কোন কোন অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, সে ব্যাপারে আইনি ব্যাখ্যা থাকা উচিত: এনসিপি
Published: 3rd, July 2025 GMT
অপরাধের ধরনের ভিত্তিতে কোন কোন অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য হবে, সে ব্যাপারে আইনি ব্যাখ্যা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এনসিপি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের প্রক্রিয়া ও বিচারব্যবস্থা সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা যেন আর নিরঙ্কুশ না থাকে, বরং একটি বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে তা হয়—এ প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি।’
অতীতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার অপব্যবহার হয়েছে অভিযোগ করে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরও ক্ষমা করা হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এতে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ন হয়েছে, বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দেশের বিচারব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এনসিপির এই নেতা। আখতার হোসেন বলেন, ২০ কোটি মানুষের দেশে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে কয়েক লাখ মামলা বিচারাধীন। মাত্র ১০০ জন বিচারপতি দিয়ে এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি সম্ভব নয়।
আখতার হোসেন বলেন, সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর সময় ছয়টি জায়গায় হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনের উদ্যোগে বাধা এসেছিল। তখন একে ‘ইউনিটারি স্টেট’ কাঠামোর ব্যত্যয় বলা হয়েছিল। কিন্তু এবার এমনভাবে আইন করতে হবে যাতে, সেটি সাংবিধানিক বাধা এড়িয়ে বাস্তবায়ন করা যায়।
এনসিপির সদস্যসচিব আরও বলেন, ‘আমরা যে গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরে এই সংস্কার উদ্যোগে এসেছি, সেখানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা আমাদের ধারণ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ও কমিশনের একমত হওয়া সিদ্ধান্তগুলো যেন বাস্তবায়ন হয়, সেটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্র সংস্কার কি সরকারের কাছে শুধুই ফাঁকা বুলি, প্রশ্ন টিআইবির
‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন করায় গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জবাবদিহির বাইরে রাখার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার কেবলই ফাঁকা বুলি কি না, এ প্রশ্নও তুলেছে টিআইবি।
আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত দুদকের উত্তরণের লক্ষ্যে ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ করা হয়েছিল। এই সুপারিশ বাদ দেওয়া শুধু হতাশাজনক নয়, সরকারের অভ্যন্তরে প্রায় সব ক্ষেত্রে সংস্কারবিরোধী মহলের ষড়যন্ত্রের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের অভীষ্টের জিম্মিদশারও পরিচায়ক।
জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতির পরও চূড়ান্ত অধ্যাদেশে এই সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের অনাগ্রহের ইঙ্গিত বলে মনে করে টিআইবি।
দুদককে প্রকৃত অর্থে একটি জবাবদিহিমূলক, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার এই কৌশলগত সুপারিশটি অনুধাবনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বলে উল্লেখ করে টিআইবি আরও বলেছে, রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের জন্য এটি স্ববিরোধী ও সংস্কারপরিপন্থী নজির।
ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও ১১টি সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা দুদককে জবাবদিহির বাইরে রাখার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসহ দেশবাসীকে কি এই বার্তা দিতে চাইছেন যে রাষ্ট্র সংস্কার কেবলই ফাঁকা বুলি—এ প্রশ্নও বিবৃতিতে তুলেছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত দুই দশকের অভিজ্ঞতা, অংশীজনদের মতামত, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় দুদক যাতে ক্ষমতাসীনদের হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে চলমান না থাকে, সে লক্ষ্যে দুদক সংস্কার কমিশন ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের সুপারিশ করেছিল। জন্মলগ্ন থেকে দুদক যেভাবে জন–আস্থার সংকটে ভুগছে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের ক্রীড়নক হিসেবে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবটি করা হয়েছিল।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে অন্তত সাতজন উপদেষ্টা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। অথচ তাঁরা জানেন যে এই প্রস্তাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। জুলাই সনদ লঙ্ঘনের এরূপ উদাহরণ সৃষ্টি করার আগে সরকার কেন ভাবছে না যে এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে তারা নিজেরাই জুলাই সনদ লঙ্ঘনে উৎসাহিত করছে? তাহলে কেন এত রক্তক্ষয়ী আত্মত্যাগ? দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের উপায় রুদ্ধ করে কীসের রাষ্ট্র সংস্কার?’
অধ্যাদেশটির যে খসড়াটি টিআইবির দেখার সুযোগ হয়েছিল, তা অনেকাংশে বিদ্যমান আইনের তুলনায় উন্নত মানের হওয়ায় টিআইবি সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যানুযায়ী, চূড়ান্ত অধ্যাদেশে উল্লিখিত বিষয়টির পাশাপাশি আরও কিছু ঐকমত্য-অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দেওয়া হয়েছে, যা সরকারের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতি-সহায়ক ও সংস্কার-পরিপন্থী অবস্থান ছাড়া আর কিছু হতে পারে না বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি।