প্রত্যাশিতভাবে ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হলো হইচইয়ের মধ্য দিয়ে। পণ্ডও হয়ে গেল লোকসভার প্রথম দিনের অধিবেশন। এমনই যে হতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত গতকাল রোববারই মিলেছিল সর্বদলীয় বৈঠকে।

রোববারের সেই বৈঠকেই বিরোধী নেতারা জানিয়েছিলেন, বিহারে ভোটচুরি, দেশজুড়ে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘যথেচ্ছাচার’, দিল্লির বায়ুদূষণ, দিল্লির সাম্প্রতিক বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাঁরা আলোচনার দাবি জানাবেন।

ওই বৈঠকের পরই সরকারপক্ষ বুঝিয়ে দিয়েছিল, সংবিধান স্বীকৃত সংস্থার (ইসি) অধিকার–সংবলিত বিষয় নিয়ে আলোচনায় তারা রাজি নয়। সরকার চায়, সংসদের নিয়ম মেনে বিরোধীরা গঠনমূলক আলোচনা করুক। ফলে যা হওয়ার, সেটাই হয়েছে। লোকসভার অধিবেশন শুরু হলেও স্বাভাবিক কাজ হয়নি। দফায় দফায় সভা বসলেও বিরোধীপক্ষের স্লোগান ও সরকারপক্ষের অনমনীয় মনোভাবের দরুণ অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।

রাজ্যসভার চিত্র অবশ্য ছিল ভিন্ন। উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। তিনিই সভার পরিচালক। জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেওয়ার পর ওই পদে নির্বাচিত হয়েছেন সিপি রাধাকৃষ্ণন। আজ সোমবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সব দলের নেতারা রাধাকৃষ্ণনকে নতুন দায়িত্বের জন্য অভিনন্দন জানান। যদিও সেখানে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে উতোর–চাপানের অন্ত ছিল না। বিরোধীদের লক্ষ্য ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

প্রথা মেনে সংসদীয় অধিবেশন শুরুর ঠিক আগে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী মোদি বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করেন। বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, সংসদ নাটক (ড্রামা) করার জায়গা নয়। সংসদে ডেলিভারি করতে হয়। যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হয়। পরিষেবা দিতে হয়। বিরোধীরা নাটকবাজি না করে সেই চেষ্টাই বরং করুন।

সংসদে আলোচনার ওপর জোর দিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাটক করার অনেক জায়গা আছে। স্লোগান দেওয়ারও জায়গা আছে অনেক। স্লোগানের জন্য পুরো দেশ পড়ে আছে। সেখানে যত খুশি স্লোগান দেওয়া যায়, কিন্তু সংসদে নয়।

বিহার নির্বাচনে বিরোধীদের পরাজয়ের প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, বিহারের ভোট গণতন্ত্রের উজ্জ্বল উদাহরণ। কিছু বিরোধী দল এখনো তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। তাদের ধারাবাহিক হার সংসদে আলোচনার বিষয় হতে পারে না। ১০ বছর ধরে যারা হেরে চলেছে, তাদের দলের পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রয়োজনে তিনি কিছু টিপস দিতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, বিরোধীদের কৌশল বদলানো উচিত। কী করা উচিত, বিরোধীরা চাইলে সে বিষয়ে কিছু টোটকা তিনি বাতলাতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীরে ওই কটাক্ষ ফিরিয়ে দিতে বিরোধীরা দেরি করেনি। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র সংসদ ভবন চত্বরে এই প্রসঙ্গে বলেন, এসআইআর বা দূষণ নিয়ে আলোচনার দাবি তোলা নাটকবাজি নয়। জনস্বার্থ নিয়ে আলোচনার দাবি জননেতাদেরই তুলতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যখন জনস্বার্থ নিয়ে কথা বলতে দেওয়া হয় না, সেটাই তখন নাটকবাজি হয়ে ওঠে।

রাজ্যসভায় নতুন চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানিয়ে বিরোধী নেতা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখানে উপস্থিত আছেন। তিনি সভার বাইরে বিরোধীদের উদ্দেশে অনেক কিছুই বলেছেন। তার জবাব তাঁরা ঠিক সময়েই দেবেন।

সংসদের এই অধিবেশন চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কর্মদিবস মোট ১৫ দিন। বিজেপি আমলে ক্রমেই সংসদের কাজের দিন কমিয়ে আনা হচ্ছে। সে জন্যও বিরোধী নেতারা সরকারের সমালোচনা করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের লোকসভায় হট্টগোল, স্থগিত শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন

প্রত্যাশিতভাবে ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হলো হইচইয়ের মধ্য দিয়ে। পণ্ডও হয়ে গেল লোকসভার প্রথম দিনের অধিবেশন। এমনই যে হতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত গতকাল রোববারই মিলেছিল সর্বদলীয় বৈঠকে।

রোববারের সেই বৈঠকেই বিরোধী নেতারা জানিয়েছিলেন, বিহারে ভোটচুরি, দেশজুড়ে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘যথেচ্ছাচার’, দিল্লির বায়ুদূষণ, দিল্লির সাম্প্রতিক বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাঁরা আলোচনার দাবি জানাবেন।

ওই বৈঠকের পরই সরকারপক্ষ বুঝিয়ে দিয়েছিল, সংবিধান স্বীকৃত সংস্থার (ইসি) অধিকার–সংবলিত বিষয় নিয়ে আলোচনায় তারা রাজি নয়। সরকার চায়, সংসদের নিয়ম মেনে বিরোধীরা গঠনমূলক আলোচনা করুক। ফলে যা হওয়ার, সেটাই হয়েছে। লোকসভার অধিবেশন শুরু হলেও স্বাভাবিক কাজ হয়নি। দফায় দফায় সভা বসলেও বিরোধীপক্ষের স্লোগান ও সরকারপক্ষের অনমনীয় মনোভাবের দরুণ অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।

রাজ্যসভার চিত্র অবশ্য ছিল ভিন্ন। উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। তিনিই সভার পরিচালক। জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেওয়ার পর ওই পদে নির্বাচিত হয়েছেন সিপি রাধাকৃষ্ণন। আজ সোমবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সব দলের নেতারা রাধাকৃষ্ণনকে নতুন দায়িত্বের জন্য অভিনন্দন জানান। যদিও সেখানে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে উতোর–চাপানের অন্ত ছিল না। বিরোধীদের লক্ষ্য ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

প্রথা মেনে সংসদীয় অধিবেশন শুরুর ঠিক আগে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী মোদি বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করেন। বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, সংসদ নাটক (ড্রামা) করার জায়গা নয়। সংসদে ডেলিভারি করতে হয়। যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হয়। পরিষেবা দিতে হয়। বিরোধীরা নাটকবাজি না করে সেই চেষ্টাই বরং করুন।

সংসদে আলোচনার ওপর জোর দিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাটক করার অনেক জায়গা আছে। স্লোগান দেওয়ারও জায়গা আছে অনেক। স্লোগানের জন্য পুরো দেশ পড়ে আছে। সেখানে যত খুশি স্লোগান দেওয়া যায়, কিন্তু সংসদে নয়।

বিহার নির্বাচনে বিরোধীদের পরাজয়ের প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, বিহারের ভোট গণতন্ত্রের উজ্জ্বল উদাহরণ। কিছু বিরোধী দল এখনো তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। তাদের ধারাবাহিক হার সংসদে আলোচনার বিষয় হতে পারে না। ১০ বছর ধরে যারা হেরে চলেছে, তাদের দলের পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রয়োজনে তিনি কিছু টিপস দিতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, বিরোধীদের কৌশল বদলানো উচিত। কী করা উচিত, বিরোধীরা চাইলে সে বিষয়ে কিছু টোটকা তিনি বাতলাতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীরে ওই কটাক্ষ ফিরিয়ে দিতে বিরোধীরা দেরি করেনি। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র সংসদ ভবন চত্বরে এই প্রসঙ্গে বলেন, এসআইআর বা দূষণ নিয়ে আলোচনার দাবি তোলা নাটকবাজি নয়। জনস্বার্থ নিয়ে আলোচনার দাবি জননেতাদেরই তুলতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যখন জনস্বার্থ নিয়ে কথা বলতে দেওয়া হয় না, সেটাই তখন নাটকবাজি হয়ে ওঠে।

রাজ্যসভায় নতুন চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানিয়ে বিরোধী নেতা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখানে উপস্থিত আছেন। তিনি সভার বাইরে বিরোধীদের উদ্দেশে অনেক কিছুই বলেছেন। তার জবাব তাঁরা ঠিক সময়েই দেবেন।

সংসদের এই অধিবেশন চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কর্মদিবস মোট ১৫ দিন। বিজেপি আমলে ক্রমেই সংসদের কাজের দিন কমিয়ে আনা হচ্ছে। সে জন্যও বিরোধী নেতারা সরকারের সমালোচনা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ