ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত উইন্টোর ২০০৩ সালে প্রকাশিত সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘দ্য ডেভিল ওয়্যারস প্রাডা’ এবং ২০০৬ সালের একই নামের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান। এতে মেরিল স্ট্রিপ অভিনীত চরিত্র ‘মিরান্ডা প্রিস্টলি’ ছিলেন সাময়িকীর একজন জাঁদরেল সম্পাদক। এ চরিত্রের অনুপ্রেরণা ছিলেন উইন্টোর নিজেই।
২০১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার উইন্টোরকে ‘ডেম’ উপাধিতে ভূষিত করে। এরপর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অভিজাত ‘কম্পেনিয়ন অব অনার’ পদকে ভূষিত হন। ওই সময় লন্ডনে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণের সময় উইন্টোর তাঁর চিরচেনা রোদচশমা খুলে রেখেছিলেন। রাজাকে তিনি বলেছিলেন, কাজ ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই তাঁর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইন ট র
এছাড়াও পড়ুন:
এপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প
যৌন নিপীড়নকারী কুখ্যাত মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কী সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বানের পর মার্কিন বিচার বিভাগ ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
প্রয়াত এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতেই গতকাল শুক্রবার তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের প্রতি এ আহ্বান জানান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান জে পি মরগান চেজ এবং হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারসের বিরুদ্ধেও বিচার বিভাগ ও এফবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। ল্যারি সামারস ক্লিনটনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
সম্প্রতি যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এপস্টেইনের নতুন একগুচ্ছ ই-মেইল প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম এসেছে। এতে ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে।
এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই-মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রকাশিত ই-মেইলগুলো এপস্টেইন পাঠিয়েছিলেন তাঁর সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল এবং ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ লেখক মাইকেল ওলফকে। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ওইসব ই–মেইল লিখেছিলেন।
এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও জোরপূর্বক যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই–মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।
শিশুদের যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ও নারী পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার এপস্টেইন ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে কারাবন্দী অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। তাঁর প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েলের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অনেক ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে।
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোর ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।
শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ছুটি কাটাতে ফ্লোরিডা যাওয়ার সময় ট্রাম্প উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তাদের এটা অনেক আগেই ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। বহু বছর ধরে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে আমার খুবই খারাপ সম্পর্ক ছিল।’
নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টএ বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পকে বারবার এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
২০১৯ সালে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌনকর্মে নারী পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার বিচার প্রস্তুতি চলছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাগারে নিজের কক্ষ থেকে পরে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এমন একটি যৌন চক্র চালাতেন, যেখানে কিশোরী মেয়েদের যৌনকর্মের জন্য সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হতো।
আরও পড়ুনজেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম১২ নভেম্বর ২০২৫ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও এফবিআইকে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল ক্লিনটন, ল্যারি সামারস, রেইড হফম্যান, জে পি মরগ্যান চেজ এবং আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ও জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করবেন।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।’
আরও পড়ুনএকই নারীর সঙ্গে ট্রাম্প ও যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের সম্পর্ক ছিল১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫