দুই বছর ধরে ইসরায়েল বর্বর সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত অক্টোবরে হওয়া গাজার যুদ্ধবিরতি নিঃসন্দেহে স্বস্তির খবর। কিন্তু যুদ্ধবিরতি টিকে থাকলেও স্থায়ী ও ন্যায্য শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমস্যার মূল কারণগুলো সমাধান করতে হবে।

এ উদ্যোগকে ‘নতুন শুরু’ বলা হলে সেটি ভুল ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। মনে হতে পারে সমাধান হয়ে গেছে। যদিও নতুন নিরাপত্তা পরিষদের ২৮০৩ নম্বর প্রস্তাব ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে বৈধতা দিয়েছে, তবু এতে ন্যায়সংগত ফিলিস্তিনি দাবির যথেষ্ট উল্লেখ নেই।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে স্বাভাবিক করে তোলা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ইসরায়েলি আউটপোস্ট বা ছোট ছোট চৌকি ক্রমেই বাড়ছে এবং সেগুলো স্থায়ী বসতিতে পরিণত হচ্ছে। একইভাবে গাজায় ‘হলুদ রেখা’ চালু হওয়ায় অঞ্চলটি স্থায়ীভাবে ভাগ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ইসরায়েল পুরো এনক্লেভের অর্ধেকের বেশি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগ পাবে। এসব দেখে ইসরায়েল সত্যিই এসব এলাকা থেকে সরে যেতে চাইবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা তোলাটা নাটক ছাড়া কিছু নয়২৪ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্পের পরিকল্পনা একটি নতুন শান্তির প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। কিন্তু যে সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে, তার মূল সমাধানগুলো অনেক দিন ধরেই পরিষ্কার। ইসরায়েলের দখলদারি এবং অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। মর্যাদার সঙ্গে অবশ্যই ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে।

ইসরায়েলের অস্তিত্বগত উদ্বেগও একেবারে অযৌক্তিক নয়। কারণ, দেশটি লেভান্ত অঞ্চলের মাঝখানে, অনেক বৈরী দেশের ঘেরাও অবস্থায় আছে। কিন্তু ইসরায়েলের সেটি বুঝতে হবে, যা বহু আগেই বিশ্বের অনেক ইহুদি বুদ্ধিজীবী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বুঝেছেন। তা হলো ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে এবং আশপাশের অন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্ক দরকার।

ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে এর প্রভাব শুধু ওই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইসলামি বিশ্বের অনেক উগ্রপন্থা ফিলিস্তিন ইস্যুকে কাজে লাগায়। সংঘাত মিটে গেলে এসব দাবি ও উসকানি দুর্বল হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভেতরেও সংস্কার দরকার। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতাদের সামনে আনা প্রয়োজন। কেবল এ ধরনের নেতৃত্বই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

আমি আমার ইসরায়েলি ও মার্কিন সমকক্ষদেরও বলেছিলাম, গাজায় নতুন নির্বাচিত নেতৃত্বকে সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু তাদের সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। আজ আবার একই ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি এখনো মনে করি, গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিনি নেতৃত্বই একমাত্র পথ।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এটি আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনের নেতৃত্বকে বিশ্বাসযোগ্য, বৈধ ও সম্মানজনক হতে হবে।

ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে ভয়াবহ ধ্বংস ও কষ্ট নেমে এসেছে, সেই পরিস্থিতিতে নতুন রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে। গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব গঠনের শুরুতে তাদের ধৈর্য ও সমর্থন দেখাতে হবে। ইসরায়েলেরও উচিত এ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা, যদি তারা সত্যিই হামাসের প্রভাব কমাতে চায় এবং অঞ্চলে স্থায়ী স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

২০০৬ সালে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি প্রথম ব্যক্তি, নির্বাচনে বিজয়ের পর আঙ্কারায় হামাস নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাৎ করি। আমি তাঁদের শক্তভাবে পরামর্শ দিই—তাঁদের নতুন নীতি নিতে হবে এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি রাজনৈতিক শক্তি যেমন আচরণ করে, তেমন আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ কূটনীতি ব্যবহার করতে হবে, সংগ্রামে আরও নরম কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধিত্ব অর্জন করতে হবে। তাঁরা শুরুতে এমন ইচ্ছার কিছু লক্ষণও দেখিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কি টিকবে২৫ অক্টোবর ২০২৫

আমি আমার ইসরায়েলি ও মার্কিন সমকক্ষদেরও বলেছিলাম, গাজায় নতুন নির্বাচিত নেতৃত্বকে সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু তাদের সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। আজ আবার একই ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি এখনো মনে করি, গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিনি নেতৃত্বই একমাত্র পথ। এমন নেতৃত্ব, যারা সুশাসন নিশ্চিত করবে, দুর্নীতি দূর করবে এবং সহিংসতা বর্জন করবে—তারাই জনগণের পূর্ণ সমর্থন পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ প্রতিনিধিত্ব অর্জন করতে পারবে।

আমি মধ্যপ্রাচ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকেই কারাবন্দী ফিলিস্তিনি রাজনীতিক মারওয়ান বারঘুতিকে সম্ভাবনাময় নেতৃত্বের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইসরায়েলের এটা প্রমাণ করতে হবে, তারা সত্যিই শান্তি চায়। এ জন্য তাঁকে ও অন্য রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।

আবদুল্লাহ গুল তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র জন ত ক নত ন ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানের ভিডিওটি সন্দ্বীপের

মঞ্চে বসে ‘পাকিস্তান পাকিস্তান, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান ধরছেন এক বক্তা। সমবেত জনতা সেই স্লোগানে কণ্ঠ মেলাচ্ছে, এমন একটি ভিডিও আজ সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের একটি অনুষ্ঠানে ধারণ করা বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত কোরআন তিলাওয়াত সম্মেলনের এক বক্তা এমন স্লোগান দেন। উপস্থিত দর্শকদের একজন সেটির ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন।

ভাইরাল হওয়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, মঞ্চে বসে এক বক্তা দুই হাত ওপরে তুলে স্লোগান ধরেছেন, ‘পাকিস্তান পাকিস্তান’, এরপর সামনে উপস্থিত দর্শকেরা সমস্বরে বলছেন, ‘জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’। বক্তা আবার বলছেন, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। সমবেত ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলছেন, ‘জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।’ এরপর বক্তা স্লোগান ধরেন ‘নারায়ে তাকবির’।

কোরআন তিলাওয়াত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাইটভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা নুরনবি রুমি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতকাল মাইটভাঙ্গার সাউথ সন্দ্বীপ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে এই স্লোগান দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। সম্মেলনটি ছিল কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতার। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নেন। পাকিস্তান থেকে আগত এক ইসলামি বক্তা মঞ্চে আসার পর সঞ্চালক এমন স্লোগান ধরেন।

সম্মেলনে উপস্থিত আরও এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেছেন, মূলত ইরান, মিসর, ফিলিপাইন ও পাকিস্তানের প্রতিযোগীরা সম্মেলনে অংশ নেন। যখন যে দেশের প্রতিযোগী মঞ্চে এসেছে, সেই দেশের নামে সঞ্চালক স্লোগান ধরেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একই অনুষ্ঠানের আরেকটি ভিডিওতে এর সত্যতা মেলে। সেখানে দেখা যায়, মিসরের বক্তা মঞ্চে ওঠার পর ‘মিসর জিন্দাবাদ’ স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।

ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে জানতে আয়োজক প্রতিষ্ঠান সাওতুল কোরআন ইনস্টিটিউটের পরিচালক হাফেজ তাওহিদের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সন্দ্বীপের মুক্তিযোদ্ধারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোলায়মান বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘“পাকিস্তান জিন্দাবাদ” স্লোগান দেওয়া ধৃষ্টতা। এর নিন্দা জানাই। কেবল নিন্দা নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি জানিয়ে দিতে চাই, এমন স্লোগান আমরা সহ্য করব না।’

জানতে চাইলে সন্দ্বীপের নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখিনি, কেউ আমার নজরেও আনেনি। যদি এমনটি হয়, তা দুঃখজনক। আমি বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করব।’

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এমন বিষয় আমার জানা নেই। কেউ যদি এমন স্লোগান দিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা খতিয়ে দেখব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ